আজ হতে প্রায় ১৮০ বছর আগের কথা।সমুদ্রতীরের অনাবিল সৌন্দর্যময় রাজস্থানের টঙ্কর গ্রামে ঘটে গেল একটি বেদনাবিধুর অঘটন।গ্রামের প্রসিদ্ধ পন্ডিত ব্রাহ্মণ কর্ষণজি লাল তিওয়ারী ও যশোদাবাই এর একমাত্র কন্যা অজানা রোগে মৃত্যুবরন করল।শোকের আবহ কাটতে না কাটতেই কর্ষণজি লাল এর ছোটভাই কলেরায় মারা গেলেন।
কাকার মৃত্যুতে অতি আদরের ভাতিজা(কর্ষনজির ছেলে) কেঁদে আকুল হলেন।সবসময় কাকার সাথে ঘুরে বেড়ানো কিশোরটি যেন কোনভাবেই যেন প্রিয়জন বিচ্ছেদের এই বেদনা মেনে নিতে পারছিল না। কর্ষণজি গ্রামের শিবপূজারী ব্রাহ্মণগোত্রের প্রধান ছিলেন।সেই সুবাদেই পুত্র মূলশঙ্কর তিওয়ারী ছোটবেলা থেকেই পূজাঅর্চনা,শাস্ত্রপাঠে দক্ষ হয়ে উঠলেন।মায়ের স্নেহসুলভ নিষেধের সত্ত্বেও বালক মূলশঙ্কর ঠিক করল সে শিবরাত্রির উপবাস রাখবে।দিনটা ভালোই ভালোই কাটল।রাতে সবাই উপবাসের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেও মন্দিরে রাত জেগে বসে থাকল ছোট্ট ভক্ত মূলশঙ্কর।সারারাত বসে নৈবেদ্য ঠাকুরপ্রতিমাকে নিবেদন করবে এই তার ইচ্ছা।কিন্তু অবাক হয়ে ছেলেটি লক্ষ্য করল এত কষ্ট করে ভক্তদের দেয়া নৈবদ্য খেয়ে যাচ্ছে ইঁদুরের দল,মূর্তিমান ঠাকুরের তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ ই নেই!
আপাতদৃষ্টিতে ছোট এই ঘটনাটিই কিন্তু গভীর রেখাপাত করেছিল বালক মূলশঙ্করের নিষ্কলুষ মনষ্পটে যে কিনা প্রিয়জন বিয়োগের প্রেক্ষিতে খুঁজে ফিরছিল মৃত্যু নামক নির্মম বাস্তবতার রহস্যপট! শিবরাত্রির অন্ধকার ওই রাতটি যদি হয় অজ্ঞানতার অন্ধকার যা ঢেকে রেখেছিল পবিত্র আর্যভারতকে তবে মূলশঙ্করের ভক্ত মনের ওই জিজ্ঞাসু হতাশা ছিল সেই অন্ধকারকে সরিয়ে জ্যোতির্মোচন করার শুরু যা জন্ম দিয়েছিল মহাঋষি দয়ানন্দ স্বরস্বতী নামক মহানক্ষত্রের!
সেই বালক মনে যে একবার সূচনা হয়েছিল বৈরাগ্যের তা ক্রমশ বাড়তে লাগল।প্রচলিত সংস্কারের প্রতি সংশয়াত্মা মূলশঙ্কর ক্রমে বেদাদি শাস্ত্রপাঠের দিকে মনোনিবেশ করলেন,প্রত্যাখ্যান করলেন উচ্চশিক্ষার জন্য কাশী যাবার প্রস্তাব।পুত্রের এহেন দশা দেখে ক্রমশ ভীতসন্ত্রস্ত পিতামাতা তার বিয়ে ঠিক করলেন,ভাবলেন সংসারের প্রতি মনোনিবেশ হলে বৈরাগ্য হয়তো কেটে যাবে।কিন্তু যার মধ্যে লুকিয়ে আছে আর্যাবর্তের গৌরব ফিরিয়ে আনার আদিম শক্তিরাশি তার ক্ষেত্রে কি আর এহেন সরল সমীকরন খাটে!
