সম্প্রতি কলকাতার একশ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী বলতে শুরু করেছেন, যাকেই ভোট দিন সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে একটি ভোটও নয়! পীরজাদা ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকী সাম্প্রদায়িক নন। তিনি সেকুলার ফ্রন্ট গঠন করেছেন। সেই ধর্মনিরপেক্ষ মহাপুরুষকে নিয়ে নাচছেন বামফ্রন্টের বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী সহ সব্বাই। যেমন দেশভাগের আগে সিপিআই দলের নেতারা মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে নেচেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৬ সালের ১৬ অগষ্ট গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং আর সেই বছরেরই নোয়াখালী দাঙ্গার বিভৎসতা দেখেছিল সারা দেশ। হাজার হাজার নিরপরাধ হিন্দুর মৃত্যু আর শতশত মা-বোনের গনধর্ষন দেখেছে বাঙালি। কলকাতার মানুষ ঘরপোড়া গরু, তাই সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাচ্ছেন।
দেশভাগের সময় কংগ্রেসের যে ভুমিকা ছিল আর থেকে বহুগুণ বেশী হৃদয়হীন আজকের তৃণমূল কংগ্রেসের আচরণ। এইদল সারা রাজ্যে জেহাদি সাম্প্রদায়িকতাকে জমি তৈরী করে দিয়েছে। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ, কালিয়াচকে থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, বশিরহাট-বাদুরিয়া দাঙ্গা, ধূলাগড়ের জেহাদি হামলার স্মৃতি এখনও দগদগে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের অধিকার রক্ষার জন্য তৈরী সি.এ.এ. এর বিরোধিতা নামে সারারাজ্যে অবাধ নাশকতা হয়েছে, কোন বিচার হয়নি, কেউ শাস্তি পায়নি।এই প্রতিটি ঘটনা প্রশাসনের ব্যার্থতাকে প্রমাণ করেছে। নিষিদ্ধ সিমি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদককে তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে। স্কুলপাঠ্য সাহিত্য থেকে কলকাতার রাস্তার নাম, সর্বত্র বাংলাকে সরিয়ে স্থান পেয়েছে উর্দু। উর্দু শিক্ষকের বদলে বহুদিন ধরে শূন্য বাংলা শিক্ষকের দাবী ছিল দিনাজপুরের দাঁড়িভিটে। সেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে রাজেশ আর তাপস, দুই তরতাজা কলেজছাত্র।
কিন্তু সবচেয়ে বেশী আশঙ্কা কলকাতায়। ১৯৪৬ সালে কলকাতা দাঙ্গার সময় কলকাতার মেয়র ছিলেন এস. এস. উসমান। তার ৭৫ বছর পরে কলকাতা মহানগরের মেয়র আবার এমন একজন হয়েছেন, যিনি নিজের নির্বাচনী এলাকাকে ” মিনি পাকিস্তান ” বলতে গর্ববোধ করেন। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দলনেত্রী তাঁকে কলকাতার মহানগরের মেয়র পদে অভিষেক করেন। তার মাত্র ২ বছর আগেই, ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল পাকিস্তানের “দ্য ডন” পত্রিকার সাংবাদিকের কাছে তিনি মিনি পাকিস্তানের ঘোষণা করেছিলেন।
এই মিনি পাকিস্তান থেকেই আজ কলকাতা পরিচালিত হচ্ছে। এইবছর ১ মার্চ এক স্কুল ছাত্রী দুপুর বেলা মায়ের সঙ্গে ফিরছিল। তাকে টেনে নিয়ে যেতে চায় শেখ ফারদিন আলি আর শেখ ইমরান আলি। তার আগের দিন দুপুরেই বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন ভাইজান।
২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারী কলকাতা মিনি পাকিস্তানের স্বরূপ দেখেছিল। মহম্মদ সোহরাবের ছেলেরা গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে নৌবাহিনীর তরুণ অফিসার অভিমন্যু গৌড়কে। এই জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে গেল অপরাধীরা।
৷ ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী কাদের খানের দল পার্কস্ট্রিটের ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছিল। মিনি পাকিস্তানের নির্মাতারা অপরাধীদের লুকিয়ে ফেলেছিল। সুজেট জর্ডনের মৃত্যুর পরে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ নয়ডা থেকে কাদেরকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
মিনি পাকিস্তানের গার্ডেনরীচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী দিনের আলোয় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল কলকাতা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরীকে। পুলিশ নিজের অফিসারের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে ব্যার্থ হয়েছে, অপরাধীরা জেলের বাইরে ঘুরছে। আজ কলকাতা অপরাধীদের জান্নাতে পরিনত হয়েছে।
