মানবতার মুখোশে লক্ষ্য যাদের,অসহায় মানুষকে ধর্মান্তরিত করা

মানবতার মুখোশে লক্ষ্য যাদের,
অসহায় মানুষকে ধর্মান্তরিত করা

“মাদার তেরেসা সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষ যা জানেন, তা ভুল জানেন। ভেড়ার পালের মতো যেদিকে সব মানুষ যায়, সেদিকে যায় না এমন মানুষ খুব কম। পত্র-পত্রিকা তেরেসাকে ভালো বলছে, রেডিও টেলিভিশন ভালো বলছে, প্রতিবেশীরা ভালো বলছে, বড় বড় লোক ভালো বলছে, চেনা পরিচিতরা ভালো বলছে, সুতরাং তিনি ভালো-এই যুক্তি খুব কম লোক আছে যে মানেন না। মাদার তেরেসা যাকে লোকে সন্ত বলে জানে, মহামানবী বলে জানে, তিনি এক ধর্মান্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মহিলা। মানুষের যত সেবা তিনি করেছেন, সবই করেছেন নিজের জন্য, মানুষের জন্য নয়। নিজের আখের গুছিয়েছেন, নিজের সম্বল করেছেন। নিজের পূণ্য হবে বলে করেছেন। স্বর্গে ঠাঁই পাওয়ার জন্য করেছেন। মরণাপন্ন রোগীদের রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রমে বিছানা দিতেন মরার জন্য। জল চাইলে জল দিতেন। কিন্তু ওষুধ চাইলে ওষুধ দিতেন না। বাঁচতে চাইলে বাঁচতে দিতেন না। বাঁচানো তার কাজ ছিল না। তার কাজ ছিল মৃত্যর সময় রোগীদের বলা, প্রভু যীশু তোমাকে কষ্ট দিচ্ছেন, এই কষ্ট সহ্য করো, প্রভুকে খুশি করো। একবার এক প্রেস কনফারেন্সে নিজেই বলেছেন, উনত্রিশ হাজার রোগীকে জিজ্ঞেস করেছেন তারা যীশুর আশীর্বাদ চায় কী না, কেউ অস্বীকার করেনি। তিনি মুমূর্ষু রোগীদের খ্রিস্টান বানিয়েছেন। মিশনারির কাজই এই। মিশনারির এই কাজ করতেই তিনি ভারতে এসেছিলেন।”

কথাগুলি বলেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখিকা তসলিমা নাসরিন,”মাদার তেরেসা কি গরিবের বন্ধু ছিলেন?” নামক এক কলামে। কলামটি বাংলা ট্রিবিউন আগস্ট ২৯ , ২০১৬ প্রকাশিত হয়।তসলিমা নাসরিনের সুরে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছেন অরূপ চট্টোপাধ্যায় নামে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও চিকিৎসক। ১৯৫৮ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী অরূপ চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। তিনি মাদার তেরেসার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় খুব কাছে থেকেই দেখেছেন তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। সেই ব্যক্তিগত তথ্যের আলোকে তিনি মাদার টেরিজা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি (মাদার টেরিজা: না বলা কথা) গ্রন্থটি লিখে হইচই ফেলে দেন। এ গ্রন্থে মানবতা এবং নিঃস্বার্থপরতার প্রতীকরূপে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারিত ভাবমূর্তিকে তিনি প্রথম চেলেঞ্জ ছুড়ে দেন। তেরেসার বিরুদ্ধে অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম অভিযোগ ছিলো তিনি সেবার নামে অসহায় দুঃস্থ মানুষদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতেন। তেরেসার সবকিছুই ছিল খ্রিস্টান হবার শর্তে–সে খাবার হোক অথবা শোবার জায়গাই হোক।

