বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা — এক অনুপম সাহিত্যরস

১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হল বিদ্যাসাগর প্রণীত কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্’ নাট্য-কাহিনীর বাংলা অনুবাদ ‘শকুন্তলা’। বিদ্যাসাগর কালিদাস সম্পর্কে এতটাই উচ্চভাব পোষণ করতেন যে, এই নাটক সম্পর্কে বলেছিলেন এক ‘অলৌকিক পদার্থ’; বলেছিলেন, “মনুষ্যের ক্ষমতায় ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট রচনা সম্ভবিতে পারে না।”

কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্’ নাটকটি সাত অঙ্কে বিভক্ত; বিদ্যাসাগর মূল নাটকের আখ্যানভাগকে গদ্যরচনা হিসাবে রূপান্তরিত করেছিলেন সাতটি পরিচ্ছেদে। সংলাপকে বিবৃতির ধরনে রূপান্তরের জন্য নিজেই অনেকাংশে প্রযোজকের ভূমিকা গ্রহণ করলেন। চেষ্টা করলেন নাটকীয়তার সংবেগ, ভাবগাম্ভীর্য যতটা সম্ভব রক্ষা করা যায়। একটি সংস্কৃত নাটককে অনুবাদ করলেন একটি প্রাদেশিক ভাষায়, যা তখনও ঠিকমতো পরিণতি লাভ করে নি, যে প্রকাশ রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ; তিনি নিজেও সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, “বস্তুতঃ, বাঙ্গালায় এই উপাখ্যানের সঙ্কলন করিয়া, আমি কালিদাসের ও অভিজ্ঞানশকুন্তলের অবমাননা করিয়াছি। পাঠকবর্গ! বিনীত বচনে আমার প্রার্থনা এই, আপনারা যেন, এই শকুন্তলা দেখিয়া, কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলের উৎকর্ষপরীক্ষা না করেন।”

উপরের বক্তব্য যে বিদ্যাসাগর মশাই-এর একান্তই বিনয়বার্তা, সে সাহিত্য যারা পাঠ করেছেন এবং কালিদাসের মূলগ্রন্থ পাঠের অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারা অবশ্যই বুঝে থাকবেন। আজ বিদ্যাসাগরের ২০০ তম জন্মদিনে বিদ্যাসাগর প্রণীত ‘শকুন্তলা’ রচনার কিয়দংশ আলোচনা করবো।

শকুন্তলা’-র প্রথম পরিচ্ছেদ শুরু হচ্ছে এই ভাবে, “অতি পূর্ব কালে, ভারতবর্ষে দুষ্মন্ত নামে সম্রাট ছিলেন। তিনি একদা বহুতর সৈন্যসামন্ত সমভিব্যাহারে মৃগয়ায় গিয়াছিলেন। একদিন মৃগের অনুসন্ধানে বনমধ্যে ভ্রমণ করিতে, এক হরিণশিশুকে লক্ষ্য করিয়া, রাজা শরাসনে শরসন্ধান করিলেন। হরিণশিশু তদীয় অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া প্রাণভয়ে দ্রুতবেগে পলাইতে আরম্ভ করিল। রাজা রথারোহণে ছিলেন, সারথিকে আজ্ঞা দিলেন, মৃগের পশ্চাৎ রথচালন কর। সারথি কশাঘাত করিবামাত্র অশ্বগণ বায়ুবেগে ধাবমান হইল। কিয়ৎ ক্ষণে রথ মৃগের সন্নিহিত হইলে, রাজা শরনিক্ষেপের উপক্রম করিতেছেন, এমন সময়ে দূর হইতে দুই তপস্বী উচ্চৈস্বরে কহিতে লাগিলেন, মহারাজ! এ আশ্রমমৃগ, বধ করিবেন না, বধ করিবেন না।…. আপনকার বাণ অতি তীক্ষ্ণ ও বজ্রসম, ক্ষীণজীবী অল্পপ্রাণ মৃগশাবকের উপর নিক্ষিপ্ত হইবার যোগ্য নহে। শরাসনে যে শর সংহিত করিয়াছেন, আশু তাহার প্রতিসংহার করুন। আপনকার শস্ত্র আর্তের পরিত্রাণের নিমিত্ত, নিরপরাধের প্রহারের নিমিত্ত নহে।”

