পেটাই মানে সে দস্তুর মতো পুরুষ পেটাই। তাও আবার খোদ নারীর হাতে। উত্তর প্রদেশের বারসানার লাঠমার হোলিতে এটাই দস্তুর। এদিন তারা নন্দগ্রামের মদ্দ দেখলেই দমাদ্দম সড়কি চালায়। মদ্দদের হাতে থাকে শুধুই ঢাল। তাই দিয়ে কাঁহাতক আর গা বাঁচানো যায়! তবু এ অঞ্চলের এই হোলির এমনই ঐতিহ্যবাহী নিয়ম যে, মহিলাদের হাতে পিটুনি খেয়ে পেটাই পরোটা হলেও, ঘা খেয়ে ঘায়েল হলেও পুরুষের ঘুরে হাত চালাবার নিয়ম নেই।
বারসানা গ্রামের মেয়েদের মারকুটে মেজাজের এই হোলি শুরু হয়েছিল সেই দ্বাপর যুগে। সেইসময় একবার হয়েছিল কি, হোলির দিন দুই আগে কেষ্ট ঠাকুর চুপি চুপি রাধার গ্রাম বারসানায় সটান হাজির হলেন তাঁর গোপচ্যালাদের নিয়ে। উদ্দেশ্য বিপক্ষের প্রস্তুতি কেমন চলছে, তাই দেখা। কিন্তু আড়াল আর আড়াল রইল না। রাধার সুন্দরী সখীদের দেখে চ্যালারা তাদের পিছনে লাগার জন্য এমন অধীর হয়ে উঠলেন যে, কিছুতেই তাঁদের সামলানো গেল না। এদিকে সেদিন রাধার সখীরাও বেশ ফর্মে ছিলেন, চ্যালারা যেই তাঁদের টিজ করতে শুরু করেছেন, অমনি সড়কি বাগিয়ে সখীরা সারাবছরের টিজিং-এর শোধ তুলতে তাঁদের ধরে লাগিয়ে দিলেন ঘাকতক। সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতিবছর এভাবেই রাধার গাঁয়ের মেয়েরা রাধার সখী সেজে সেই ঘটনাকে স্মরণে রেখে উচ্চিংড়ে পুরুষদের ওপর খার মিটিয়ে হোলি খেলেন। এই ঐতিহ্যবাহী পেটাই হোলির নাম আসলে, ‘লাঠমার হোলি’।
এই ধরণের ধোলাইপর্বের মধ্যে কেউ হয়তো স্যাডিজম খোঁজেন, কেউ হয়তো বা নারীশক্তির প্রকাশ দেখেন। কিন্তু বারসানার মেয়েরা এতে শুধুই আনন্দ খোঁজেন, রঙ মাখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়!’
বারসানার এই লাঠমার হোলির সঙ্গে প্রাচীন রোমের একটি উৎসবের অদ্ভুতরকম মিল পাওয়া যায়।প্রাচীনকালে রোমের খ্রিস্টান সম্প্রদায় এই বসন্তকালেই আয়োজন করতেন ‘সাতুরনালিয়া উৎসব’-এর। এই উৎসবে পুরুষেরা রাস্তায় নেমে উদোম হয়ে নেচেকুদে খিস্তির বান ডাকিয়ে খেউড় গাইতেন । আর মহিলারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাদের ধরে ধরে আচ্ছা করে লাঠিপেটা করতেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, এতে নাকি বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। আশ্চর্যরকমভাবে আমাদের রাধাও কিন্তু হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী বন্ধ্যা ছিলেন। তাই নৃতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে নিতান্ত আমোদ ছাড়াও বারসানার লাঠমার হোলির মধ্যে এমনই এক লোকবিশ্বাসের খোঁজ মিললেও মিলতে পারে।