‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে মোদীকে চিঠি, এফআইআর অপর্ণা, সৌমিত্র-সহ বিদ্বজ্জনদের বিরুদ্ধে

দেশের অভ্যন্তরে ক্রমাগত ঘটে চলা গণপ্রহারে মৃত্যু, আক্রমণের স্লোগান হিসেবে ‘জয় শ্রীরাম’–এর ব্যবহার সহ একাধিক ‘দুঃখজনক ঘটনা’তে উদ্বিগ্ন দেশের ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি খোলা চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন রামচন্দ্র গুহ, আদুর গোপালকৃষ্ণন, শ্যাম বেনেগল, আশিস চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, অমিত চৌধুরী, গৌতম ঘোষ, অনুরাগ কাশ্যপ, ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, মনি রত্নম, শুভা মুদগল-সহ দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা। সেই ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের হল এফআইআর।

এই চিঠি পাঠানোর বিষয়ে দু’মাস আগে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুর্যকান্ত তিওয়ারির কাছে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন সুধীর কুমার ওঝা নামের এক আইনজীবী। সেই পিটিশনকে ঘিরে একটি অর্ডার পাস করেন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই অর্ডারের ভিত্তিতেই সদর পুলিশ স্টেশনে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন সুধীরবাবু।

নিজের অভিযোগে সুধীরবাবু বলেছেন, “এই চিঠি লিখে তাঁরা দেশের মান ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরিশ্রমকে ছোট করতে চেয়েছেন। তাঁরা দেশদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করেছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমি এফআইআর করেছি।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে আইপিসির একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করা, অস্থিরতা তৈরি করা, ধর্মীয় ভাবাবাগে আঘাত, শান্তি বিঘ্ন করার চেষ্টা প্রভৃতি।

২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠিতে নিজেদের ”শান্তিপ্রিয় ও গর্বিত ভারতবাসী” হিসেবে পরিচিতি দিয়ে তাঁরা লিখেছিলেন, ”প্রিয় প্রধানমন্ত্রী… মুসলিম, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনাবলী এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো)–র রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি ২০১৬ সালে ৮৪০ জন দলিতের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে। এবং একই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে শাস্তির অনুপাত। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ধর্মকে কেন্দ্র করে ঘৃণাবশত আক্রমণের ২৫৪টি ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ৫৭৯।”

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিটি একটি প্ররোচনামূলক ‘ওয়ার ক্রাই’ বা রণহুঙ্কারে পরিণত হওয়াই যে বর্তমানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার অন্যতম কারণ সেই বিষয়টির উল্লেখ করে উদ্বিগ্ন স্বাক্ষরকারীরা জানিয়েছিলেন, ধর্মের নামে এমন অনৈতিক আচরণ মধ্যযুগীয়

বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। ”দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের কাছে রাম একটি পবিত্র নাম। দেশের সর্বোচ্চ আধিকারিক হিসেবে আপনার উচিত রাম নামের এই বিকৃতি বন্ধ করা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.