এরপর দেখা যায় রাজা লজ্জিত হচ্ছেন, শর সংবরণ করছেন; তপস্বীরা হাত তুলে রাজাকে পুত্রলাভের আশীর্বাদ করছেন সসাগরা সদ্বীপা পৃথিবীর অদ্বিতীয় অধিপতি হবেন, এই মর্মে। রাজা ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ শিরোধার্য করলেন। তাপসেরাই রাজাকে দেখালেন মালিনী নদীর তীরে মহর্ষি কণ্বের আশ্রম, বললেন সেখানে অতিথি সৎকার স্বীকার করার। আশ্রমে তখন মহর্ষি নেই; তনয়া শকুন্তলার হাতে অতিথিসৎকারের ভার দিয়ে সোমতীর্থ প্রস্থান করেছেন তিনি। কিন্তু রাজা আশ্রমের উৎপীড়ন হতে পারে — এই চিন্তা করে রথ ও সারথিকে অপেক্ষা করতে বলে, নিজে রাজবেশ সারথিহস্তে সমর্পণ করে তপোবনে প্রবেশ করলেন। কিঞ্চিৎ গমন করলে স্ত্রীলোকের আলাপ শুনতে পেলেন তিনি, দেখতে পেলেন তিনটি অল্পবয়স্কা তপস্বী কন্যা। তার বিবরণ দিয়ে বিদ্যাসাগর লিখছেন, “তাঁহাদের রূপের মাধুরী দর্শনে চমৎকৃত হইয়া, কহিতে লাগিলেন, ইহারা আশ্রমবাসিনী; ইহারা যেরূপ, এরূপ রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই। বুঝিলাম, আজ উদ্যানলতা সৌন্দর্যগুণে বনলতার নিকট পরাজিত হইল।…. শকুন্তলা, অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা নামে দুই সহচরীর সহিত, বৃক্ষবাটিকাতে উপস্থিত হইয়া আলবালে জলসেচন করিতে আরম্ভ করিলেন।….. রাজা দেখিয়া শুনিয়া, প্রীত ও চমৎকৃত হইয়া, মনে মনে কহিতে লাগিলেন, এই সেই কণ্বতনয়া শকুন্তলা। মহর্ষি অতি অবিবেচক; এমন শরীরে কেমন করিয়া বল্কল পরাইয়াছেন। অথবা যেমন প্রফুল্ল কমল শৈবলযোগেও বিলক্ষণ শোভা পায়; যেমন পূর্ণ শশধর কলঙ্কসম্পর্কেও সাতিশয় শোভমান হয়; সেইরূপ এই সর্বাঙ্গসুন্দরী বল্কল পরিধান করিয়াও যারপরনাই মনোহারিণী হইয়াছেন। যাহাদের আকার স্বভাবসিদ্ধ সৌন্দর্যে সুশোভিত তাহাদের কি না অলঙ্কার কার্য করে।”

শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত
বিদ্যাসাগর তাঁর ‘শকুন্তলা’ গদ্যে সখী অনসূয়ার মুখে জন্মের কাহিনী বর্ণনা করেছেন, “শুনিয়া থাকিবেন, বিশ্বামিত্র নামে এক অতি প্রভাবশালী রাজর্ষি আছেন। তিনি একদা গোমতী নদীর তীরে অতি কঠোর তপস্যা করিতে আরম্ভ করেন। দেবতারা সাতিশয় শঙ্কিত হইয়া রাজর্ষির সমাধিভঙ্গের নিমিত্ত মেনকানাম্নী অপ্সরাকে পাঠাইয়া দেন। মেনকা তদীয় তপস্যাস্থানে উপস্থিত হইয়া মায়াজাল বিস্তৃত করিলে মহর্ষির সমাধিভঙ্গ হইল। বিশ্বামিত্র ও মেনকা আমাদের সখীর জনক ও জননী। নির্দয়া মেনকা, সদ্যঃপ্রসূতা তনয়াকে পরিত্যাগকরিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিল। আমাদের সখী সেই বিজন বনে অনাথা পড়িয়া রহিলেন। এক শকুন্ত কোন অনির্বচনীয় কারণে স্নেহের বশবর্তী হইয়া পক্ষপুট দ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক আমাদের সখীর রক্ষণাবেক্ষণ করিতে লাগিল। দৈবযোগে তাত কণ্ব পর্যটনক্রমে সেই সময়ে সেই স্থানে উপস্থিত হইলেন। সদ্যঃপ্রসূতা কন্যাকে তদবস্থ পতিত দেখিয়া তাঁহার অন্তঃকরণে কারুণ্যরসের আবির্ভাব হইল। তিনি তৎক্ষণাৎ আশ্রমে আনিয়া স্বীয় তনয়ার ন্যায় লালন পালন করিতে আরম্ভ করিলেন; এবং প্রথমে শকুন্ত লালন করিয়াছিল, এই নিমিত্ত নাম শকুন্তলা রাখিলেন।

কাশীরাম দাসের মহাভারতে শকুন্তলার উপাখ্যানে (আদিপর্ব) কন্যা নিজেই তার জন্মবৃত্তান্ত উপস্থাপন করেছেন, কাব্যগুণে তা রমণীয় হয়ে উঠেছে —
বিশ্বামিত্র মুনি জান বিখ্যাত সংসারে।
চিরদিন তপস্যা করেন অনাহারে।।
তাঁর তপ দেখি কম্পমান পুরন্দর।
আমার ইন্দ্রত্ব লবে এই মুনিবর।।
সর্ব দেবগণ মিলি ভাবে নিরন্তর।
মেনকারে ডাকি বলে দেব পুরন্দর।।
রূপ গুণে তব তুল্য নাহি ত্রিভুবনে।
মম কার্য্য সিদ্ধ কর আপনার গুণে।।”
ইন্দ্রের অনুরোধে বিষণ্ণ হলেন অপ্সরী মেনকা; হাতজোড় করলেন তিনি; জানালেন, ক্রোধী তপস্বী বিশ্বামিত্র, ক্ষত্রিয় কূলে জন্ম নিয়েও তিনি ব্রাহ্মণ, যাঁর তপস্যাকে ভয় করছেন আপনি স্বয়ং, তাঁর তপ নষ্ট করে এমন সাহস কার আছে? “তাঁর তপ নষ্ট করে হেন কোন্ জন।/কর্ম না হইবে, হৈবে আমার মরণ।।/অগ্নি সূর্য সম তেজ লোচন যুগলে।/তাঁহার তপস্যা ভঙ্গ করি কোন্ ছলে।।” কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্রও নাছোড়। অবশেষে হেমন্ত পর্বতে গেলেন মেনকা যেখানে বিশ্বামিত্র মুনি ধ্যানরত।মুনিকে দেখে যথারীতি ভয়ে কেঁপে উঠলেন তিনি। এবং অতিশয় সুবেশা বিদ্যাধরী হয়ে মুনির কাছে মায়ার খেলা খেললেন। ইন্দ্রের বরে মেনকা কামদেব আর পবনদেবের সহায়তা লাভ করেছেন। এইবেলা অতি খরতর বায়ুবেগে মেনকার অঙ্গবস্ত্র উড়িয়ে দিলেন পবনদেব; ব্যতিব্যস্ত হয়ে বস্ত্র ধরে আছেন মেনকা আর বিভিন্ন প্রকারে নিন্দামন্দ করছেন পবনকে। এদিকে মুনিবর যাবতীয় কৌতুক দেখছেন আর কামের দেবতা মদনের পঞ্চশরে ধীরেধীরে আহত হচ্ছেন। কাশীদাসী মহাভারতে আছে সে কথা, “মেনকা ধরিয়া মুনি গেল নিজ দেশ।/কামে মত্ত নিত্য করে শৃঙ্গার বিশেষ।।/হেনমতে বহুদিন গেল ক্রীড়ারসে।/তপ জপ সকল ত্যজিল কামবশে।।” একদিন সন্ধ্যা-আহ্নিক করার জন্য মেনকার কাছে জল চাইলেন মুনি, কিন্তু মেনকার রসিকতায় প্রবল কুপিত হলেন। “শুনিয়া মেনকা হাসি বলিল বচন।/এতদিনে ভাল সন্ধ্যা হইল স্মরণ।।/এত শুনি মুনি হৈল কুপিত অন্তর।/দেখিয়া মেনকা ভয়ে পলায় সত্বর।।” পথে মুনির ঔরসজাত কন্যা প্রসব করলেন মেনকা অরণ্যের গভীরে, আর সেই নির্জন কাননেই তাকে ফেলে চলে গেলেন স্বস্থানে। এরপরেই কণ্বমুনি তাকে দেখতে পেলেন। দুষ্মন্তকে সেই কথা শকুন্তলা জানাচ্ছেন, “তপস্যা করিতে গেল কণ্ব সেই বনে।/অনাথা দেখিয়া তাঁর দয়া হৈল মনে।।/গৃহে আনি পালন করিল মুনিবর।/তাই আমি তাঁর কন্যা, শুন দণ্ডধর।।”