দুর্নীতিবাজদের সাথে ঘনিষ্ঠতা:
দ্য মিশনারি পজিশন: মাদার টেরিজা ইন থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস নামক ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত ১২৮ পৃষ্ঠার প্রবন্ধ গ্রন্থে ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক ক্রিস্টোফার হিচেন্স তথ্য উপাত্তনির্ভর গবেষণায় উল্লেখ করেন, মাদার তেরেসা অনেক অসৎ ও কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ গ্রহণ করেছেন। যা তাকে বিভিন্ন সময়ে আলোচিত, সমালোচিত করে। মিশনারিজ অব চ্যারিটিকে এক মিলিয়ন ডলার অনুদানকারী চার্লস কিটিং ঋণ জালিয়াতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে মাদার তেরেসা কিটিং-এর পক্ষে বিচারককে এক চিঠি দিয়ে কিটিংকে শাস্তি না দিতে অনুরোধ করেছিলেন। এর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থা মাদার তেরেসাকে কিটিং এর ২৫২ মিলিয়ন ডলার ঋণ জালিয়াতির তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তেরেসাকে দান করা এক মিলিয়ন ডলার অনুদান ফেরত দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মাদার তাদের কথা রাখেননি। এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টোফার হিচেন্স তার বইতে উল্লেখ করেন,ক্ষমতাহীনের সাথে ক্ষমতাবানের লড়াইয়ে সবসময় ক্ষমতাবানের পক্ষ নিয়েছেন তেরেসা, যেমন ভোপালের বিপর্যয়ে ইউনিয়ন কার্বাইডের পক্ষ নিয়েছেন, রোনাল্ড রিগানের সমর্থন করেছেন, এমনকি নিকারাগুয়া গিয়ে সন্ডিস্টাদের বিরুদ্ধে টেরিজা সিআইএ-সমর্থিত কট্টরপন্থীদের সমর্থন দিয়েছেন।এমনকি দুর্নীতিবাজ দুভেলিয়েরের পরিবারের সাথে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিলো মাদার তেরেসার। কারণ তারা নিয়মিত ডোনেশন করত।

বিশ্ববিখ্যাত অধ্যাপক জার্মেইন গ্রিয়ার (জন্ম, ১৯৩৯) অস্ট্রেলিয়ার একজন খ্যাতিমান তাত্ত্বিক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক; যিনি গত শতাব্দীর শেষার্ধের একজন প্রধান নারীবাদী কণ্ঠ হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত।তিনি মাদার তেরেসাকে ‘ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী’ বলে বিভিন্ন সময়ে তীব্রতর সমালোচনা করেছেন।

নিম্নমানের চিকিৎসা সেবা:
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যাঞ্চেটের সম্পাদক রবিন ফক্স ১৯৯১ সালে কলকাতায় মাদার তেরেসার সেবাদান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে চিকিৎসার মানকে অগ্রহণযোগ্য ও অপরিচ্ছন্ন বলে তীব্র সমালোচনা করে। ফক্স বলেন, চিকিৎসাশাস্ত্রীয় বিদ্যা ছাড়াই মাদার তেরেসা এবং মিশনারিজ অব চ্যারিটি রোগীদের দেখাশোনা ও চিকিৎসা করে। চিকিৎসা সেবায় নিম্নমান নিয়ে ডা. অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি মনেকরি না তিনি সেবার ব্যাপারে খুব একটা যত্নশীল ছিলেন। তিনি ব্যবহৃত সিরিঞ্জগুলো পুনঃব্যবহার করতেন, যা কিনা একটি নীতি বহির্ভূত বিষয়।”রবিন ফক্স, অরূপ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও ক্রিস্টোফার হিচেন্স ২০১২ সালে মাদার তেরেসার ওপর লিখা “ধর্ম প্রচারকের অবস্থানে: তত্ত্ব ও চর্চার মধ্যে মাদার তেরেসা” নামক বইয়ে, কিছু ডাক্তারদের মিশনারিজ অব চ্যারিটি কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শনকালে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ব্যাপক ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন।অনেক বড় বড় অঙ্কের অনুদান পেয়েও মাদার তেরেসা তার প্রতিষ্ঠানে সেবার মান উন্নতিকরণে খুব একটা কিছুই করেননি বলে অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠেছে। তিনি নিজে কখনওই নিজের প্রতিষ্ঠানে সেবা বা চিকিৎসা নিতেন না। তিনি অধিকাংশ সময় সংরক্ষিত বিমানে বিশ্ব পরিভ্রমণে সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা নিতেন প্রথম শ্রেণীর বিশ্বসেরা হাসপাতালগুলিতে।