এই অবাধ সাম্প্রদায়িক তান্ডবের মূল কারণ শাসকদলের ” দুধ দেওয়া গরুর” মতবাদ, হাসপাতালে ডাক্তারবাবু মার খেয়েছেন, পুলিশ টেবিলের নিচে গিয়ে ফাইলের আড়ালে লুকিয়েছিলেন এই কলকাতা শহরেই। মিনি পাকিস্তানের ঠিকাদাররা বলেই ফেলেছেন, ” শালা দিদি আমাদের ছাড়া জিততেই পারবে না।”
মিনি পাকিস্তানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষায় অধুনা এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। উর্দু, আরবি বা ইস্লামিক হিস্ট্রি বিষয়ে এক সম্প্রদায়ের পরীক্ষার্থীরা একশ নম্বরে প্রায় পূর্ণ নম্বর পাচ্ছে, কিন্তু গণিতের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায় শূন্য পেয়েছেন।এমন বিচিত্র নম্বর পেয়ে এক বড় সংখ্যক চাকরি পাচ্ছেন। ২০১৬ সালের মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় এক অভূতপূর্ব ফলাফল হয়েছিল। “জেনারেল” পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সফল ৪০০০ জনের মধ্যে ১১৩৪ জন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের। এর মধ্যে পার্কসার্কাসের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের কোচিং সেন্টারের থেকে ৬৯২ জন ছিলেন। এই সফল ছাত্রছাত্রীরা পাঁচটি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসেছিল। কলকাতা ওই পাঁচটি কেন্দ্রে সাফল্য ৯০ শতাংশ।
কলকাতার এই মিনি পাকিস্তান আমাদের কলকাতা পুলিশের ডি.সি. বিনোদ মেহতার নির্মম হত্যাকান্ড দেখিয়েছে। ১৯৮৪ সালের ১৪ মার্চ সকাল ১১টা সময় কর্তব্যরত বিনোদ মেহতাকে একদল লোক ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। দুপুর ২টো নাগাদ মৃত পুলিশ অফিসারের দেহ নর্দমায় ফেলে গিয়েছিল। এই ভয়ানক অপরাধের কোন বিচার হয়নি।
১৯৯০ সালের ৩০ মে বানতলায় স্বাস্থ্য অধিকারিক অনিতা দেওয়ানকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে ২১ নভেম্বর তসলিমা নাসরিনকে রাজ্য থেকে তাড়ানোর জন্য কলকাতায় দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছিল। সেদিন সিপিআই এমের দুটি পার্টিঅফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তসলিমা নাসরিনকে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যেতে বললেন।সেই চেয়ারম্যান বিমান বসু আজ ভাইজানের হাত ধরেছেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার ঠিক পরেই কলকাতায় হিন্দু সংখ্যা ছিল ৮৩.৪ শতাংশ। বাংলাভাষী হিন্দুদের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন।১৯৪১ সালের আদমশুমারীতে অখন্ড বাংলার হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৪১.৭%। মাত্র ৭০ বছরে বাংলাভাষী হিন্দুর অনুপাতিক সংখ্যা ১০% এর বেশী কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সরল গণিতের নিয়মে অচিরেই একজনও বাংলাভাষী হিন্দু বেঁচে থাকবেন না। এটাই কি কলকাতার ভবিষ্যৎ?
কলকাতা ভারতবর্ষের নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল। ১৮৮২ সালে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র “আনন্দমঠ” উপন্যাসে “বন্দেমাতরম” গান লিখেছিলেন। ১৯০৫ সালে শ্রীঅরবিন্দ কলকাতা থেকেই “বন্দেমাতরম ” মন্ত্রকে জাতীয়মন্ত্র ঘোষণা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার ভূমি থেকেই ভারতের জাতীয় সংগীত লিখেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতাতেই প্রথম ভারতমাতার চিত্র এঁকেছিলেন। এই কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়েই স্বামী বিবেকানন্দ স্বদেশমন্ত্র আহ্বান করেছিলেন , ” হে ভারত ভুলিও না…..”।
কলকাতার মেয়র ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর রাজনৈতিক শিষ্য নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এই মেয়রের আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। যদি ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় না থাকতেন তবে আজ কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষে থাকতো না। আমরা পাকিস্তানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতাম বা ভারতের অন্য কোন রাজ্যে উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিতাম।
আজ আবার ১৯৪৬ সালের মতো পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে। কলকাতাই রাজ্যের মুখ। বঙ্গজননী সেই মুখের দিকেই তাকিয়ে আছেন। কলকাতার আজকের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

প্রকাশ চন্দ্র দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.