এমতাবস্থায়,১৮৪৬ সালে,২২ বছর বয়সে,ঠিক বিয়ের দিনে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন!
তরুন মুলশঙ্কর যে বয়সে করবিভাগের কর্মকর্তা পিতার ধনপ্রাচুর্যে হেসে,খেলে জীবনকে উপভোগ করবেন সেই বয়সে সকল জাগতিক মায়া ছেড়ে তিনি সন্ন্যাস গ্রহন করলেন।১৫ টি বছর বনে জঙ্গলে,দুর্গম হিমালয়ে,তীর্থ থেকে তীর্থে ঘুরে বেড়ালেন একজন সদ্গুরুর আশায়।এসময় অধ্যয়ন করলেন প্রচুর শাস্ত্রাদি,অভ্যাস করলেন নানা প্রকার যোগপদ্ধতির,সান্নিধ্যে আসলেন অগনিত মুণি-পূন্যাত্মার।তাদের ই একজন ছিলেন স্বামী পূর্ণাশ্রম।তিনি মূলশঙ্করকে বললেন,”এ পৃথিবীতে একজন ই আছেন যিনি তোমার সকল সংশয় দূর করতে পারবেন।তিনি হলেন মথুরার বীর্যানন্দ দন্দীশা।তুমি তার কাছে যাও।”
একথা শুনে তিনি যাত্রা করলেন মথুরায়,তখন ১৮৬০ সাল।অন্ধমুনি বীর্যানন্দের গুরুকুলেই তিনি খুঁজে পেলেন তাঁর প্রার্থিত জ্ঞানসাগর।বীর্যানন্দ অবাক হয়ে দেখলেন যে মূলশঙ্কর সংস্কৃত ব্যকরণ ও শাস্ত্রাদিতে অত্যন্ত দক্ষ!যমুনায় স্নান করিয়ে দীক্ষাসম্পন্ন করলেন নবশিষ্যের!তাঁর নতুন নাম হল দয়ানন্দ সরস্বতী যিনি পরবর্তীকালে মহাঋষি পদে খ্যাত হন।
প্রায় দশটি বছর গুরুর নিকট কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করলেন তিনি।এবার তার বিদায়ের পালা।বিদায়বেলায় গুরুদক্ষিণা কি দিলেন?কপর্দকহীন এক সন্ন্যাসী,যার প্রতিদিনকার আহার জোটে দান হতে তিনি কিইবা গুরুদক্ষিণা দেবেন!এই সর্বহারা লোকটি ই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দক্ষিণা দিলেন,তিনি কথা দিলেন তাঁর পুরো জীবন তিনি বেদ অমৃত প্রচারের জন্য,মানুষের নিকট ধর্মের আলো পৌঁছে দেবার জন্য উত্সর্গ করবেন!শিবরাত্রির সেই সংশয়,২৫ বছরের এই অমানুষিক শ্রম,কঠোর তপস্যা যেন এক উদ্দেশ্য খুঁজে পেল!
