ক্যালেন্ডারে এখনও বসন্ত। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা সকাল দশটার ঘর টপকালেই ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ। হলকা এড়াতে অনেক প্রার্থীই তাই সকাল সকালই সেরে ফেলতে চাইছেন প্রচার। বাকিটা আবার রোদ পড়লে।
ভারতী ঘোষ কিন্তু ব্যতিক্রম। রোদকে হারানোই যেন একদা দুঁদে এই পুলিস কর্মীর এখনকার চ্যালেঞ্জ। তাই প্রতিদিনই প্রচার শুরু করছেন বেলা একটার পরে। তারপর শেষ করতে করতে সন্ধে গড়িয়ে রাত। ঠা ঠা রোদেই তাঁর কনভয় ছুটছে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের নানা গ্রামে। মনে করলেই নেমে পড়ছেন গাড়ি থেকে। আলপথ ধরে সোজা হেঁটে যাচ্ছেন বাসিন্দাদের কাছে। বললেন, “পুলিশের চাকরি করেছি। যখন তখন রেড করতে বের হতাম। থাকতো জনসংযোগের কাজ। রোদ-ঝড়-বৃষ্টির কথা মাথায় রাখলে অর্ধেক কাজই আর করে ওঠা হোতো না। প্রচারেও তাই নিজের সুবিধামতো সময়ে বের হচ্ছি। শুধু মাথায় রাখছি বেশি সংখ্যায় মানুষের কাছে কখন পৌঁছোনো যাবে।”
বুধবার মোদীর সভায় তাঁকে দেখা গিয়েছে শাড়িতে। প্রতিদিনের প্রচারে কিন্তু জিনস আর টপেই স্বচ্ছন্দ তিনি। কখনও পালাজো আর কুর্তি। আর গলায় জড়ানো দলের পতাকা। মানুষের কাছে পৌঁছতে পোশাকেও যে স্বাচ্ছন্দ্য চাই।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন ভারতী। প্রচারে বেরিয়েই ভারতীর লক্ষ্য থাকছে গ্রামের মেয়েদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। তাঁর কথায়, “নারীশক্তির উত্থান আমার কাছে একটা ফ্যাক্টর। তাই যেখানেই আমি যাচ্ছি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছি। বোঝার চেষ্টা করছি ওদের সমস্যা, চাওয়া পাওয়া। ওঁদের সঙ্গে কথা বলে একটা এলাকার সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পেতে চাইছি। যাতে ভবিষ্যতে কাজ করতে সুবিধা হয়।”
একেবারে পাক্কা রাজনীতিকের মতোই প্রতিদিন প্রচারে বের হওয়ার আগে করে নিচ্ছেন কর্মী বৈঠক। প্রতিটি বিধানসভা এলাকায়। ঘাটাল লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী হওয়ার পরেই প্রচার শুরু করেছেন সেই দাসপুর থেকে। যেখানকার বাসিন্দা চন্দন দাস প্রথম ভারতীর বিরুদ্ধে সোনা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এবং যে মামলার জেরে দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়েছিল ভারতীকে।
ভোটের ময়দানে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী, অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব। যখনই প্রচারে বের হচ্ছেন দেব, ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। সে দিক দিয়ে অবশ্য পাল্লা দিচ্ছেন ভারতীও। প্রাক্তন পুলিশ কর্তাকে দেখতেও ভিড় নেহাত কম নয়।
যা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ বারের ঘাটালে ভোটের লড়াই হবে খুবই জোরদার। ইতিমধ্যেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাম ও কংগ্রেস। প্রার্থী চারজন হলেও, লড়াই মূলত দুজনের।