আতঙ্ক কাটাতে নিবিড় প্রচারে গেরুয়া শিবির বাংলায় প্রথমে নাগরিকত্ব যাচাই, তারপর এনআরসি কার্যকর হবে: মোহন ভাগবত

নিজস্ব  প্রতিনিধি, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে প্রথমে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া  সম্পূর্ণ করা হবে। তারপর জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করা হবে।  রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সমন্বয় বৈঠকে এমনই মন্তব্য করেছেন  সরসঙ্ঘ চালক মোহন ভাগবত। এনআরসি নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা  বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় আশঙ্কা উড়িয়ে রাজ্যবাসীকে এভাবেই আশ্বস্ত করলেন  সঙ্ঘপ্রধান। গেরুয়া শিবির সূত্রের দাবি, তৃণমূল এনআরসি নিয়ে মানুষের  উৎকণ্ঠাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে চক্রান্ত করছে। বিভ্রান্তি কাটাতে  হাওড়ায় দু’দিনের শিবির শেষে স্বয়ং মোহন ভাগবত সঙ্ঘের কার্যকর্তাদের সামনে  এই জলন্ত ইস্যু নিয়ে তাঁর মতামত জানিয়ে গেলেন। আগামী ১ অক্টোবর নেতাজি  ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এনআরসি নিয়ে বক্তব্য পেশ করতে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয়  সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভাগবতের নির্দেশ মেনে  সঙ্ঘের সমস্ত শাখা সংগঠনগুলি এনিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রচারে নামতে চলেছে। যার মূল  স্লোগান হতে চলেছে, ‘সব হিন্দু সুরক্ষিত’।নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া  কী? সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০১৬ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬  বর্তমানে ঝুলে রয়েছে। এই বিলে বলা রয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং  বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা সংখ্যালঘু মানুষদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। এই  সূত্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার সংসদে বিল নিয়ে আসে। কিন্তু সিপিএম-তৃণমূল সহ  কয়েকটি দলের প্রবল বিরোধিতায় তা এখনও পাশ করা যায়নি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায়  আসার পর এখনও রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সবকিছু ঠিক থাকলে  আসন্ন শীতে বহু প্রতীক্ষিত সেই পূর্ণ বহুমত পেতে চলেছে মোদি সরকার। তারপরই  আটকে থাকা এই বিল পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করতে পারে কেন্দ্রের সরকার।  সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তিনটি দেশ থেকে শরণার্থী হিসেবে আসা হিন্দু, জৈন,  শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান  করা হবে। মোহন ভাগবতের দেখানো পথ অনুসারে তারপর এনআরসি কার্যকর করা হবে।  যার মূল উদ্দেশ্যে হল, রাজ্যের সর্বত্র অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা।  যেখানে মূলত বাংলাদেশ সহ কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে আসা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের  পরিচয় যাচাই করা হবে।মোহন ভাগবত সাফ জানিয়েছেন, অত্যাচারিত হিন্দুরা  হিন্দুস্থানেই থাকবে। তাঁদের মুখের ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষা যাই হোক না কেন,  তাঁদের দেশের বাইরে যেতে দেব না। অসমে বাদ যাওয়া ১২ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ  পড়া প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, শ্রদ্ধেয় ভাগবতজি  স্পষ্টই জানিয়েছেন, কোনও হিন্দুর উদ্বেগের কারণ নেই। তাঁর অভিযোগ, মমতা  বন্দ্যোপাধ্যায় নোট বাতিল, জিএসটি নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার  চেষ্টা করেছেন। যার কোনও প্রভাব পড়েনি। একইভাবে এখন তিনি আর কয়েকটি  সংবাদমাধ্যম এনআরসি নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলেও তার  দায় এনআরসি’র উপর চাপানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা হিন্দু শরণার্থীদের  নাগরিকত্ব দেব এবং অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের চিহ্নিত করব। এদিকে, যাদবপুর  কাণ্ড নিয়ে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের তরফে ভাগবতের কাছে বিস্তারিত  রিপোর্ট করা হয়েছে। শিবিরে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ নিয়ে বক্তব্য  পেশ করেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হেনস্তার ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য  করেননি সরসঙ্ঘ চালক। বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান ঘিরে বাংলায় ব্যাপক উৎসাহ  দেখা গিয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে পদ্ম শিবিরের তরফে তা ভাগবতের সামনে পেশ করা  হলে প্রশংসা করেন সঙ্ঘ প্রধান।

বর্তমান পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.