প্রধানমন্ত্রীর কূটনীতির চালেই বিশ্বের দরবারে ভারতের জয়জয়কার।

যেকোনও দেশ পরিচালনের জন্যই কূটনৈতিক সম্পর্কও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি। তবে পূর্ব প্রশাসকের শাসনকালে ধীরে লধীরে সেই গরিমা হারাতে বসেছিল ভারত। এরপরই ৭ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, প্রখর বুদ্ধিতে নয়া উচ্চতায় পৌঁছল দেশের কূটনীতি। বিশ্বনেতাদের মুখে মুখে ঘুরতে শুরু করল একটাই নাম, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসক পদে নরেন্দ্র মোদীর ২০ বছর পূর্তিতে কীভাবে কূটনীতির এই নতুন শিখরে পৌঁছল ভারত, তা ফিরে দেখা যাক।

‘বাসুদেব কুটুম্বকম’- ভারতে এই কথা কয়েক হাজার বর্ষ ধরে প্রচলিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে তা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যায়। বিশ্বের প্রতিটি দেশকে ভারত নিজের অতিথি বানিয়ে নেওয়ার এই বার্তার পরই বিশ্বের দরবারে ফের একবার নতুন করে জায়গা করে নেয় ভারত। এই সাফল্য সম্ভব হয়েছিল একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেই। বিগত ৭ বছরেই বিশ্বের দরবারে নিজের বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ভারত, কয়েক বছর আগে সিডনির মঞ্চ থেকেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “ভারত ফের একবার উঠে দাঁড়াবে, ফের একবার নিজেকে শক্তিশালী হিসাবে প্রমাণিত করবে এবং মানবসেবার কাজে নজির গড়বে। ফের একবার ভারতমাতা বিশ্বের শীর্ষ স্থানে ঠাই পাবে।”

সম্প্রতিই রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়েও সেই কথাকেই মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারতের উন্নয়ন হলে, তবেই বিশ্বের উন্নয়ন হবে। ভারতের অগ্রগতিতেই লুকিয়ে রয়েছে বিশ্বের অগ্রগতি।” তবে প্রধানমন্ত্রীর এই কূটনৈতিক রণনীতির পথ এতটা মসৃণ ছিল না। উদাহরণ হিসাবে আফগানিস্তানের কথাই ধরে নেওয়া যাক। চলতি বছরের ১৫ অগস্টে ভারত যখন স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে, সেই সময়ই কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্য়ালেস দখল করে নিয়েছিল তালিবানরীা। ঘোষণা করা হয়েছিল ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তানের। শুরু হয়েছিল তালিবান শাসনের এক নতুন অধ্যায়। একইসঙ্গে আমেরিকার আধিপত্যনীতিতেও বড় ধাক্কা ছিল এটি।

আফগানিস্তানের উন্নয়নে যেহেতু ভারতের বিরাট বড় ভূমিকা রয়েছে, সেই কারণেই গোটা বিশ্ব ভারতের নীতি ও সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে ছিল। তালিবানকে সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা, তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কী হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ভারতের দিকেই তাকিয়ে ছিল সমস্ত দেশ। সেই সময় চুপ ছিল নয়া দিল্লিও। তবে আফগনিস্তানের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে কেবল ভারতীয়দেরই উদ্ধার নয়, মার্কিন বাহিনীকেও সাহায্য করেছিল ভারত।

এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বললেন, তা আফগানিস্তান নিয়ে বিভ্রান্ত দেশগুলির চোখ থেকে পর্দা সরিয়ে দিল। প্রধানমন্ত্রী বললেন, “আফগানিস্তানের মাটি যাতে সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি না হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আফগানিস্তানের নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতেই হবে।”

একইসঙ্গে করোনা যুদ্ধে ভারত যে যুদ্ধে সামিল হয়েছিল এবং যেভাবে কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও লড়াই চালিয়েছিল সরকার, তার জেরেই দেশে এন-৯৫ মাস্ক উৎপাদন থেকে শুরু করে ভেন্টিলেটর বা ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হয়েছে। করোনার যুদ্ধে ভারতকে যেমন বিভিন্ন দেশ সাহায্য করেছিল, তেমনই বিশ্বের ৯৫টি দেশে অক্সিজেন প্য়ান্ট থেকে ভ্যাকসিন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। করোনাযুদ্ধে ভারতের দেশীয় টিকাই বিশ্বের দরবারে দেশকে সাফল্যের এক নতুন শিখরে নিয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.