একই কারণে কি ভেঙে পড়েছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স এবং লায়ন এয়ারের বিমান! ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘ব্ল্যাক বক্স’

কতটা সুরক্ষিত বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেলের বিমান, তা নিয়ে জল্পনা অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ মাসে দু’বার ভেঙে পড়েছে এই মডেলের বিমান। ‘অপয়া’ তকমাও জুটেছে। ভারত সহ বিশ্বের দশটি দেশ বসিয়ে দিয়েছে এই মডেলের বিমান। এইসবের মধ্যেই প্রকাশ্যে এল আর এক তথ্য।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ভেঙে পড়া ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারলাইন্সের বিমান এবং সম্প্রতি ইথিওপিয়ায় ভেঙে পড়া বিমানের মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন ইথিওপিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী ডাগমাউইট মোজেস (Dagmawit Moges)। সাংবাদিকদের ডাগমাউইট জানিয়েছেন, সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইটি-৩০২-এর ডেটা এবং ভয়েস রেকর্ডার ‘ব্ল্যাক বক্স’। আর এই রেকর্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই ইথিওপিয়ার পরিবহণ মন্ত্রকের ‘অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ প্রাথমিক ভাবে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেই রিপোর্টেই বলা হয়েছে দুর্ঘটনার দিন ফ্লাইট ইটি-৩০২-তে ঠিক কী কী হয়েছিল। তার পাশাপাশি এও বলা হয়েছে যে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারলাইন্সের ভেঙে পড়ার সঙ্গে মিল রয়েছে এই দুর্ঘটনার। দুটি বিমান দুর্ঘটনা নিয়েই নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাগমাউইট।

গত ১০ মার্চ সকাল ৮ টা ৩৮ মিনিটে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ফ্লাইট ইটি-৩০২। উড়ানের পরেই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিমানটির। র‍্যাডারেও ধরা পড়েনি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেলের ওই বিমান। এরপর ৮ টা ৪৪ মিনিট নাগাদ, উড়ানের ৬ মিনিটের মধ্যেই ১৪৯ জন যাত্রী এবং ৮ জন ক্রু মেম্বার সমেত ভেঙে পড়ে ওই বিমান। মৃত্যু হয় ১৫৭ জনেরই।

‘ব্ল্যাক্স বক্স’-এর তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার দিন উড়ানের পর থেকে বারবার ওঠানামা করছিল প্লেনের টেকঅফ প্রেশার। কখন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, কখনও বা কম। তবে পাইলট ছিলেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ। ৮ হাজার ঘণ্টারও বেশি উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। কিন্তু এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৫৭ জনকে নিয়ে ভেঙে পড়ে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইটি-৩০২। ইতিমধ্যেই ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর ভয়েস রেকর্ড এবং ডেটা নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি দিয়েছেন ইথিওপিয়ার বিমান দুর্ঘটনার তদন্তকারী অফিসাররা। সেখানে গিয়েই বাকি পরীক্ষা করে জানা যাবে কেন ভেঙে পড়েছিল ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান।

২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর একই ভাবে ভেঙে পড়েছিল ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারলাইন্সের বিমান। যাত্রী এবং ক্রু মেম্বার সমেত মোট ১৮৯ জন ছিলেন ওই বিমানে। উড়ানের ১৩ মিনিটের মধ্যেই সমুদ্রের উপর ভেঙে পড়েছিল এই বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেলের বিমান। পরে উদ্ধার হওয়া ভয়েস রেকর্ডারের ডেটা থেকে জানা গিয়েছিল, ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্তেও বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন পাইলট। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জাভা সমুদ্রে ভেঙে পড়ে বিমানটি। সলিল সমাধি হয় ১৮৯ জনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.