নাম না করে পাকিস্তানকে আক্রমণ জঙ্গিরা কোথায় থাকে সারা বিশ্ব জানে: মোদি

হিউস্টন, ২২ সেপ্টেম্বর (পিটিআই): মার্কিন মুলুকে ‘মেগা ইভেন্ট’। যার ‘শো স্টপার’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে তঁার প্রবেশ মাত্র যে আবহটা তৈরি হল, আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাকে ব্যাখ্যা করল ‘ইলেক্ট্রিফাইং’ বলে। গোটা স্টেডিয়ামে তখন শুধুই ‘মোদি… মোদি’ রব। ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ৫০ হাজার অনাবাসী ভারতীয়ের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী। চিরাচরিত হাত নেড়ে অভিবাদন, তারপর জোড়হাতে জনতাকে নমস্কার। জিতে নিলেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার হৃদয়। আর সেই মঞ্চকে ব্যবহার করেই সন্ত্রাস প্রসঙ্গে নাম না করে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করলেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে দীর্ঘ ৭০ বছরের সমস্যা জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রসঙ্গে বলেন, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্র। সেখানে কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়ে এখনও সমালোচনা অব্যাহত। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে সেখানকার মানুষ সারাদেশের মতোই বিকাশ এবং সমানাধিকার লাভ করবেন। ৩৭০ ধারা থেকে কেবল লাভবান হয়েছে জঙ্গিরা এবং বিচ্ছিন্নবাদীরা। এই অবস্থার অবসান হবে। এখানকার মানুষ উন্নয়নের স্বাদ পাবেন। তবে ৩৭০ ধারা বিলোপের কৃতিত্ব তিনি দেশের সাংসদদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।
তাঁর কথায়, রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এরপরেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংসদের দুই কক্ষ এই ধারা বিলোপের পক্ষে মত দিয়েছে। সাংসদদের এরজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে উপস্থিত দর্শকদের স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেওয়ার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নাম না করে পাকিস্তানের সমালোচনা করে বলেন, এরা নিজেদের দেশকেই রক্ষা করতে পারে না, অথচ অন্যদের সমালোচনা করে। সারাবিশ্ব জানে কারা অশান্তি চায়, কারা জঙ্গিদের মদত দেয়। আমেরিকায় ৯/১১ বা মুম্বইতে ২৬/১১র মূলচক্রীরা কোথায় থাকে, তা কারও অজানা নয়। জঙ্গিদের মদতদাতা এবং জঙ্গি নিধনকারীদের মধ্যে লড়াই চলবে। এর কয়েক মিনিট আগেই সন্ত্রাসদমনে ভারতের পাশের থাকার বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। সেই মন্তব্য তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘আমি জোর দিয়েই বলছি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।’ এর আগে, নতুন করে ভারত ও আমেরিকার বন্ধুত্বের সূচনা ঘটালেন দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা। ‘হাউডি মোদি’র মঞ্চেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে ধরলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগেও তাঁদের উষ্ণ সম্পর্ক ধরা পড়েছে। তবে রবিবারের মঞ্চ একটু আলাদা।
যেখানে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের বহুদিনের উদ্বেগের শরিক হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘উগ্র ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে নিরীহ ভারত-আমেরিকানদের রক্ষা করতে আমরা গর্বের সঙ্গে পাশাপাশি থাকব।’ এখানেই শেষ নয়, ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সীমান্ত নিরাপত্তা দুই দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব শীঘ্র ভারতের সঙ্গে আমেরিকা প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে। এরফলে দুই দেশের নিরাপত্তা আরও উন্নত হবে।’ একইসঙ্গে বলেন, মোদির নেতৃত্বে ভারত এক শক্তিশালী সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মোদিকে তাঁর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। মঞ্চ থেকে নেমে মোদির হিন্দি ভাষণ পুরোটা বসে শোনেন। পরে সভার শেষ প্রধানমন্ত্রী জড়িয়ে ধরেন এবং দু’জনে হাত ধরে দর্শকদের সামনে ঘোরেন। তৈরি হল অন্য মুহূর্ত।
পরস্পরকে অভিবাদন জানাতে আমেরিকার টেক্সাস অঞ্চলে ‘হাউডি’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়। শনিবার সেই টেক্সাসের হিউস্টন শহরে পৌঁছে মোদি ট্যুইট করেন, ‘হাউডি হিউস্টন! আগামী দু’দিন এই প্রাণবন্ত এবং উদ্যমী শহরে একাধিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’ পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ট্যুইট করেন, ‘হিউস্টন যাচ্ছি আমার বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। দারুণ একটা দিন হতে চলেছে।’ পাল্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ট্যুইট ছিল, ‘ইট সিওরলি বি’। অর্থাৎ, সেটাই হবে। হলও তাই।
বর্তমান পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.