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘শকুন্তলা’ কাহিনীতে লিখেছেন সেই কথা। “শকুন্তলা সেই তপোবনে, সেই বটের ছায়ায় পাতার কুটিরে মা-গৌতমীর কোলে-পিঠে মানুষ হতে লাগল। তারপর শকুন্তলার যখন বয়স হল তখন তাত-কণ্ব পৃথিবী খুঁজে শকুন্তলার বর আনতে চলে গেলেন। শকুন্তলার হাতে তপোবনের ভার দিয়ে গেলেন। শকুন্তলার আপনার মা-বাপ তাকে পর করলে, কিন্তু যারা পর ছিল তারা তার আপনার হল। তাত-কণ্ব তার আপনার, মা-গৌতমী তার আপনার, ঋষি বালকেরা তার আপনার ভাইয়ের মতো।” এমনকি আশ্রমের গাইবাছুর, বনের লতাপাতা, প্রিয়সখী অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা তার আপনার হল; আপনার হল মা-হারা এক চঞ্চল হরিণ শিশু। তিন সখীতে মিলে সামলায় ঘরের কাজ, অতিথি-সেবার কাজ, আশ্রম-উদ্যানে সেচ দেবার কাজ, সহকারে মল্লিকালতার বিয়ে দেবার কাজ। মাধবীলতায় জল দেয় তারা, আর ভাবে লতা পুষ্পবতী হলেই শকুন্তলার বর আসবে। হ্যাঁ, সে বরই তো স্বয়ং বিবাহ করতে এলেন তপোবনে!

বিদ্যাসাগরের লেখায় পাচ্ছি, কণ্বতনয়া শকুন্তলা তপোবনে জলসেচন করছেন। রাজা দেখছেন; তিনি প্রীত, চমৎকৃত। রাজা দেখছেন শকুন্তলার অধরে নবপল্লবের শোভা, বাহুদ্বয়ে কোমল বিটপের বিভূষণ, যৌবনের কুসুমরাশি সর্বাঙ্গে ব্যাপ্ত। এই সৌন্দর্য নিয়ে তিনি নব কুসুমে সুশোভিতা নবমালিকা নিরীক্ষণ করছেন হয়তো খুঁজছেন আপন অনুরূপ বর। কেমন করে সে সহকারের সঙ্গে সমাগতা, সহকারও কেমন ফলভারে অবনত৷ দেখছেন আপন বিবাহের শুভসূচক মাধবীলতার মুকুল-নির্গম দৃশ্য। হঠাৎ কুসুম ভ্রমে এক মধুকর শকুন্তলার মুখকমল পরিভ্রমণ করে উপবিষ্ট হবার উপক্রম করলো। পরিত্রাণ চাইছেন তিনি, সখীরা বলছেন, দুষ্মন্ত স্মরণ করতে

