আজ বিশ্ব নারী দিবস। মহা উৎসাহে পালিত হচ্ছে নারী দিবস। নারীদের ওপর বঞ্চনার প্রতিবাদে ও সমানাধিকারের দাবীতে নারীদের যে প্রতিবাদ মুখরিত হয়েছিল মধ্যযুগের ইউরোপে, আজ তার সু্ফল অনেকাংশে সঞ্চারিত হয়েছে প্রায় সমগ্র বিশ্বের নারী সমাজের মধ্যে। কিন্তু দুঃখের কথা, মধ্য প্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রায় তিরিশটি দেশে ও অন্যান্য অনেক দেশে বিচ্ছিন্নভাবে ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ বা খতনার মত বর্বর প্রথা বিদ্যমান।
FGM বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’বা খতনা, নারীদের (শিশুরাও এর থেকে বাদ নয়) চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া, যৌনাঙ্গের যে কোনো রকম বিকৃতি ও পরিবর্তন আন্তর্জাতিকভাবে FGM বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’, যা মানবিক মূল্যবোধের বিরোধী হিসেবে স্বীকৃত।
এই প্রথা নারীদের প্রতি চরম অত্যাচারের নিদর্শন, নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করা ও নারীদের নিজেদের যৌনতা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেবার পরিপন্থী। অল্পবয়স্ক শিশু থেকেপনেরো বছর বয়স্ক কিশোরীদের এটি অধিকাংশভাবে বলবৎ করা হয়, শারীরিকভাবে জোর করে বা মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে। GM বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ এর পরে শিশু ও নারীরা শিকার হয় মানসিক অবসাদের। শারীরিকভাবে দীর্ঘকালীন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, প্রত্যেককেই। যন্ত্রণা, অত্যধিক রক্তক্ষরণ, ক্ষত এমনকি মূত্রত্যাগজনিত সমস্যাও সঙ্গী হয় সারাজীবনের। পরবর্তী জীবনে যৌন সংসর্গে অতৃপ্তি ও যন্ত্রণা, ও তৎসহ মানসিক অবসাদ দেখা যায় অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রেই।
পৃথিবীতে প্রায় কুড়ি কোটি নারী GM বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ এর শিকার, ২০১৫ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে প্রায় আরো প্রায় সাত কোটি শিশু GM বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ এর শিকার হতে পারে। GM বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ সর্বতভাবে সমস্তরকম মানবিক অধিকার লঙ্ঘনকারী এক প্রথা, যা নারীদের মানবাধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার, অত্যাচার ও নৃশংসতা বাঁচবার স্বাধীনতা, ও শিশুর অধিকারকে অস্বীকার করে বর্বরতাকে আশ্রয় করেছে। মানবসভ্যতার কলঙ্ক এই প্রথার বিলুপ্তির জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০১৮ সালের রিপোর্টে, এই প্রথার বিলুপ্তির প্রচেষ্টা জোরদার করবার কথা বলেছেন। প্রান্তিক মহিলা ও শিশু যারা জন্ম থেকেই কোনো না কোনো বঞ্চনার শিকার, উদ্বাস্তু ও গ্রাম্য পরিবেশে বসবাসকারী মহিলাদের জন্য নারীঅধিকার কর্মীদের অতিমাত্রায় সচেষ্ট হতে বলেছেন, যাতে ২০৩০ এর মধ্যে এই বর্বর প্রথার অবসান পৃথিবী থেকে করা সম্ভব হয়।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল দে অব জিরো টলারেন্স ফর ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ পালন করা হয় প্রতি বছর ৬ ই ফেব্রুয়ারী।
দুঃখের কথা ভারতেো এই প্রথা বর্তমান। মুসলিম বোহরাদের মধ্যে এই প্রথা বিদ্যমান। ২০১৭ এর একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিয়েশন’ একটি অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে তেলেঙ্গানা, কেরালা, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও রাজস্থানে। কিন্তু শুধুমাত্র অপরাধ ঘোষণা করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না, প্রান্তিক মহিলাদের কাছে পৌঁছতে হবে, সামাজিকভাবে নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে হবে সমাজের সেই সব মানুষদের যারা এই প্রথার বিরুদ্ধে। প্রচুর মহিলা, নারী অধিকার কর্মী কাজ করছেন এই লক্ষ্যে, আশা করা যায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের নির্ধারিত ২০৩০ এর অনেক আগেই আমাদের ভারত এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।