মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কলকাতা

কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কলকাতায় অবস্থিত একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ১৮৩৫ সালে মেডিকেল কলেজ, বেঙ্গল নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি এশিয়ার দ্বিতীয় ইউরোপীয় মেডিসিন কলেজ। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল জাতি ও বর্ণ নির্বিশেষে দেশীয় যুবকদের আধুনিক পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী করে তোলা। ১৮৩৫ সালের ২৮ জানুয়ারি এই মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই ওই বছর ২ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই কলেজ থেকে বর্তমানে সাড়ে পাঁচ বছরের শিক্ষাক্রমের শেষে ব্যাচেলরস অফ মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (এমবিবিএস) ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়াও এমএস/এমডি বা পোস্ট ডক্টোরাল এমসিএইচ/ডিএম ডিগ্রিও দেওয়া হয়। ডাক্তারি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এখানে নার্সিং ও বিভিন্ন প্যারামেডিক্যাল শিক্ষাক্রমও চালু রয়েছে। কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শহরের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল।

মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়ে গিয়েছে ১৮৩৫ সালে। ক্লাসও শুরু হয়েছে সে বছর ১ জুন থেকে। ডা. মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামলি ছিলেন কলেজের প্রথম সুপারিনটেন্ডেন্ট — তখনও সেটিই শীর্ষপদ। ডা. ব্রামলি ও ডা. গুডিভ, এই দুজন সাহেব শিক্ষক ছাড়া আরও দুজন এদেশীয় শিক্ষক ছিলেন, মধুসূদন গুপ্ত ও নবকৃষ্ণ গুপ্ত। দুজনেই পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যায় শিক্ষিত, মধুসূদন গুপ্ত ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন ‘মেডিক্যাল কলেজে শবব্যবচ্ছেদকারী প্রথম ভারতীয়’ হিসেবে। প্রাথমিক ভাবে একটা পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। একশো জন প্রার্থীর অধিকাংশই ছিলেন হেয়ার স্কুল, হিন্দু কলেজ স্কচ অ্যাসেম্বলি স্কুল (এখন স্কটিশ চার্চ স্কুল) থেকে। মোট ৪৯ জনকে নেওয়া হয়েছিল ‘ফাউন্ডেশন ছাত্র’ হিসেবে।

হাসপাতাল স্থান নির্ণায়ক অনেকগুলো প্রস্তাব এর মধ্যে ডা. ডব্লু গ্রাহামের প্রস্তাব ছিল, মেডিকেল কলেজের আশেপাশেই কোথাও হাসপাতাল তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাকে সমর্থন করলেন মেডিক্যাল কলেজের সচিব ডেভিড হেয়ার। ফলে কলেজ সংলগ্ন জমিতেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। জমি দান করলেন মতিশাল শীল। ১৮৪৭ সালে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করা হল। পরের বছর, ১৮৪৮ সালে লর্ড ডালহৌসি হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন। তবে ‘ফিভার’ নামটা পেডিমেন্টের নিচে স্থান পেল না। তাতে লেখা হল ‘মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’। রুগি ভর্তি শুরু হল ১৮৫২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী :
• কাদম্বিনী গাঙ্গুলী (১৮৬১ – ১৯২৩) ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ২ জন মহিলা স্নাতকের একজন এবং ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক।
• স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী (১৯ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ – ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৬) ব্রিটিশ ভারতের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিক ছিলেন। তিনি কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার করেছিলেন ।
• ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় (১ জুলাই, ১৮৮২ – ১ জুলাই, ১৯৬২) ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী।
• নারায়ণ রায় (১৯০০ – ১ নভেম্বর, ১৯৭৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
• ভূপালচন্দ্র বসু (১৯০২ – ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.