এমনি সময় রাজা শকুন্তলা, অনুসূয়া ও প্রিয়ংবদার সম্মুখে উপস্থিত হবার সুবর্ণ সুযোগ পেলেন। তপস্বীকন্যারা অতিশয় সঙ্কুচিত; শকুন্তলা লজ্জায় জড়ীভূতা, নম্রমুখী। তারা একত্রে সপ্তপর্ণবেদীতে উপবিষ্ট হলেন। তাপসকন্যাদের সৌহার্দ্য রাজার কাছে অতিশয় রমণীয় হল। সুহৃদের মতো মধুর আলাপে রাজা রত হলেন। রাজা ও শকুন্তলা পরস্পরকে দেখে অনবধানে চিত্ত চাঞ্চল্য প্রকাশ করে ফেললেন। রাজার কৌতূহলে এবং আগ্রহে সখী অনসূয়া প্রিয় সখীর জন্মবৃত্তান্ত বললেন। রাজা জন্মবৃত্তান্ত শুনে বুঝলেন এ জ্যোতির্ময় বিদ্যুৎ, এ রূপ-লাবণ্য অলৌকিক। আলাপচারিতায় বুঝলেন শকুন্তলা-লাভ নিতান্ত অসম্ভব নয়। আপন অঙ্গুরীয় সখীদের দিয়ে পল্বল থেকে জল আনায় ঋণমুক্তি করলেন শকুন্তলাকে। তার অন্তঃকরণে তখন অনুরাগসঞ্চার, রাজার নয়নে নয়ন সঙ্গতি হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন

আলাপচারিতার মধ্যেই মহান কোলাহল উত্থিত হল। মৃগয়াবিহারী রাজার সমভিব্যাহার তপোবনেকে শঙ্কিত করে তুললো। অতঃপর রাজা সমস্ত সৈন্য সামন্ত বিদায় করে তপস্বি-কার্যের অনুরোধে তপোবনে অবস্থান করলেন। তিনি তখন শকুন্তলাচিন্তায় একান্ত মগ্ন, অন্য কোনো বিষয়ে মনের সুখ নেই। কোথায় গেলে শকুন্তলাকে দেখতে পান, কেবল এই চিন্তা। তপোবনবাসীদেরও আপন অভিসন্ধি বুঝতে দেন না। শকুন্তলাও রাজদর্শনদিবস অবধি বিরহবেদনায় সাতিশয় কাতর। রাজা নিরন্তর অন্তরতাপে তাপিত, শরীর বিবর্ণ। এমনি অবস্থায় শকুন্তলা সখী সামর্থ্যে পুষ্পের মধ্যে দিয়ে রাজার কাছে প্রণয়পত্রিকা প্রেরণের জন্য পদ্মপত্রে লিখলেন৷ সখীদের কাছে পড়লেন সেই পত্রিকা, “হে নির্দয়! তোমার মন আমি জানি না, কিন্তু আমি, তোমাতে একান্ত অনুরাগিণী হইয়া নিরন্তর সন্তাপিত হইতেছি।” রাজ অন্তরাল থেকে শুনে সম্মুখে এলেন, বললেন, “তুমি সন্তাপিত হইতেছ, যথার্থ বটে; কিন্তু, বলিলে বিশ্বাস করিবে না, আমি এক বারে দগ্ধ হইতেছি।” এবার কর্মোপলক্ষে দুই সখী স্থানত্যাগ করলে রাজা শকুন্তলার হাত ধরলেন।…..

(ক্রমশঃ)
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। (Dr. Kalyan Chakraborty)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.