সন্ত নিয়ে মিথ্যাচার:
মাদার তেরেসাকে সন্ত উপাধি দিতে দুটি অলৌকিক ঘটনার কথা বলা হয়। এর মধ্যে একটি ভারতের।মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে কথিত হয়, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী এক নারীর জরায়ুর মুখে টিউমার থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাদার তেরেসার ছবির সামনে প্রার্থনা করতে করতে একদিন সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যায় মিশনারিজ অব চ্যারিটির এ বয়ানকে অনেকটাই মিথ্যা বলে বিভিন্ন মিডিয়ার সাক্ষাৎকার দেন রোগী। তাই সন্ত নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ করে ডা. অরূপ চট্টোপাধ্যায় মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মাননীয় পোপকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।

শিশু চুরির রমরমা ব্যবসা:
মাদার তেরেসা চ্যারিটি হোমগুলিতে শিশু চুরির অভিযোগ বহুদিনের। অভিযোগটি ধরা পরে সত্যে পরিণত হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। ঝাড়খণ্ডের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান রূপা কুমারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ১৪ বছর বয়সী এক শিশুকে বিক্রির অভিযোগে ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত মাদার তেরেসার প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অব চ্যারিটির এক নারী কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশের তদন্তের ভিত্তিতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য। তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসি সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে তথ্য দেয় তা গা শিউরে ওঠার মতো। ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচিতে অবস্থিত এই কেন্দ্র থেকে পুলিশ উত্তর প্রদেশের এক দম্পতীর শিশু কিনতে অগ্রিম টাকা হিসেবে মিশনারিজ চ্যারিটিকে দেয়া ১ লাখ ৪০ হাজার রুপিও উদ্ধার করে। এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারী সিডব্লিউসি চেয়ারম্যান রুপা কুমারি অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র রাঁচিতেই নয় অন্যান্য শহরেও ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার রুপিতে চ্যারিটির হোমগুলি থেকে শিশু বিক্রি হয় নিয়মিত। তাই শিশু চুরি থেকে রক্ষা করতে মিশনারির রাঁচি কেন্দ্রে থাকা ১৩ গর্ভবতী নারীকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয় সিডব্লিউসি।

নরকের দেবদূত :
মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৫ আগস্ট বর্তমান আলবেনিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন এবং ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৮৭ বছর বয়সে কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে চলে যান। মাদার তেরেসার বিভিন্ন মানবতার ছদ্মবেশী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে ১৯৯৪ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক তারিক আলি ও ক্রিস্টোফার হিচেন্স টেরিজার ওপর হেল’স এঞ্জেল (নরকের দেবদূত) শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন। তারা দেখিয়েছেন গরিবদের আজন্মকাল দুর্দশার উৎস হিসেবে ব্যবহার করে এ থেকে পরিত্রাণের জন্যে কট্টরপন্থী ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসকে ছড়িয়ে দিতে মাদার তেরেসা যতটা আগ্রহী ছিলেন, তার সামান্যতম আগ্রহ দরিদ্র অসহায়দের দারিদ্র্য লাঘবে আগ্রহী ছিলেন না।তার ছদ্মবেশী মানবতার মুখোশকে উন্মোচন করে দিয়ে অনেক বই আছে। পূর্বে উল্লেখিত দুইতিনটি বই ছাড়াও আগ্রহীরা পড়তে পারেন, প্রবীর ঘোষের লেখা- ‘যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা’ (দে’জ থেকে প্রকাশিত) এবং অমলেশ মিশ্রের লেখা- ‘টেরেসা আমাদের বদনাম করেছেন নিয়েছেন প্রচুর, দেননি কিছুই -এ বইগুলি।

পরিশেষে:
হিচেন্স এর বইতে পাওয়া যায় মাদার তেরেসা বিভিন্ন সময়ে কলকাতাকে দারিদ্র্যতার ‘নরককুণ্ড’ বলে উল্লেখ করতেন; নিজে সেই নরককুণ্ড থেকে সবাইকে ত্রাণ করছেন এটা বোঝাতে। বিষয়টিকে কোলকাতার মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যও আপত্তি করে বলেছিলেন, “কলকাতার দরিদ্র লোকদের উপর টেরিজার কোন উল্লেখযোগ্য কর্ম নেই।”কিন্তু এর পরেও অবাক হলাম দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মাদার তেরেসার ছবি। কালীঘাটে থেকেও, যাকে কালীঘাটের মাকালী সামান্য আকর্ষণ করতে পারেনি ; সেই তিনিই আছেন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে ছবি হয়ে বহাল তবিয়তে। কারণ তার মানবতার ছদ্মবেশে অসংখ্য গরিব অসহায় হিন্দু আদিবাসীকে ধর্মান্তরিতের কাহিনী আমরা কয়জনই বা পূর্ণাঙ্গরূপে জানি বা জানার চেষ্টা করি।