শুরু হল আলো ছড়ানোর যাত্রা,দয়ানন্দ পুরো ভারতবর্ষ পদব্রজে ঘুরতে বের হলেন।গেলেন কুম্ভ মেলায়,দেখলেন ধর্মের নামে পাণ্ডাদের দৌরাত্ব,দেখলেন মানুষ মানুষকে ছোঁয়না,মানুষের হাতে খায়না,আর্যাবর্তের সন্তান হয়েও বিদেশীদের কাছে মাথানত করে আছে বীরহৃদয় হিন্দুগণ।এই দুর্দশা দেখে অন্তরে নিদারুণ ব্যাথা অনুভব করলেন তিনি।
একদিন দেখলেন এক মহিলা এক মৃত সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।যে কাপড়ে মুড়িয়ে বাচ্চাটিকে এনেছিলেন ভাসিয়ে দেবার জন্য ভাসানোর সময় সেই কাপড়টি পর্যন্ত নিয়ে নিলেন!আশ্চর্য হয়ে স্বামীজি এর কারন জিজ্ঞেস করলেন,জানতে পারলেন এতই দরিদ্র সেই মহিলা যে মৃত সন্তানকে শেষ কাপড়ের টুকরোটিও দেবার সামর্থ্যও তার নেই!দয়ানন্দ বুঝলেন শুধু ধর্মীয় ঐতিহ্য পতনের গ্লানি ই নয়,প্রিয় ভারতবর্ষ ভুগছে সীমাহীন দারিদ্র্যের অপঘাতে।
ভারতের সব প্রান্তের বিখ্যাত সব পণ্ডিতদের সাথে তাঁর ঐতিহাসিক সব বিতর্কসভা অনুষ্ঠিত হল।সেইসব কুসংস্কারাচ্ছন্ন,মানুষের ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে যারা ফায়দা লুটে চলেছে যুগের পর যুগ,যারা প্রচার করেছিল শুদ্র ও নারীদের বেদ ও শাস্ত্রে অধিকার নেই,যারা শুদ্রদের অস্পৃশ্য ঘোষণা করেছিল,যারা কেড়ে নিয়েছিল জনগণের মন্ত্র পাঠের অধিকার,যারা বিধবা মহিলাদের অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য করেছিল।দয়ানন্দজী প্রথমবারের মত সুবিধাবঞ্চিত,অবহেলিত,নিপীড়িত দলিত জনগোষ্ঠীদের হরির সন্তান তথা হরিজন নামে আখ্যায়িত করেছিলেন,প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নারীর সমঅধিকারের শাস্ত্রীয় ভিত্তি,প্রমাণ করেছিলেন পবিত্র বেদে সকলের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে,মানবতার জয়গান গাওয়া হয়েছে।
তাঁর বিখ্যাত বিতর্কসভার মধ্যে হৃষীকেশ এর নামজাদা পণ্ডিত হীরা বল্লভ ও তাঁর ৯ জন সঙ্গী পণ্ডিত এর সাথে বিতর্কের কথা স্মরণ করা যেতে পারে।৮ দিন ব্যাপী এই বিতর্ক প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা করে অনুষ্ঠিত হত।এই ছিল তাঁর জয়যাত্রার সূচনা।
আরেকটি স্মরণীয় বিতর্কসভা ছিল কাশীর বিতর্কসভা।মহর্ষি যখন কাশীতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করতে লাগলেন তখন তাঁর জাগরণী,যুক্তিময় মানবতার বাণীতে পুরো শহরে এক বিশাল সারা পরে গেল।হাজার হাজার লোক আসতে থাকল তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহনে।তখন কাশীর পণ্ডিতদের টনক নড়ল।তাঁরা বুঝতে পারলেন যে তাঁদের অন্ধবিশ্বাস দিয়ে নিরীহ লোকদের পরিচালনা করার দিন ফুড়োতে চলেছে।ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁরা কাশীর তৎকালীন রাজার কাছে নালিশ দিলেন যে দয়ানন্দ তাদের ভুলপথে পরিচালিত করছেন।তখন কাশীর রাজা এক বিতর্কের আয়োজন করলেন।সহস্র সহস্র লোকের জমায়েত হল,কাশীর সমস্ত পণ্ডিত একদিকে আর দয়ানন্দজী আরেকদিকে।দয়ানন্দজীর অতিমানবীয় জ্ঞানালোকের চ্ছটায় তারা ত্রাহি ত্রাহি রব করতে লাগলেন।না পেরে তারা দয়ানন্দজীর দিকে পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেন,রক্তাক্ত করলেন তাঁকে।এমন পরিস্থিতিতে লজ্জিত হয়ে রাজা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন।সবাই বুঝে নিল কে জয়ী হয়েছিল!
