দুদিন ধরে দফায় দফায় অশান্তি চলছে ভাটপাড়ায়। রবিবার ছিল ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচন। সেইদিন বেলা গড়াতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগণার ভাটপাড়ার বিভিন্ন এলাকা। অশান্তি জারি থাকে সোমবার সকালেও। দীর্ঘক্ষণের জন্য অবরোধ হয় কাঁকিনাড়া রেল স্টেশনে। বন্ধ থাকে শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর মেন লাইনের পরিষেবা। নাজেহাল হন নিত্যযাত্রীরা।ভাঙ্গচুর করা হয় সাধারণ মানুষের বাড়ি। বেশ কিছু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এছাড়া বেশ কিছু রোড সকাল থেকে অবরুব্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ ও বিজেপি থানা ঘেরাও করে।বেলা বাড়লে ফের উত্তেজনার পারদ ওঠে তুঙ্গে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত ভাটপাড়ায় ১৪৪ ধারা জারি থাকছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ দিকে ভাটপাড়ায় শান্তি ফেরাতে সেনা নামানোর দাবি জানালেন অর্জুন সিং। সোমবার নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিতভাবে এই দাবি জানাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছেও চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্জুন। ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে শনিবার রাত থেকেই তেতে ওঠে ভাটপাড়া। বোমা গুলিতে সন্ত্রাসের আখড়া হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। রবিবারও দিনভর সেই সন্ত্রাসেরই সাক্ষী ছিলেন এখানকার মানুষ। মুড়িমুড়কির মত বোমা, গুলি, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দফায় দফায় লাঠিচার্জে কাঁকিনাড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। সন্ধ্যায় ভোটপর্ব মিটলেও পরিস্থিতির এতটুকু উন্নতি হয়নি। বরং তারপরেও চলে বোমাবাজি। নির্বিচারে বাড়ি ও দোকান ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশের নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগে সোমবার সকালে দীর্ঘক্ষণ কাঁকিনাড়া স্টেশনে রেল অবরোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। পরে রেল পুলিশের বিশাল বাহিনী গিয়ে অবরোধ হটিয়ে দিলে শিয়ালদা-রানাঘাট শাখায় রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে গোটা এলাকায় উত্তেজনা কমেনি। এখনও চলছে বোমা গুলির লড়াই।
ভাটপাড়া বিধানসভায় এ বার মুখোমুখি লড়াই সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অর্জুন সিং’য়ের ছেলে পবনের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের। গতকাল ভোটের দিন মদন মিত্র যখন বিভিন্ন বুথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সেই সময় বেশ কয়েকবার বুথে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরেই শুরু হয় ব্যাপক বোমাবাজি। অশান্তির খবর শুনে ছেলেকে নিয়ে কিছু জায়গায় অর্জুন সিংও পৌঁছে যান। ততক্ষণে তেতে উঠেছে গোটা এলাকা। বোমা পড়ছে লাগাতার। কাঁকিনাড়া স্টেশন লাগোয়া রাস্তা গুলিতে শুরু হয়ে যায় ব্যাপক ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ। বাদ যায়নি পুলিশের গাড়িও। সন্ধ্যের পর ভাটপাড়া ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ঘোষ পাড়া রোড, কাঁকিনাড়া স্টেশন সংলগ্ন চালতা রোড চত্বরে জারি থাকে বোমাবাজি। ভাঙ্গচুর ও লুঠতরাজ চালানোর অভিযোগ ওঠে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গুরুতর জখম হন আধাসেনা বাহিনীর তিনজন জওয়ান। জখম হয়েছেন দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থক সহ প্রায় ৫০ জন।দু-দলের সংঘর্ষে বোমাবাজিতে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন গোটা এলাকার মানুষ। এই পরিস্থিতিতেই এলাকায় শান্তি ফেরাতে সেনা নামানোর। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।