১৮ আসনের পিছনে ৪৮ মাসের ছক, গ্রামে গ্রামে পদ্ম চেনাতে ‘নব-দীপ’ পরিকল্পনা করে বিজেপি, আরএসএস

২ থেকে ১৮। এই লাফটা সহজ ছিল না। এমন হাইজাম্পের প্রস্তুতি শুরু হয় চার বছর আগে। সেই সময়ে তৈরি হওয়া পরিকল্পনা মেনে ৪৮ মাসের চেষ্টাও এনে দিয়েছে এই জয়। বিজেপির এই সাফল্য যাত্রায় সামনে থেকে যেমন মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়রা ছিলেন, তেমনই অন্তরালে থেকে কাজ করেছেন অনেকে। তাঁদের নিয়েই তৈরি হয়েছিল বিজেপির নব-দীপ টিম। নেতৃত্বে ছিলেন এই রাজ্যের দায়িত্ব থাকা কেন্দ্রীয় সহ-সংগঠন সম্পাদক শিব প্রকাশ।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার বিপুল ক্ষমতা নিয়ে দিল্লির গদিতে বসার কিছুদিনের মধ্যেই দিল্লিতে একটি সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছিলেন সভাপতি অমিত সাহ। যোগ দেন সব রাজ্যের সভাপতি ও সংগঠন সম্পাদক। সেই বৈঠকেই শাহ বলেছিলেন, এখন থেকেই পূর্বের দিকে নজর দিতে হবে। ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসতে নতুন নতুন রাজ্যে শক্তি বাড়ানো দরকার। বিজেপির ‘লুক ইস্ট পলিসি’ তৈরি হয় তখনই। তারই জেরে ত্রিপুরা আর পশ্চিমবঙ্গ দখলের ছক প্রস্তুত করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ত্রিপুরায় যান মহারাষ্ট্রের নেতা সুনীল দেওধর, আগ্রা থেকে বাংলায় আসেন শিব প্রকাশ। ২০১৫ সাল থেকে তৈরি হয় বাংলা দখলের ‘নব-দীপ’ পরিকল্পনা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নয় নেতা আসেন আলাদা আলাদা দায়িত্ব নিয়ে। এই দলেও ছিলেন এক মুকুল। ডক্টর মুকুল নামে পরিচিত সেই নেতাও শিব প্রকাশের সঙ্গে সাজান ঘুঁটি।

মুকুল রায়ও ছিলেন সেই পরিকল্পনার অঙ্গ। অর্জুন সিং সহ বিভিন্ন দল থেকে অন্য নেতাদের বিজেপিতে নিয়ে আসা, প্রার্থী করা সবই ছিল সেই নবদীপ ছকের অঙ্গ।

কেমন ছিল সেই ছক? জানা গিয়েছে, শিব প্রকাশ প্রথমেই রাজ্যকে পাঁচটি জোনে ভাগ করেন। লোকসভার ৮ আসন নিয়ে উত্তরবঙ্গ, ৯ আসন নিয়ে নবদ্বীপ, ৮ আসনের রাঢ়বঙ্গ ছাড়াও ১০ আসন নিয়ে হুগলি-মেদিনীপুর ও ৭ আসন নিয়ে কলকাতা জোন। চার বছর ধরে গড়ে তোলা হয় ১২৮০টি সাংগঠনিক ভাগ (মণ্ডল)। তৈরি হয় ১২,৪০৭টি শক্তিকেন্দ্র। রাজ্যের মোট ৭৮,৭৪১টি বুথের মধ্যে ৫৮,০৮৪টিতে তৈরি হয় বুথ কমিটি।

মূল কাজ শুরু হয় রায়চকের চিন্তন বৈঠক থেকে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দু’দিনের বৈঠকের পরে ফের ডায়মন্ড হারবারে চিন্তন বৈঠক হয় ২০১৬-র ডিসেম্বরে। জেলায় জেলায় সংগঠন বাড়াতে এই চার বছরে সাড়ে ১৭ হাজার স্বয়ংসেবেক (আরএসএস সদস্য) অল্প সময়ের জন্য বিস্তারক হিসেবে বের হন। এই বিস্তারক যোজনাতেই বুথ স্তরের কমিটি গঠনের কাজ হয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী প্রচার পর্বে বারবার আরএসএস-এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপি তো বটেই কংগ্রেসকে সাহায্যের অভিযোগও তুলেছেন। আরএসএসকে নিয়ে তৃণমূলনেত্রীর এই গাত্রদাহ অকারণ ছিল না। তৃণমূলনেত্রীও বুঝতে পেরেছিলেন বিস্তারক যোজনার মাধ্যমে কী ভাবে গ্রামীণ বাংলায় পৌঁছে গিয়েছিল বিজেপির পতাকা। আদিবাসী সমাজ চিনে গিয়েছিল পদ্ম প্রতীক। গ্রামে বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাকেই মূলত টার্গেট করেছিলেন অমিত শাহ। বিস্তারকদের নিয়ে বৈঠক করেন কলকাতায়। সেখানেই বলে দিয়েছিলেন কী ভাবে জয় আনতে হবে তার ছক। সেই ছকেই বাজিমাৎ বিজেপির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.