কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্তটা অবশেষে নিয়েই ফেললেন কংগ্রেস সুপ্রিমো রাহুল গান্ধী। এত জায়গা থাকতে কেরল কেন? যেখানে রায়বেরিলি, আমেঠির মতো গান্ধী পরিবারের গড় রয়েছে, উপরন্তু মায়া-অখিলেশ যখন এসব ক্ষেত্রে প্রার্থী না-ও দিতে পারেন, স্রেফ আমেঠিতে লড়বার ঝুঁকি রাহুল তখনও নিতে পারলেন না কেন? গত লোকসভা নির্বাচনেই স্মৃতি ইরানি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন আমেঠিতে রাহুল মোটেই নিরাপদ নয়। এসব কথা একটা বাচ্চা ছেলেও জানে। কিন্তু মূল প্রশ্নটা অন্য জায়গায়—এত কেন্দ্র থাকতে কেরল কেন? আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসের মুখপাত্র জানিয়েছেন ওয়েনাড কেন্দ্রটি কেরলে, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের সংযোগস্থলে। তাই নাকি দক্ষিণ ভারতে ভালো ফলের আশায় রাহুল সেখানে দাঁড়িয়েছেন।
এসব ছেলেভুলানো কথায় পারতপক্ষে কেউ বিশ্বাস করবে না। গত লোকসভা নির্বাচনেই তামিলনাড়ু থেকে কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। কর্ণাটকে কীভাবে কংগ্রেস-সেকুলার জনতা দলের সরকার চলছে সকলেরই জানা। মোদ্দা কথা, তামিলনাড়ু-কৰ্ণাটক থেকে কংগ্রেসের ঝুলি যে এবার প্রায় শূন্য থাকছে তা নিশ্চিত। বাকি রইল কেরল। কেরলের নির্বাচনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হলো পাঁচ বছর অন্তর রাজনৈতিক ক্ষমতার বদল। সিপিএমের পিনারাই বিজয়নের সরকার চলার দরুন কেরল বিরোধী পক্ষ কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট এমনিতেই কিছুটা সুবিধেজনক জায়গায়।
কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্যত্র। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শরবীমালায় সাধারণ হিন্দুদের ‘সেন্টিমেন্ট’ নিয়ে যে রাজনৈতিক খেলা সিপিএম সরকার খেলেছে, তাতে ‘অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সির’ সঙ্গে সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়া-পায়ের তলার মাটি ক্রমশ আলগা হচ্ছে সিপিএমের। আর সেই জায়গায় ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি। ওয়েনাড লোকসভা আসনটি গঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালে এরপর থেকে দু’দুবার অর্থাৎ ২০০৯ ও ২০১৪ সালে কংগ্রেসের এম আই শানাভাস সেখানে জয়ী হন। শানাভাস গত বছরের শেষে প্রয়াত হন, তারপর থেকে আসনটি ফাঁকাই পড়ে আছে।
সুতরাং রাহুল গান্ধীর অঙ্ক খুব পরিষ্কার। একদিকে মৃত সাংসদের প্রতি সহমর্মিতা, অন্যদিকে কেরলের নির্বাচনী চরিত্র মোতাবেক সিপিএমের দুর্বলতর অবস্থান; আরেক পক্ষে মূলত মুসলমান ও কিছুটা খ্রিস্টান-অধ্যুষিত ওয়েনাডে শবরীমালা সূত্রে হিন্দু-ঝড়ের সম্ভাবনা কম তাই গোটা ভারতবর্ষে যে কয়েকটি হাতে গোনা আসনে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে ওয়েনাড অন্যতম এবং তাই রাহুল গান্ধীর মুখরক্ষার অন্যতম ভরসাও বটে। জরুরি অবস্থার পর অত্যাচারী শাসক হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল। তাঁর পৌত্রের অপরিপক্ক বিরোধী হিসেবেই সেই রেকর্ড ভেঙে দেওয়া থেকে আটকাতে আপাতত কেরলই গন্তব্য।
অনেকেই বলছেন সর্বভারতীয় স্তরে মোদী বিরোধী জোটে (মতান্তরে জটে)-র ক্ষেত্রে কেরলে সিপিএমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটা সেমসাইড গোল নয়তো? কিন্তু সকলেই জানেন এই জোট আসলে ধান্দাসর্বস্ব বিরোধীদের অস্তিত্ব বাঁচানোর তাগিদ। সুতরাং যে যেখানে জিতবেন বলে ভাবছেন সেখানে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বার প্রশ্ন নেই। সে গোল সেমসাইডেই হোক বা অফসাইডে।
আর এই সন্দেহও তো রয়েছে যে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক শক্তি কমিউনিস্টদের আদৌ কোনও প্রতিনিধি ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে থাকবেন কিনা! সেদিক দিয়ে রাহুল গান্ধী অবশ্যই নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতিতে সেফসাইডে থাকছেন।
বিশ্বামিত্রের কলম