তাঁর জীবনের সবচেয়ে ঐতিহাসিক বিতর্কসভা ছিল ১৮৬৯ সালের ২২ শে অক্টোবর বারানসীর বিতর্কসভা যাতে সমগ্র ভারতের ৩৯ জন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত তাঁর সাথে বিতর্কে অংশ নিতে মিলিত হন।প্রায় ৫০০০০ দর্শনার্থীর অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এই সভায় দয়ানন্দ জীর জয় ভারতের ইতিহাসে তাঁকে অনন্য আসনে প্রতিষ্ঠা করে।
পবিত্র বেদের আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন অসঙ্খ্য গুরুকুল যাতে সারা ভারতবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করল জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণায়।এর মধ্যে ফররুখাবাদ(১৮৬৯),মিরজাপুর(১৮৭০)
,কাশিগঞ্জ(১৮৭০),আলীগড়(১৮৭০) এবং বারানসি গুরুকুল(১৮৭৩) উল্লেখযোগ্য।
১৮৭৪ সালে তিনি বোম্বেতে আমন্ত্রন পেলেন সেখানকার পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কের জন্য।২০ শে অক্টোবর এর সেই বিতর্কতে জয়লাভ ই তাঁকে তাঁর অমর সংগঠন আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন করে দেয়।সেখানে সবাই তাঁর গভীর পাণ্ডিত্যে এতই মুগ্ধ হলেন যে তাঁরা বেদ প্রচারে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন স্বামীজিকে প্রধান বানিয়ে।শুরু হল আর্য সমাজের ঐতিহাসিক পথচলা।
বোম্বেতে থাকাকালীন সময়েই তিনি আহমেদাবাদের প্রখ্যাত পণ্ডিত গোপালরাও হরিমুখ এর সাথে বিতর্ক করার আমন্ত্রণ পান।রওনা দিলেন আহমেদাবাদের উদ্যেশ্যে।স্থানীয় পণ্ডিতদের বিতর্কে হারিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন আর্য সমাজের আহমেদাবাদ শাখা।
এর ই মধ্যে প্রকাশিত হল তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ যা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভূত ভূমিকা পালন করেছিল।তিনি ই প্রথম বিদেশী সম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন যে কারনে প্রাক্তন ভারত রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তাঁকে ‘আধুনিক ভারতের অন্যতম রুপকার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর ইতিহাস অতি বেদনাদায়ক।যোধপুরের মহারাজা যশবন্ত সিং দয়ানন্দজীর আদর্শে এতই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে তিনি ঠিক করলেন তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করবেন।দয়ানন্দজীকে রাজা আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর প্রাসাদে আতিথ্য গ্রহন করতে।তিনি আমন্ত্রণ গ্রহন করলেন।একদিন দয়ানন্দজী রাজার সাথে কথা বলার জন্য তাঁর বিশ্রামকক্ষে গেলেন,সেখানে তিনি রাজাকে নান্নি জান নামক এক নর্তকীর সাথে দেখে ফেললেন।তখন মহর্ষি রাজাকে অত্যন্ত ভৎসরনা করলেন এবং তাঁকে এসব অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে মানা করলেন।দয়ানন্দজীর এই আচরণ ওই নর্তকীর মনে অত্যন্ত দুঃখ দিল এবং সেই মহিলা এর প্রতিশোধ নেবেন বলে ঠিক করল। নান্নি জান দয়ানন্দকে খাবার সরবরাহকারী বাবুর্চিকে ঘুষ দিয়ে তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিল।২৯ শে সেপ্টেম্বর রাতে খাবার খেয়ে ঋষি ঘুমোতে শুলেন।কিছুক্ষন পর অসহ্য ব্যাথায় জেগে উঠলেন তিনি।তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর খাবারে বিষ মেশানো হয়েছে।রাজা তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকলেন।তাঁর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে উঠল।তাঁর ব্যাথা এতই তীব্র হয়ে উঠল যে বাবুর্চি অনুশোচনায় থাকতে না পেরে তাঁর কাছে নিজের দোষের কথা স্বীকার করল।দয়ানন্দজী সেই বাবুর্চিকে ক্ষমা করে দিলেন এবং নিজের গচ্ছিত শেষ সম্পদ অল্প কিছু অর্থ তার হাতে দিয়ে তাকে সেখান হতে পালিয়ে যেতে বললেন,নাহলে যে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন!!!এভাবে মৃত্যুর আগেও উজ্জ্বল মহানুভবতার দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি!!!
