‘সাধুহত্যা ও স্বামী বিবেকানন্দ’

সাধুকে মারা সে তো দারুণ ব্যাপার! সাধু না ঈশ্বরের প্রতিনিধি! ভগবানের ভরসায় সে নাকি সব কিছু ত্যাগ করেছে! তাহলে, সাধুকে মারতে পারা মানে তো সেই ভগবানকেই মারা। তাঁকেই আঘাত দিতে পারা। তাই সাধুকে মারার মজাই আলাদা! এ এক অন্যরকম বিজয়! –এমনটা ভেবেই হয়ত বিজয়ীর হাসি হাসছে সেই দুর্বৃত্তেরা, যারা মহারাষ্ট্রের পালঘরে পিটিয়ে হত্যা করল দুই সাধুকে। কিন্তু, তোমরা বোধহয় জাননা, সাধুর শরীর চিন্ময় শরীর। সাধুকে মারা যায় না। তিনি অমর।
আপনারা জানলে অবাক হবেন, স্বামী বিবেকানন্দকেও (Swami Vivekananda) হত্যা করবার নানাবিধ চেষ্টা হয়েছিল। তাঁর আত্মকথা-“ একদিন হিমে আমার হাৎ আড়ষ্ট হয়ে গেল। এই ঘোরতর শীতপ্রধান দেশে ( আমেরিকায়) আমি যে কি করব ভেবে পেলাম না। কারণ আমি যদি রাস্তায় বের হই, সঙ্গে সঙ্গে জেলে পাঠিয়ে দেবে। তখন আমার নিকট শেষ সম্বল কয়েকটা ডলার। আমি মাদ্রাজে তার করলাম। থিওজফিস্টরা জানতে পেরে লিখল- ‘ শয়তানটা শীঘ্র মরবে- ঈশ্বরেচ্ছায় বাঁচা গেল।’”
কিন্তু বিবেকানন্দ মরলেন না।
স্বামীজী লিখছেন- ‘ যেদিন ধর্মমহাসভায় আমি প্রশংসা পেলাম, যেদিন চিকাগোয় আমি জনপ্রিয় হলাম, সেদিন হতে আমার একজন স্বদেশবাসী অপ্রকাশ্যে আমার অনিষ্টাচরণ করতে, আমাকে অনশনে মেরে ফেলতে, আমেরিকা থেকে লাথি মেরে তাড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন। ’


কিন্তু এতেও বিবেকানন্দ মরলেন না
কতগুলি বেপরোয়া উগ্রপ্রকৃতির cowboy স্বামীজীকে তাদের গ্রামে ডাকল। স্বামীজী গেলেন। তারা স্বামীজীকে একটা কাঠের টবের উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে বললেন। এমন সময় তারা শোঁ শোঁ করে তার কানের পাশ দিয়ে গুলি ছুঁড়তে লাগলো। স্বামীজী একটুও বিচলিত হলেন না। ছেলেগুলি অবাক হয়ে বলল-‘ সাচ্চা আদমী বটে!’
ডেট্রয়েট শহরে একদিন স্বামীজী ভোজন শেষে স্বামীজী কফিতে চুমুক দিতে যাচ্ছেন। হঠাৎ তিনি পাশে শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করেন। তিনি স্বামীজীকে সাবধান করে বললেন- ‘ খাসনে ওতে বিষ।’


বিবেকানন্দ (Vivekananda) মরলেন না।

বস্টনের একটা ঘটনা। স্বামীজীর পরনে ছিল গৈরিকবর্নের কোট ও মাথায় পাগড়ি। শহরের জনাকীর্ন পথ দিয়ে হেঁটে চলেছেন স্বামীজী, হঠাৎ তিনি বুঝলেন যে বহু মানুষ তাঁর পিছু নিয়েছে। তারপর কি একটা তাঁর কাঁধে আঘাত করল। স্বামীজী দৌড়তে শুরু করলেন এবং একটা বাঁকের মাথায় অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়লেন। ক্ষিপ্ত জনতা সামনে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল।


বিবেকানন্দ (Vivekananda) মরলেন না। বিবেকানন্দ মরেন না। সাধু মরেন না। সাধু একটি আদর্শ। সাধু একটি পথ। দেশের জন্য, জাতির জন্য, ধর্মের জন্য, সমগ্র মানবজাতির জন্য পরম করুণায় বিগলিত সাধুর দেহ চিন্ময় দেহ।
সাধু জেগে থাকেন আমাদের হৃদয়ে, আমাদের প্রানের স্পন্দনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.