গোটা একটা মুসলিম শহরকেই কয়েদখানা বানিয়ে রেখেছে চীন! কি লোকাতে চাইছে তারা?

উত্তর পশ্চিম চীনের কাশগর শহর (Kashgar) আজকাল আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনামে রয়েছে। আর তাঁর প্রধান কারণ হল, সেখানে অবস্থিত হাজার হাজার উইঘুর (Uyghurs / Uighur) এবং অন্য মুসলিম ক্যাম্প। মিডিয়ায় চর্চা হচ্ছে যে, চীন পুরো কাশগর শহরকে পরোক্ষ ভাবে কয়েদ খানায় রুপান্তরিত করেছে।

নিউইউর্ক টাইমস এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, সেখানে মসজিদ গুলোকেও চোখে চোখে রাখা হচ্ছে। চীনের সুরক্ষা কর্মীরা সেখানে গুপ্তচর হয়ে কাজ করছে। সেখানে যায়গায় যায়গায় চেকপয়েন্টে সুরক্ষা কর্মীরা বন্দুকের সাথে মোতায়েন আছে, আর সেখানে আসা যাওয়া সমস্ত মানুষের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে। এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Uighur detainees listening to a “deradicalization” presentation at a reeducation camp, in a photo posted to the Xinjiang Judicial Administration’s WeChat account, Hotan Prefecture, Xinjiang, 2017

সেখানে উইঘুর এবং অন্য মুসলিম ক্যাম্পে থাকা মানুষদের অফিসিয়াল আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের রোজ লাইনে দাঁড়িয়ে উপস্থিতি জাহির করতে হয়। চেকপয়েন্টে থাকা ম্যাশিন তাঁদের চেহারার স্ক্যান করে, স্ক্যান করার পরেই তাঁদের যেতে দেওয়া হয়।

নিউ ইউর্ক টাইমস এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কাশগর শহরের মুসলিম ক্যাম্পে থাকা মানুষ গুলোকে একপ্রকার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। চীন সেখানে সুরক্ষা কর্মীদের সেনা মোতায়েন করে চারিদিক নিয়ন্ত্রণ করছে। চীনের এই কাজ কমিউনিস্টদের স্বৈরাচারী মনোভাব জাহির করছে।

চীনের ওই ক্যাম্পে থাকা মানুষ গুলো বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের জীবনের কোন মানে নেই। নানারকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখা হয়েছে। এমনকি তাঁদের মিডিয়ার সাথেও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছেনা। চীনের ধারণা তাঁরা যদি মিডিয়ার সাথে কথা বলে, তাহলে সেটা চীনের ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে।

উইঘুর ক্যাম্পে প্রায় দিনই পুলিশ তদন্ত করতে চলে যায়। এমনকি তাঁদের ফোন নিয়ে ম্যাসেজ আর কলের উপর নজর রাখা হয়।

চীনের উইঘুর আর অন্য মুসলিম ক্যাম্পে এত নজর রাখার একটি কারণ আছে, সেটা হল সেখানে উইঘুর কজাখ আর তাজিক সম্প্রদায় স্থানীয় হেন চাইনিজ সংখ্যাগুরুদের থেকে অনেক বেশি। আর তাঁরা বেশর ভাগই সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের।

Acehnese Muslims demonstrate against China’s oppression of ethnic Uighur at Baiturahman Mosque in Banda Aceh, Indonesia, on Dec. 21, 2018. (Riau Images/Barcroft Media via Getty Images)

এই কারণে চীনের সেনা উইঘুর আর অন্য মুসলিম ক্যাম্প গুলো সবসময় নজরে রাখে। এমনকি তাঁদের বাড়ি ঘরের তল্লাশিও চালানো হয়। আর তাঁদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য চারিদিকে ক্যামেরা লাগানো আছে।

কাশগর শহর থেকে বেড়িয়ে তুর্কি যাওয়া এক ব্যাক্তি বলেন, কাশগর শহর একটা খাঁচার মত হয়ে গেছে। চীনের সেনা সেখানা দিন, রাত কিছু না মেনেই যখন তখন ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালাতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘আমি এটাই বুঝিনা যে চীন এত নজরদারি চালিয়ে কি অর্জন করতে চায়?”

TOPSHOT – A demonstrator wearing a mask painted with the colours of the flag of East Turkestan and a hand bearing the colours of the Chinese flag attends a protest of supporters of the mostly Muslim Uighur minority and Turkish nationalists to denounce China’s treatment of ethnic Uighur Muslims during a deadly riot in July 2009 in Urumqi, in front of the Chinese consulate in Istanbul, on July 5, 2018. – Nearly 200 people died during a series of violent riots that broke out on July 5, 2009 over several days in Urumqi, the capital city of the Xinjiang Uyghur Autonomous Region, in northwestern China, between Uyghurs and Han people. (Photo by OZAN KOSE / AFP) (Photo credit should read OZAN KOSE/AFP/Getty Images)

উইঘুর এবং অন্য মুসলিম ক্যাম্প গুলো থেকে অনেক মুসলিম ব্যাক্তি উধাও হয়ে গেছে। তাঁদের পরিবার আজও তাঁদের খুঁজছে। তুর্কিতে পালিয়ে যাওয়া ওই ব্যাক্তি জানায়, ‘ একদিন আমার মেয়ের বান্ধবী স্কুলে আমার মেয়েকে বলে যে, আমার মা আমাকে বাড়িতে কুরআন পড়ায়। আর তারপরের দিনই ওই পরিবার নিখোঁজ হয়ে যায়।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.