~~~প্রথম~~~
।। বোমনগরের কথা।।
বঙ্গেশ্বরী বিশালাক্ষী সদৃশা, চন্ডী স্বরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া । বহিরঙ্গে তিনি দুর্গার রূপভেদ । আবার পুজোর সময় তিনি রাজবল্লভী নামে সম্বোধিতা হন।
রাজবল্লভী ও বঙ্গেশ্বরী দুই অঙ্গে একই রূপ বা দুই ভগিনী স্বরূপা। দেবীর নাম করন একান্ত মৌলিক। হুগলি জেলার অন্য অন্য দেব-দেবী সন্ধান পাওয়া যায় না ।
তড়া- আঁটপুর এর নিকট বোমনগর গ্রামে অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা বঙ্গেশ্বরী ।তিনি মাতৃস্বরূপা , আশ্চর্য লোক দেবী। পর্চায় উল্লেখিত হয়েছে “শ্রী শ্রী বঙ্গেশ্বরী মাতা ঠাকুরানি ” রূপে। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে আঁটপুরের প্রসিদ্ধ মিত্র বংশ কতৃক তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন বোমনগর গ্রামে।
বোমনগরে জনশ্রুতি আছে যে, জমিদার জগৎ মিত্রের নামানুসারে গ্রামের নাম পূর্বে জগৎনগর ছিল। মতান্তরে বধর্মান রাজ জগৎ রায়ের নামানুসারে গ্রামের নাম ছিল জগৎনগর। সময়কাল ১৭০০ – ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ। গ্রামের নাম পরিবর্তনের কারণ জানা যায় না ।জনশ্রুতি, একদা দেবী বিগ্রহ নির্মাণের পর দেবীকে কাঁধে করে জঙ্গিপারা থেকে আঁটপুর এ নিয়ে আসছিলেন নিযুক্ত বাহকেরা । পথি মধ্যে এই স্থানে বাহকের দল দেবীকে কাঁধ থেকে নামিয়ে গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিশ্রামান্তে দেবীকে বহন করার জন্য পুনরায় কাঁধে তোলার চেষ্টা করলে আশ্চর্যজনকভাবে তারা ব্যর্থ হন। এই সংবাদ মিত্রবাড়িতে পৌঁছলে দেবীর স্বপ্নাদেশ মত তাঁকে বোমনগর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
কুলগুরুর নির্দেশে দেবীর নামকরণ করা হয় বঙ্গেশ্বরী। নামকরণ অভিনব তাতে কোন সন্দেহ নেই। গ্রামের নামটিও বড় অদ্ভুত – বোমনগর। “ব” এর সঙ্গে “য ফলা” দেওয়া নিয়ে বিশেষ মতান্তর রয়েছে। সেক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়ায় ব্যোমনগর। আবার লিখিত আকারে বমনগর শব্দটিও পাওয়া যায়। এই বিচিত্র নামকরণ এর উৎস জানতে পারা যায়না। বঙ্গনগর >বোঙনগর> বোম নগর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেবী বঙ্গেশ্বরী গ্রামের নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়েন।
ভিন্ন মতে, আঁটপুর ও তার প্রতিবেশী গ্রামগুলিতে (বোমনগর সহ)একসময় তাঁত শিল্পের রমরমা ছিল। আজও আঁটপুর সহ কয়েকটি গ্রামে তাঁতীদের বসবাস লক্ষ্য করা যায় । তাই বেমনগর থেকে বোমনগর হয়ে থাকতে পারে। কারণ বেম শব্দটির তন্তুবয়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শব্দ, অর্থাৎ “মাকু” যার সাহায্যে তাঁত বোনা হয় ।
আবার ব্যোম শব্দটির অর্থ হলো আকাশ। পঞ্চভূতের একটি অঙ্গ হল ব্যোম – যার গুন হল শব্দ। ব্যোম তন্ত্রর হঠযোগ আশ্রিত শব্দ । আঁটপুরের মিত্র বংশের অনেকেই একসময় তন্ত্র মতে চন্ডী পূজা করতেন । বিষয়টি এই বিচিত্র গ্রামের নামের উৎসের কারণ হতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
যাই হোক, গ্রামে কুলদেবী বঙ্গেশ্বরী ছাড়াও রয়েছেন শীতলা, পঞ্চানন ও ডোম পূজিত ধর্মরাজের মন্দির । এই সব দেব দেবীর গাজন হয়। মন্দিরের পাশ দিয়ে চলে গেছে হরিপাল জাঙ্গিপাড়া রোড। তড়া মোড়ের কাছে রাস্তার দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে । একটি অংশ চলে গেছে বলা হয় দক্ষিণের জঙ্গিপারা এবং অন্যটি সামান্য আঁটপুর ছুঁয়ে চলে গেছে রাজবলহাটের অভিমুখে।
দুর্গেশনন্দিনী
(ক্রমশ)