ইতিহাস গড়লেন বাবা-মেয়ে। ভারতের সামরিক ইতিহাসে প্রথম বাবা-মেয়ে জুটি হিসেবে নির্দিষ্ট ফর্মেশনে বিমান ওড়ালেন বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা।
গত ৩০ মে বাবা এবং মেয়ের ফাইটার পাইলট জুটি সেই ইতিহাস গড়েছেন। কর্ণাটকে বিদার বায়ুঘাঁটিতে ব্রিটিশ হক-১৩২ অ্যাভভান্সড জেট ট্রেনার্স বিমানের ফর্মেশনে ওড়েন এয়ার কমোডর সঞ্জয় এবং ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক ঘটনা এক মাসেরও বেশি লাইমলাইটের আড়ালে ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার বাবা এবং মেয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যে ঘটনাকে নিজের ‘জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা।
এমনিতে ভারতের সামরিক ইতিহাসে ফর্মেশনে বাবা এবং ছেলের যুদ্ধবিমান ওড়ানোর একাধিক নজির আছে। কিন্তু বাবা এবং মেয়ের ক্ষেত্রে এতদিন সেই শূন্যস্থান ছিল। বায়ুসেনায় ফাইটার পাইলট হিসেবে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তিতে ছাড়পত্র দেওয়ার সাত বছর পর সেই শূন্যস্থান পূরণ হল। প্রথম বাবা-মেয়ে জুটি হিসেবে নির্দিষ্ট ফর্মেশনে বিমান উড়িয়েছেন এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা। নাম গোপন রাখার শর্তে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত বছর ভারতীয় বায়ুসেনায় ফাইটার পাইলট হিসেবে যোগ দেন অনন্যা। তাঁর বাবা ১৯৮৯ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, শুধু ভারত নয়, বিশ্বেও ইতিহাস গড়ে থাকতে পারেন এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা। সেন্টার ফর এয়ার পাওয়ার স্টাডিজের ডিরেক্টর জেনারেল এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা এবং অনন্যা হয়ত আরও বড় কোনও নজির গড়েছেন। কারণ বিশ্বের কোনও দেশের বায়ুসেনায় বাবা এবং মেয়ে একসঙ্গে (যুদ্ধবিমান) ওড়াচ্ছে বলে শুনিনি।’
শর্মা পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক আধিকারিক বলেন, ‘২০১৬ সালের ভারতীয় বায়ুসেনায় প্রথমবার মহিলা ফাইটার পাইলট যোগ দেওয়ার পরই অনন্যা বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর সারাজীবনের স্বপ্ন এখন বাস্তব হতে চলেছে।’ তিনি জানান. কার্যত ভারতীয় বায়ুসেনায় বড় হয়ে ওঠা অনন্যার কাছে ফাইটার পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার থেকে কোনও বড় স্বপ্ন ছিল না। ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিনিউকেশনে বি.টেক করার পরে ভারতীয় বায়ুসেনার ফ্লাইয়িং ব্র্যাঞ্চের প্রশিক্ষণের নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মার বাবা এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মার অভিজ্ঞতা নেহাত কম নয়। মিগ-২১ স্কোয়াড্রন এবং ফ্রন্টলাইন ফাইটার স্টেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ইতিহাস তৈরির পর দিশার টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা একটি ভিডিয়োয় ইতিহাস তৈরির পর এয়ার কমোডর সঞ্জয় শর্মা বলেন, ‘অনন্যা সবসময় বলত যে পাপা, আমি তোমার মতো ফাইটার পাইলট হতে চাই। কমিশনড হওয়ার পরে ও যখন ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা শর্মা হিসেবে আসে এবং আমায় স্যালুট করে, তখন গর্বে আমার বুক ফুলে যাচ্ছিল।’
সেই ভিডিয়োয় ফ্লাইয়িং অফিসার অনন্যা বলেন, ‘ছোটোবেলায় বাবাকে প্রায়শই জিজ্ঞাসা করতাম যে ভারতীয় বায়ুসেনায় কেন কোনও মহিলা ফাইটার পাইলট নেই। বাবা সবসময় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বলত যে চিন্তা কর না। তুমি হবেই (ফাইটার পাইলট)।’