৫ লাল কার্ড, ৮ হলুদ কার্ড! নায়ক রেফারি, নাটকীয় ম্যাচে আইএসএলে প্রথম হার মোহনবাগানের

ম্যাচের ১৩ মিনিটেই ১০ জনের হয়ে যায় মুম্বই সিটি এফসি। মনবীর সিংহকে ফাউল করায় লাল কার্ড দেখেন আকাশ মিশ্র। তবু মুম্বইয়ে মোহনবাগানের আকাশে রোদের দেখা মিলল না। দ্বিতীয়ার্ধে ৪ মিনিটের ব্যবধানে লাল কার্ড দেখলেন মোহনবাগানের আশিস এবং লিস্টন। আবার ৮৭ মিনিটে বক্সের মধ্যে মোহনবাগান ডিফেন্ডারেরা স্টুয়ার্টকে ফাউল করলে পেন্টাল্টি পেতে পারত মুম্বই। কিন্তু রেফারি রাহুল গুপ্ত মনে করেন ইচ্ছা করে পড়ে গিয়েছেন স্টুয়ার্ট। সময় নষ্ট না করে স্টুয়ার্টকে দ্বিতীয় হলদ কার্ড এবং লাল কার্ড দেখান। শেষ পর্যন্ত নাটকীয় ম্যাচে ৯ জনের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৯ জনের মোহনবাগান হেরে গেল ১-২ গোলের ব্যবধানে। এ বারের আইএসএলে এই প্রথম হারল জুয়ান ফেরান্দোর দল। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকল মোহনবাগান।

এই ম্যাচের রেফারিং নিয়ে একাধিক প্রশ্ন থাকল। লাল কার্ড দেখানোর ক্ষেত্রে রাহুলের তৎপরতা ফুটবলের ভাল বিজ্ঞাপন নয়। ৫টি লাল কার্ডের পাশাপাশি, ৮টি হলুদ কার্ডও দেখিয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে দু’দলের ফুটবলাররা ঝামেলায় জড়ান। মাঠে নেমে পড়েন সাপোর্ট স্টাফরাও। আবার লাল কার্ড বের করেন রাহুল। এ বার মুম্বইয়ের বিক্রম সিংহকে লাল কার্ড দেখান তিনি। ম্যাচ রাশ হাতে রাখতে তাঁর ঘন ঘন কার্ড ব্যবহারে ক্ষুব্ধ দু’দলই। রাহুলই যেন ম্যাচের ‘নায়ক’! ম্যাচের পর বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে দুই শিবিরকেই।

বুধবারের অ্যাওয়ে ম্যাচে মোহনবাগানের পরিকল্পনা ছিল প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল। ম্যাচের প্রথম আক্রমণ অবশ্য মুম্বইয়ের। যদিও বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ভ্যান নিফের শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। প্রথম ১০ মিনিট মুম্বই একের পর এক আক্রমণ তুলে এনেছে সবুজ-মেরুন বক্সে। তবু গোল মুখ খুলতে পারেনি তারা। মোহনবাগানের প্রথম আক্রমণ ১০ মিনিটের মাথায়। কর্ণারও আদায় করে নেয় মোহনবাগান। তবে কাজের কাজ হয়নি।

আকাশ লাল কার্ড দেখার পর খেলার কৌশল পরিবর্তন করে মুম্বই। ১৮ মিনিটে ছাংতেকে তুলে নিয়ে ভালপুইয়াকে নামান মুম্বই কোচ পিটার ক্রাতকি। কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে যায় তারা। যদিও আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে খেলা। ২৫ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসোর কাছ থেকে বল পেয়ে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার জেসন কামিন্স। ১০ জনের মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে এগিয়ে গিয়েও সেই সুবিধা ধরে রাখতে পারেনি সবুজ-মেরুন বিগ্রেড। ৪৪ মিনিটে মুম্বইয়ের হয়ে সমতা ফেরান স্টুয়ার্ট। বিপিনের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন তিনি। এর আগে ৩০ মিনিটের মাথায় শুভাশিসের করা গোল বাতিল হয় অফ সাইডের জন্য। ৩৭ মিনিটে নিফের আরও একটি শক্তিশালী দূরপাল্লার শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় ১-১ গোলে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য ঝাঁপায় দু’দল। খেলায় কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। ৫৪ মিনিটের মাথায় ডায়াজ়কে বিপজ্জনক ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন মোহনবাগানের আশিস। ৪ মিনিট পরেই সবুজ-মেরুনের লিস্টন নিজের দোষে লাল কার্ড দেখলেন। খারাপ ভাবে ফাউল করায় শুভাশিসকে সতর্ক করেন রেফারি। তা দেখে রেফারির সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন লিস্টন। তাঁকেও লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি। ১০ জনের মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ৯ জন হয়ে যায় মোহনবাগান। পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হন মোহন কোচ ফেরান্দো। ৬০ মিনিটের মাথায় কামিন্স এবং হুগোকে তুলে নিয়ে তিনি নামান পেত্রাতোস এবং কিয়ানকে। ৬৬ মিনিটে আবার পরিবর্তন করে সবুজ-মেরুন। টাংরিকে তুলে সাদিকুকে নামান ফেরান্দো।

কৌশল বদলেও লাভ হয়নি মোহনবাগানের ৬৬ মিনিটের মাথায় মুম্বইয়ের হয়ে দ্বিতীয় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন বিপিন। কর্ণার থেকে বল ঠেলে বিপিন উঠে যান বক্সের মাথায়। স্টুয়ার্টের কাছ থেকে বল ফেরত পেয়ে জোরালো শটে গোল করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.