রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে গরু পাচারকারীর মৃত্যুর জন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না – অনুপ্রাণিত বাংলা সংবাদ মাধ্যম “এই সময় “

নীচের ছবিটি ১৩ই নভেম্বর এই সময় পত্রিকার প্রথম পাতার । জাগো বাংলার নয় । ভুলেও জাগো বাংলা ভাববেন না । এইসময়ের সব থেকে অনুপ্রাণিত বাংলা সংবাদ মাধ্যম “এই সময় ” পত্রিকার ।

রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে গরু পাচারকারীর মৃত্যুর জন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না । হৃদয় বিদারক কান্না । পাতা ভেজানো কান্না । প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথার কান্না । কাগজের বুকে স্টেন বসানো দুর্বলতার কান্না ।
এই কান্নার মর্মার্থ কেউ কি বুঝেছেন ? তাও আবার গরু পাচারকারী রাতের অন্ধকারে সীমান্তের কাঁটা তার পেরিয়ে পাচার করতে গিয়ে মরেছেন তার জন্য ? একটা সংবাদ মাধ্যম কাঁদছে ? ভাবা যায় ?

গত তিন মাসে নবান্নের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের বাংলা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপনের তালিকা বলছে রেভিনিউ এর হিসেবে আনন্দবাজারে দেও অর্থ সব থেকে বেশি, দ্বিতীয় স্থানে বর্তমান, তৃতীয় স্থানে অনেকটা পেছনে “এই সময়” । আসলে এখানেই লুকিয়ে রয়েছে কান্নার আসল কারণ । এই সময় যাঁরা চালান তাঁদের মতে এতটা পেছনে থাকা উচিত নয় “এই সময়ে”র । ফলে কাঁদ, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদ, যাতে কান্নার রোল পৌঁছায় ১৪ তলা পর্যন্ত ।

একটা উদাহরণ দিই । ২৬ আগস্ট ( আই সি এ ১৭০১১) নবান্নের ১৪ তলার নির্দেশে পে এন্ড একাউন্টস দফতরকে মাত্র ২০ দিনের জন্য যে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে সেই বাবদ আনন্দবাজারকে পেমেন্ট করতে বলা হয় ২ কোটি, ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৭২ টাকা । এটি শুধু আনন্দবাজারকে টেন্ডার বিজ্ঞাপন বাবদ প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের জন্য দেওয়া অর্থ । এর বাইরে থেকে গেল ডিসপ্লে বিজ্ঞাপনের পেমেনট, টেলিগ্রাফ কাগজের পেমেন্ট এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের পেমেন্ট ।
২৪ আগস্ট আনন্দবাজার ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের জন্যও পেল ৪৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ৮২৯ টাকা ( পেমেন্ট অর্ডার নং 3272 – ICA) ।

ঠিক এই সব অঙ্কের পাশে “এই সময়” পত্রিকা কত পেয়েছে ? টাকার অঙ্ক ২ কোটির নীচে । বর্তমান কাগজেরও অনেক অনেক পেছনে ও পরে ।

এই অঙ্কেই আসলে কান্না । এবং এই কারণেই বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্সকে তার জন্য প্রায় সমাজ বিরোধী ফোর্সের স্তরে নামানো । এবং একই সঙ্গে গেল গেল রব । কেন মারলো, কেন মারলো, এ কি হল চিৎকার ।

কোনোদিন দেখেছেন বসিরহাটে বারিক চরণ বিশ্বাস কিভাবে গরু পাচারের নেতৃত্ব দিচ্ছে তাই নিয়ে এই কাগজকে স্টোরি করতে ? সীমান্ত থেকে ১৬, ১৭ কিলোমিটার ভেতরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে ১৩৮ টি “গরু গোডাউন” ( বি এস এফের intelligence রিপোর্ট অনুযায়ী ) রম রম করে পুলিশের নাকের ডগায় চলছে কোনোদিন দেখেছেন এই পত্রিকাকে তাই নিয়ে ছবি দিয়ে স্টোরি করতে ? পারবেন এরা ? ক্ষমতা আছে ?

বারিকের হাত হরিশ চ্যাটার্জির শান্তিনিকেতন পর্যন্ত যে বাড়ানো জেলার পুলিশের বড় কর্তারা পর্যন্ত জানেন । জেলার ছোট খাট মেজ কর্তারা পুলিশের বড় কর্তাদের দেখে যতনা স্যালুট ঠোকেন তার দশ গুন ঠোকেন বারিক বিশ্বাসকে দেখলে ।

দেখবেন কোনোদিন “এই সময়” ,বর্তমান কিম্বা আনন্দবাজারকে এসব নিয়ে লিখতে ? কিভাবে বি এস এফের আওতার বাইরে, সীমান্ত থেকে ১৬,১৭,১৮ কিলোমিটার দূরে শয়ে শয়ে গরুকে ট্রাকে করে নিয়ে এসে গোডাউনে ঢোকানো হয় তারপর সময় বুঝে রাতের অন্ধকারে অপারেশন চালানো হয় পাবেন কোন স্টিং অপারেশন ? এ বি পি আনন্দে ? নিউজ ১৮ এ ? আনন্দ বাজার, বর্তমান কিম্বা এই সময় এ ?

পারেনা এরা ? পারে । করবে না । ভুলেও এরা করবে না । কিন্তু গরু পাচার করতে গিয়ে বি এস এফের গুলিতে পাচারকারী মারা গেলে এরা হাপুস নয়নে কাঁদবে । দু পা ছড়িয়ে নবান্নের উঠোনে বসে এরা মড়া কান্না কাঁদবে। রাত জেগে ফ্রন্ট পেজে জ্বালাময়ী স্টোরি করবে । সেই স্টোরি পড়ে দিদির চোখ আনন্দে চিক্ চিক করে উঠলে এদের কান্না তখন থামবে ।

এ কান্না তাই গরু পাচারকারীর মৃত্যুর শোকের নিমিত্তে কান্না নয় । এ কান্না আসলে “বিজ্ঞাপন আরও দাও”য়ের জন্য কান্না ।

পাঠক, ভাবনাকে শুধরে নিন । সময় থাকতে ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.