প্রাকৃতিক সুন্দরের অনন্য লীলাভূমি বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল। ২০১৬ সালে আগস্টের শেষ সপ্তাহে মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে, মনটা বিষাদে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।একদিকে চা শ্রমিকদের উপরে মালিকপক্ষের অমানবিক দাসসুলভ নিষ্ঠুর আচরণ দেখে হতবাক হই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিন খেটে তারা মজুরি পায় মাত্র ৬০ টাকার মত। অন্যদিকে এর সাথে আছে, খ্রিস্টান মিশনারিদের মানবতার মুখোশে নিষ্ঠুর ধর্মান্তরের দৌরাত্ম্য। গরিব আদিবাসী চা বাগান শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানলাম, কিভাবে অসহায় মানুষদের প্রতিনিয়ত ধর্মান্তরিত করছে মিশনারিরা। এক একটি পরিবারের ঘটনাগুলো শুনে হতবুদ্ধি হলাম যুগপৎ কষ্ট পেলাম।ভাবলাম বিষয়ে আমরা জানিনা, খোঁজ রাখিনা।বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণচক্রে ফেলে, শিশুদের দুপুরে মাংসের মত ভারি খাবার দেবার নাম করে, গরু বা ঘরের দুটো-চারটে টিন কিনে দেবার কথা বলে এবং এমন অসংখ্য মানবতাবাদীর ছদ্মবেশে মিথ্যা ছলা-কলাকে আশ্রয় করে বাগানে বসবাসকারী পরিবারদের ধর্মান্তরিত করছে। গরীব মানুষগুলোকে ধর্মান্তরিত বাস্তবায়নে করছে বড় পরিকল্পনা। চা শ্রমিক,তাদের নেতা এবং আমাকে গাইড দেয়া স্থানীয় কিছু যুবকদের কাছে শত-শত প্রবঞ্চনার কাহিনীগুলো শুনে চোখে জল চলে এসেছিল আমার।বারবার মনে হল, এই পনেরোলাখের উপরে লাঞ্ছিত বঞ্চিত মানুষেরা আর কতকাল এভাবে বঞ্চিত হয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম সংস্কৃতিতে হারাবে?এরজন্যে আমরাও অনেকাংশে দায়ী । আমরাও সর্বদা তাদের পাশে থাকতে পারিনি বলেই, এ গরীব মানুষগুলো অন্যদের ধর্মান্তর নামক সাজানো-গোছানো ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। এ ফাঁদের বাইরে দৃশ্যমান থাকে মানবতা এবং সেবার মুখোশ; কিন্তু মুখোশের আড়ালে ভেতরে থাকে ধর্মান্তর।

আমরা বাঙালি হিন্দুরা পশ্চিমবাংলা , ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরা, আসাম, বাংলাদেশ যেখানেই থাকি আমাদের অধিকাংশই হলো চোখ,কান, নাক বন্ধ করা বালিতে মাথাগোঁজা উঠপাখির মত। বাঙালি হিন্দুদের বিশাল একটা অংশই হল, আত্মঘাতী মেকি সেকুলার। তাদের দেখলে মনে হয়, মেকি মানবতায় বিশ্বকাপ তাদের পেতেই হবে -এমন মানসিকতা।তাদের অনেকেই দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না, সাথেপাছে থাকে না, দুম করে প্রকাশ্যেও আসে না; যখন নিজের খাবার খাওয়ার সময় আসে তখন টুক করে খাবারটি খেয়ে নেয়। এই আত্মঘাতী বাঙালি হিন্দুদের কারণেই, যাদের প্রধান লক্ষ্য গরিব অসহায় হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করা; সেই মানবতার মুখোশে ধর্মান্তরকারীরা প্রশ্রয় পেয়েছে।

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.