তিনিই সব! শুধু নীলাচলের জগদীশ্বর নন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও আবর্তিত হয় জগন্নাথ (Jagannath) মহিমায়। পুরীর শ্রীক্ষেত্র ছাড়িয়ে প্রভু জগন্নাথ-কথকতা বারবার ব্যাপ্ত হয় দুনিয়াজুড়ে। কথায় বলে, জগন্নাথ দর্শনে মুক্তি ঘটে চিরন্তন! আর সেই জগন্নাথ সেবার একাধিক উপাচারেই ছড়িয়ে আছে বহু নিদর্শন। তিন রথের চাকা থেকে বাহনের সাজ, সবক্ষেত্রেই প্রকাশিত হয় একের পর এক কাহিনি।
রথযাত্রার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্তরালে, এমনই এক সত্যি অথবা গল্পগাথায় ভর করে উঠে আসে জগন্নাথের মাসির বাড়ির কথা। গুন্ডিচা মন্দির (Gundicha Temple) অভিমুখে যাত্রার আবহেই শোনা যায়, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মাসির বাড়ি ঘুরতে যাওয়ার সেই গল্প। কিন্তু কেন রথযাত্রা (Rath Yatra) থেকে উলটোরথ পর্যন্ত মাসির বাড়িতেই থাকেন জগন্নাথ?
পুরাণমতে বলা হয়, জগন্নাথের মাসি হলেন গুন্ডিচা দেবী। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী তিনি। আদতে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। কলিঙ্গের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন বিষ্ণুর পরমভক্ত। তিনিই গড়ে তুলেছিলেন পুরীর জগন্নাথধাম (Puri Jagannath Temple)৷ ওই মন্দিরে বিগ্রহ স্থাপন করার জন্য নীলমাধবের খোঁজ শুরু করেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। অবশেষে মেলে নীলমাধবের খোঁজ। রাজার অনুচর এক ব্রাহ্মণ শবররাজ বিশ্বাবসুর ঘরে পাওয়া যায় নীলমাধবকে৷ তিনি দৈববাণী দেন আগে। বলেন, সমুদ্রের জলে ভেসে আসবে যে কাঠ, তা থেকেই তৈরি হবে মন্দিরের বিগ্রহ।
কিন্তু সমুদ্রের জলে কাঠ পাওয়া গেলেও সেখানেই শুরু হয় সমস্যা। শক্ত সেই কাঠে কিছুতেই বিগ্রহ খোদাই করা যাচ্ছিল না। তাহলে উপায়? এই অবস্থায় সহায় হন স্বয়ং জগন্নাথ। শিল্পীর রূপ ধরে হাজির হন রাজপ্রাসাদের দরজায়। তবে শর্ত দেন জগন্নাথ। তিনি জানিয়ে দেন, ২১ দিনের আগে কেউ যেন তাঁর কাজ না দেখেন! ভালোই চলছিল সব। হঠাৎই একদিন বন্ধ ঘর থেকে বিগ্রহ তৈরির কোনও শব্দ না পেয়ে ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী গুন্ডিচা খুলে ফেলেন দরজা। তিনি দেখেন, বিগ্রহ অর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে! বৃদ্ধ কারিগরও উধাও। এই ঘটনায় শোকে বিহ্বল হন রাজা-রানি দু’জনেই। অবশেষে দেখা দেন ভগবান! তিনি জানান, এই অর্ধ-রূপেই প্রতিষ্ঠিত হতে চান প্রভু। আর স্বয়ং ঈশ্বরের এমন ইচ্ছার কথা শুনে, রানি গুন্ডিচা জগন্নাথকে সন্তানরূপে গ্রহণ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। দেবতা জগন্নাথকে তাঁর বাড়ি যাওয়ার জন্য আবদারও করে বসেন রানি গুন্ডিচা। যে আবদারে সম্মতিও দেন জগন্নাথ। এরপর থেকেই রথের সময় গুন্ডিচা মাসির বাড়িতে হাজির হন তিন ভাইবোন।