নরেন্দ্র মােদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের এক ইঞ্চি জমিও কেউ দখল করতে পারেনি

সম্প্রতি লাদাখে চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় প্রতিদিনই আক্রমণ করে চলেছেন রাহুল গান্ধী। লাদাখের জমি চীনের দখলে চলে গিয়েছে বলে অভিযােগ করেছেন। তিনি। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীকে সারেন্ডার মােদী বলেও কটাক্ষ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, “লাদাখের জমি মােদী সরকার চীনের হাতে তুলে দিয়েছেন।

আগ্রাসী চীনের অপ্ররােচিত আক্রমণের মুখে দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, দলমত নির্বিশেষে সকলেরই প্রয়ােজন ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পাশে দাঁড়ানাে। ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে আক্রমণের এটা সময় নয়। সীমান্তে সৈন্যবাহিনী লড়াই করছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনাপ্রধান। সেই ভাবে এই লড়াইয়ে দেশবাসীকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর কাধে। এই সময়ে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করা সুনাগরিকের কর্তব্য নয়; তাও মিথ্যা অভিযােগ। কেননা নরেন্দ্র মােদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও কেউ দখল করতে পারেনি। পক্ষান্তরে, কংগ্রেস যা করেছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। কেন নজিরবিহীন তারই সপক্ষে কংগ্রেসের করা কতকগুলি ভুলের খতিয়ান তুলে দিচ্ছি। | দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার বর্গকিলােমিটার ভূমি ভারতকে হারাতে হয়েছে কংগ্রেসের শাসনকালে। বলা ভালাে, রাহুল গান্ধীর ‘চাচা নেহর’র আমলে। বলতে বাধা নেই, স্বাধীনােত্তর ভারতের সমস্ত ভূ-রাজনৈতিক সংকট তাঁরই মুখামির ফলশ্রুতি। এছাড়া তিনি যে ভুল করে গেছেন তার খেসারত দিতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বর্তমান ভারতকে।

১৯৪৭-এর অক্টোবর, পাকিস্তানের ট্রাইবাল আর্মি কাশ্মীরে প্রবেশ করলে সর্দার প্যাটেল ভারতীয় ফৌজ পাঠালেন কাশ্মীরের মহারাজাকে সহায়তা করার জন্য। ভারতীয় সেনা যখন পাকিস্তানের উপর বুলডােজার চালাচ্ছে নেহরু তখন একতরফা ভাবে যুদ্ধবিরতি ঘােষণা করলেন। লাখাে পাকিস্তানি সৈন্য বন্দি হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীরের এক তৃতীয়াংশ দান করে দিলেন। পাকিস্তানকে এবং নিজে জল ঘােলা করে খাওয়া চতুষ্পদ প্রাণীর মতাে কাশ্মীরকে টেনে নিয়ে গেলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে এবং পাকিস্তান। দ্বারা ভারতের রক্তক্ষরণের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফিরে এলেন দেশে।

১৯৪৭-এ ওমান ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছিল গােয়াদর বন্দর ভারতকে নেওয়ার জন্য, কিন্তু নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু পাকিস্তান তা লুফে নিল। পরে চীনকে দিল। আর চীন আমাদের মাথার ওপর ছড়ি ঘােরাতে শুরু করল।

স্বাধীনতা পাওয়ার পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি নিউক্লিয়ারের উপর এক্সপেরিমেন্ট ও নিউক্লিয়ার সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার জন্য প্রস্তাব করে, কিন্তু নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করলেন। ওই প্রস্তাব গ্রহণ করলে চীনের আগে এনএসজি-র প্রথম সদস্য হতাে ভারত। আজ ৭২ বছর অপেক্ষা করতে হতাে না।

১৯৫০-এ নেহর বার্মাকে কোকো আইল্যান্ড দিলেন উপহার হিসেবে। বার্মা বিক্রি করল চীনকে। আর চীন ভারতের নৌবাহিনীর উপর নজরদারি শুরু করে দিল।

১৯৫০ সালে আমেরিকা ভারতকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়, কিন্তু পরের ধনে ধনী, পরের বলে বলীয়ান দানবীর নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করে চীনের নাম প্রস্তাব করেন। ১৯৫৫ সালে আমেরিকা ও রাশিয়া যৌথভাবে ভারতকে পুনরায় প্রস্তাব করল। নেহরু স্বমহিমায় তা প্রত্যাখ্যান করলেন।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বালুচিস্তানের নবাব খান চিঠি লেখেন নেহরুকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিমত প্রকাশ করে। কিন্তু নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিছুদিন পরেই পাকিস্তান কবজা করে বালুচিস্তান। এখন চীন বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে পাকিস্তানের সহায়তায়।

১৯৫১ সালে নেপালের রাজা ঘিরিভুবন নেপালকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নেহর তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার ফলশ্রুতি চীনের প্ররােচনায় সেই নেপাল এখন ভারতের কিছু অংশকে নেপালের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে দেখাচ্ছে।

১৯৫২-তে অতি দয়ালু নেহরু (যিনি নিজস্বার্থে দেশকে বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠা বােধ করেন না) কাবাও ভ্যালি বার্মাকে দান করলেন। এর আয়তন ২২,৩২৭ বর্গকিলােমিটার। কাশ্মীরের মতাে আর এক ভূস্বর্গ। বার্মা তা চীনকে বিক্রি করে দেয়। আর চীন ভ্যালি এলাকায় আমাদের উপর গােয়েন্দাগিরি করে চলেছে।

১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হলে বিমানবাহিনী তার প্ল্যান অনুযায়ী চলতে চেয়েছিল। নেহরু না করে দিলেন। বললেন, ‘আকসাই চীনের কোনও গুরুত্ব নাই। কারণ একগােছা ঘাসও জন্মায় না। পরাজয় স্বীকার করলেন। চীনকে ৪৩,০০০ বর্গকিলােমিটার জমি ভেট হিসেবে দিলেন। আর ভারতের তিন হাজারের বেশি সেনা শহিদ হলেন।

| আকসাই চীনকে যখন চীনের হাতে তুলে দেওয়া হলাে, তখন সংসদে এ নিয়ে তুমুল হট্টগােল হয়েছে। সে সময় জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, যেখানে একটা ঘাসও জন্মায় না সেই ভূখণ্ড নিয়ে বিবাদ করে কী লাভ। জবাবে তাঁর দলের এক সাংসদ মাথার টুপি খুলে নিজের টাকমাথা দেখিয়ে বলেছিলেন, এখানেও একটা ঘাস জন্মায়নি। তাহলে আমার মাথাটাও কেটে ফেলুন।

আকসাই চীন নিয়ে চীনের যে স্ট্র্যাটেজিক লাভ হয়েছে তা বিপুল। তিব্বত ও জিনজিয়াং প্রদেশের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপনই শুধু নয়, সমস্ত হিমালয় অঞ্চলে অপ্রতিরােধ্য হয়ে উঠতে পেরেছে। পক্ষান্তরে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগের সুযােগ হারিয়েছে। কারণ নেহরুর জীবনে লড়াই করে কিছু আদায় করতে হয়নি। বােকা সুভাষ জীবনের বাজি রেখে লড়াই করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর নেহরু গান্ধীর তােষামােদ করে মসনদ দখল করেছেন। তাই এই ভুলের খতিয়ান। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যতই অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখান, এরকম গদ্দার থাকলে দেশ আরও টুকরাে টুকরাে হবে।

নেহরু এত ভুল করার পরেও রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করা রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাবই প্রমাণ করে।

মনীন্দ্রনাথ সাহা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.