এই বিষক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে প্রায় এক মাস পরে ২৬ শে অক্টোবর,১৮৮৩ সালে তিনি দেহত্যাগ করলেন।
সারাজীবন দয়ানন্দ ছিলেন যুক্তি ও প্রমাণের অটল বিশ্বাসী।তিনি যুক্তিহীন কোন কথাতেই কখনো বিশ্বাস করতেন না,সেটা তথাকথিত শাস্ত্রবাণী ই হোক আর যাই হোক।এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণনা করা যাক।একবার তিনি প্রাচীন ভারতের মানবদেহের অঙ্গসংস্থান(এনাটমি) নিয়ে লেখা একটি শাস্ত্র পড়ছিলেন।পড়ার কিছুদিন পর দেখলেন নদীতে একটি লাশ ভাসছে,হয়তো দুর্ভিক্ষ বা অন্য কোন কারনে কোন মৃত্যুজনিত লাশ হয়ত!মহর্ষি উদীচ্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান,রক্ত-মাংস খাওয়া বা ধরা তাঁর কল্পনার বাইরের কর্ম।কিন্তু না,তিনি এগিয়ে গিয়ে নদী থেকে লাশটা তুলে আনলেন।এর ব্যাবচ্ছেদ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন এর ভেতরের অংশগুলি।দেখলেন অনেককিছুই মিলছে না সেই শাস্ত্র এর বর্ণনার সাথে।তৎক্ষণাৎ সেই শাস্ত্র তিনি ছুঁড়ে মারলেন নদীর জলে যা তৎকালীন সময়ে কোন ধর্মীয় পণ্ডিতের চিন্তারও বাইরে!!!
তাঁর এই অনন্য গুনের কারনেই দেশী বিদেশী অসংখ্য পণ্ডিত ব্যাক্তিবর্গ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন।এদের মধ্যে লন্ডনে India House এর প্রতিষ্ঠাতা শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মা ,লালা রাজপুত রাই, বিনায়ক দামোদর সর্বাকর,মদন লাল ঢিংরা,রাম প্রসাদ বিসমিল,মহাদেব গোবিন্দ রানাদে,ম্যাডাম ক্যামা,সুভাষ চন্দ্র বোস,শ্রী সত্যমূর্তি,পণ্ডিত লেখরাম,মহাত্মা হংসরাজ,রাজীব দিক্ষীত।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গুণমুগ্ধদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ,ঋষি অরবিন্দ,রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণান,বল্
লভভাই প্যাটেল,শ্যাম প্রসাদ মুখারজি উল্লেখযোগ্য।
আমেরিকান দার্শনিক এন্ড্রু জ্যাকসন ডেভিস মহর্ষিকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
এছাড়া বিখ্যাত স্কটিশ লেখক নিনিয়ান স্মার্ট, ব্রিটিশ লেখক বেঞ্জামিন ওয়াকার প্রমুখ তাঁর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন।
তাঁর অমোঘ বাণী এখনও আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায়,
“হে প্রিয় ভারতবাসী,আমি তোমাদের কাছে নতুন কোন ধর্ম প্রচার করতে আসিনি,আমি আসিনি কোন নবী বা অবতার সাজতে,আমি শুধু তোমাদের সেই পবিত্র বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যা প্রিয় আর্যভুমির সহস্র বছরের গ্লানিতে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিল!”

Back to The Vedas

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.