ভারতের চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি কিছুদিন আগে বাংলাদেশী নাট্য অভিনেত্রী মিথিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রথম শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে সুস্বাদু ভূরিভোজ করে তা অনলাইনে প্রকাশ করেছেন। সেখানে বিভিন্ন প্রকারের খাবারের তালিকা রয়েছে। যার মধ্যে বাঁধাকপির সংগে গরুর মাংসও রয়েছে।

তা দেখে এক জন সাধারন হিন্দু বলেছেন,

‘হিন্দু নামের কলঙ্ক আপনি। আগে আপনাকে সন্মান করতাম। কিন্তু এই পোস্ট পড়ার পর থেকে আপনাকে ঘৃণা করি। আপনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করুন। আই হেট ইউ।’

সেই টুইটার ব্যবহারকারীকে ছেড়ে কথা বলেননি সৃজিত। তিনি পাল্টা লেখেন, হিন্দু ধর্ম নিয়ে আপনার মতো অশিক্ষিতের মুখে বেমানান। ঋগ্বেদ ১০/৮৫/১১ ও ৬/১৭/১, মনুস্মৃতি ৫/৩০ ও ৫/৩৫ অপস্তম্ব গৃহসূত্রম ১/৩/১০, ও বশিষ্ঠ ধর্মসূত্র ১১/৩৫ কিছু শ্লোক দেব খাওয়া-দাওয়া নিয়ে, রোজ সকালে কান ধরে ছাদে দাড়িয়ে মুখস্থ করবেন। ভদ্রভাবে বোঝালাম, নয়তো মনে রাখবেন বাইশে শ্রাবণের সংলাপ কিন্তু আমারই লেখা।

আমার মনে হতে লাগলো, যদি বেদে গোমাংস খাওয়ার অনুমতি থাকে তা হলে হিন্দুরা খাচ্ছে না কেন? এতো ধর্মীয় সংস্থা, এতো পুরোহিত সাধু সন্ন্যাসী তারা কি বেদ পড়তে পারে না? নাকি তারা সত্যি কথাটা বলছে না? শেষপর্যন্ত ব্রাহ্মণ পুত্র সৃজিত মুখার্জি সত্যি কথাটা বললেন।

আমার খুব ইচ্ছে হলো উনার দেওয়া নির্ধারিত বেদের শ্লোক গুলো দেখা। তাই খুঁজলাম, পেয়ে গেলাম।

ঋগ্বেদ ১০/৮৫/১১

‘ঋক ও সাম দ্বারা বর্নিত দুই বৃষ তাহার শকট, এই স্থান হইতে বহিয়া লইয়া গেল। হে সূর্য! দুই কর্ন তোমার রথচক্র হইল, আর সেই রথের পথ আকাশে, ঐ পথে সর্বদা যাতায়াত হইয়া থাকে।’

এখানে খাবার বিষয়ে কোথাও কিছু লেখে দেখলাম না। কি বললেন তিনি?

পরের শ্লোকটা খুঁজলাম।

ঋগ্বেদ ৬/১৭/১

‘হে প্রচন্ড বলশালী ইন্দ্র! তুমি যে সোমপান করিবার নিমিত্ত পিণিগন কর্তৃক অপহৃত গোসমূহ প্রকাশিত করিয়াছিলে, অঙ্গিরাগণ কর্তৃক স্থয়মান হইয়া সেই সোমরস পান কর। হে শত্রুনিধনকারী বজ্রপাণি! তুমি বল সম্পন্ন হইয়া অখিল বিঘ্নকারী শত্রুকে সংহার করিয়াছ।’

এখানে সোমরস পান করার কথা বলা হয়েছে। সোমরস অর্থ কি? তা খুজে দেখলাম পাতার নির্জাস। তাহলে বেদে গরু ঘাস পাতা খেলে তার নির্জাস দুধ হয়ে বেরিয়ে আসে তাহাই বুঝিয়েছে। কোথাও খাওয়ার কথা উল্লেখ নেই। পান করার কথা বলা আছে। তা নিশ্চয়ই তরল। কিন্তু মাংস তো পান করা যায় না।

অন্য শ্লোকগুলো পড়ুন ও স্বয়ং বিচার করুন সৃজিত মুখার্জীর মিথ্যাচারের গভীরতা।

মনুস্মৃতি ৫/৩০

তাঁর প্রতি নিবেদিত আহার্য্য যে প্রতিদিন আহার করে, তার কোনো পাপ হয় না। ঈশ্বর খাদক ও খাদ্য উভয়কেই সৃষ্টি করেছেন। (সেই বিশেষ উদ্দেশ্যে)

মনুস্মৃতি ৫/৩৫

কিন্তু যে ব্যক্তি, যথাযথভাবে জড়িত (পবিত্র স্থানের খাবার পরিবেশন করা বা খাওয়া), তিনি মাংস খেতে অস্বীকার করেছেন, তিনি মৃত্যুর পরে একুশতম অস্তিত্বের সময় একটি প্রাণী হয়ে যান।

অপস্তম্ব গৃহসূত্রম ১/৩/১০

নিত্য নৈবেদ্যদ্বয়ে অন্ন, যব বা শস্য উৎসর্গকৃত আহার্য্য হিসেবে চয়ন করা উচিত।

বশিষ্ঠ ধর্মসূত্র ১১/৩৫

”তিনটি (বিষয় ধারণ করা হয়) একটি জানাজার কোরবানী, একটি মেয়ের ছেলে, মধ্যাহ্ন এবং তিলের দানকে পবিত্র করা; এবং তারা এর জন্য তিনটি (অন্যান্য জিনিস) সুপারিশ করে, পবিত্রতা, ক্রোধ থেকে বর্ষণ এবং বৃষ্টিপাত থেকে মুক্তি। ”

অনেকে বলে বেদে গরু খাওয়ার অনুমতি আছে। ইহা কখনো বিশ্বাস করবেন না। আগে রেফারেন্স চাইবেন। তারপর তা খুঁজে দেখবেন।

লেখক ঋতমব্রত যাজ্ঞিক।

বাংলাদেশ নিবাসী, কম্প্যুটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র। অনলাইনে বাংলা ও বাঙালী বিষয়ে লেখালেখি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.