বিয়ের রাতেই বাবা, ঠাকুমা, ভাইকে হারালেন আয়ুষী, লেকটাউনের দুর্ঘটনার ফুটেজ দেখতে চায় পরিবার

মেয়ের বিয়ে দিয়ে রাজারহাট থেকে ফিরছিলেন মানিকতলায়। পথে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় থমকে গিয়েছে যাত্রা। লেকটাউনের রাস্তায় একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে রবিবার। গভীর রাতে তাঁদের গাড়িতে সজোরে ধাক্কা মারে ৪৪ নম্বর রুটের একটি বাস। এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট মৃতদের আত্মীয়েরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে ছিলেন শিবশঙ্কর রথি (৬৫), তাঁর মা কমলা রথি (৮০) এবং তাঁর পুত্র শ্রীবৎস রথি (২৪)। রবিবার শিবশঙ্করের কন্যা আয়ুষী রথি গুপ্তার বিয়ে ছিল। রাজারহাটে সেই বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফিরছিলেন শিবশঙ্করেরা। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। বড়বাজারে বিদ্যুতিন যন্ত্রপাতির ব্যবসা আছে তাঁর। শ্রীবৎস এমবিএ-র ছাত্র। গাড়িতে তাঁরা ছাড়াও ছিলেন চালক অঙ্কিত কুমার মাহাতো। তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় আরজি কর হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানিয়েছে, লেকটাউনের ঘড়ির মোড়ের কাছে রবিবার রাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল শিবশঙ্করদের গাড়ি। সেই সময় বাগুইআটি থেকে উল্টোডাঙার দিকে যাচ্ছিল ৪৪ নম্বর রুটের একটি ফাঁকা বাস। বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। আচমকা পিছন থেকে বাসটি শিবশঙ্করদের গাড়িতে ধাক্কা মারে।

লেকটাউন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা চলাকালীন তিন জনেরই মৃত্যু হয়। শিবশঙ্করদের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, এই বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তাঁদের সন্দেহ আছে। কারণ শিবশঙ্করদের গাড়ি রাস্তায় আদৌ দাঁড়িয়ে ছিল না। চলন্ত গাড়িতেই বাস ধাক্কা মেরেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চেয়েছেন মৃতদের আত্মীয়েরা। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের কাছে তথ্য গোপনের চেষ্টা করছে। কাউকে পুলিশ আড়াল করতে চাইছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ফুটেজ প্রকাশ্যে এলেই আসল সত্য জানা যাবে।

মৃতের পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘একটা পুরো পরিবার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাড়িটি দাঁড়িয়ে ছিল না। চলন্ত গাড়িতেই পিছন থেকে বাস ধাক্কা মেরেছে। থানা থেকে সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের বলা হয়েছে, অভিযোগপত্রে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার কথা লিখতে। আমরা তা লিখতে রাজি হইনি। যা সত্যি, আমরা তাই লিখব বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজ পেলেই বোঝা যাবে, কী হয়েছিল।’’

এ দিকে, বাসটি এত রাতে গতির ঝড় তুলে কোথায় যাচ্ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের সন্দেহ, বাসটি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশের চোখ এড়াতেই দ্রুত বাস ছোটাচ্ছিলেন চালক। তবে বিস্তারিত তথ্য তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই জানা যাবে, দাবি পুলিশের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.