জলের অপর নাম জীবন। বিষয়টি কেবল জীবন বিজ্ঞান বইয়ের কথা নয়। বাস্তব জীবনেও এর প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এওলাকায় জলের অভাব এবং সেই প্রতিকূলতা না দূর হওয়ার কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বহু মানুষ। প্রতি বছরে এই দেশান্তরের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনশূন্য হয়ে পরছে বহু গ্রাম।
আলোচিত জায়গাটি ঝড়খণ্ডের পালামৌ জেলার। এই পালামৌ এক সময়ে বিহারের অন্তর্গত ছিল। এই জায়গার উপরেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন অরণ্যের দিনরাত্রি। যেটি নিয়ে পরে সিনেমা করেছিলেন সত্যজিত রায়।
বাংলার লেখক এবং চলচ্চতির জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় জায়গাটি ভুগছে জলের অভাবে। তবে এই অসুখ পালামৌয়ের নতুন নয়। ১৮৯২ সালে জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই ওই এলাকায় জলের সঙ্কট চলছে। যা স্বাধীনতা লাভের সাত দশক পরেও মেটেনি। বিকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মোদী সরকারের পাঁচ বছরেও বদল হয়নি অবস্থার।
এই সকল প্রতিকূলতার জন্য বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অন্যত্র মানে রাজ্যের অন্য প্রান্ত নয়। ভিন রাজ্যে গিয়ে বসবাস করা শুরু করছেন। মূলত পঞ্জাব বা গুজরাতে গিয়ে থাকছেন অনেকে। শুধু পানীয় জলের অভাব নয়, অন্যান্য সকল কাজের ক্ষেরেও জলের বিশেষ অভাব দেখা যায় পালামৌতে। যার অন্যতম প্রধান হচ্ছে চাষাবাদ। ভারি কোনও শিল্প বা উপার্জনের অন্য ব্যবস্থা নেই পালামৌতে। চাষের জমি থাকলেও জলের অভাবে সেই কাজ বন্ধ।
এই সকল কারণেই জন্যেই অনেকে পালামৌ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে প্রতি বছরে প্রায় ৫০০ জন করে মানুষ পালামৌ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নিজের এবং পরিবারের লোকেদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের কারণেই সকলে ভিটে মাটি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর যার কারণে জনশূন্য হয়ে পরছে পালামৌ।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে পালামৌ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বিজেপির টিকিটে জিতেই লোকসভায় গিয়েছেন। ওই সাংসদের নাম হচ্ছে ভিপি বিষ্ণু দয়াল রাম। পালামৌ এলাকার জলের সমস্যার সমাধানের জন্য বাধ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাত পোহালেই ওই পালামোউ কেন্দ্রে ভোট। ভোটের আগে সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা জলের সমস্যা সমাধানের কথা বলেন। যদিও কখনও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পালামৌয়ের প্রবীণ নাগরিক বিশ্বনাথ পাণ্ডে।
দেশের অনেক জায়গায় জলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ভোট বয়কট করেছেন ভোটাররা। পালামৌ কী তেমনই কিছু করবে? এই প্রশ্নের জবাবে যুবক বিবেক পাসোয়ান বলেছেন, “আমাদের জলের সমস্যা তো দীর্ঘদিনের। ভোট তো আমরা প্রতি বারেই দিয়ে থাকি।” একই প্রশ্নের জবাবে প্রবীন বিশ্বনাথবাবু দিয়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ জবাব, “ভোট দেওয়া আমাদের কর্তব্য। ভোট দিতেই হবে।”