পরপর গ্রেনেড হামলায় হাসিনাকে বাঁচাতে নজিরবিহীন মানব ঢাল দেখেছিল বিশ্ব

ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি হয়েছিল ঢাকাতেই। তখন বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত ইসলামি জোটের সরকার। বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। ২০০৪ সালের ২১ অগস্ট টার্গেট ডেট। সেদিন জনসভা করার কথা দলনেত্রী শেখ হাসিনার। বহু মানুষ জড় হয়েছিলেন সেই রাজনৈতিক সমাবেশে। সেই দিনেই তৈরি হয়েছিল নজিরবিহীন ঘটনা। হাসিনাকে গুলি-গ্রেনেড থেকে বাঁচাতে নেতা-কর্মীরা তৈরি করেছিলেন মানব ঢাল।

১৫ বছর আগের কথা। গরমের দিন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তিল ধারণের স্থান নেই। কারণ ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। পূর্ব নির্ধারিত সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঠিক সময়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। মঞ্চে ভাষণ দিলেন। তারপরেই সেই রক্তাক্ত ঘটনা।

পরপর বিস্ফোরণ হতে শুরু করে। গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। সঙ্গে চলছে গুলি। হতবাক শেখ হাসিনা। রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে সমাবেশ স্থল। মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁদের নেত্রীকে ঘিরে নিয়ে মানব ঢাল তৈরি করলেন।

এদিকে মঞ্চ লক্ষ্য করেই গ্রেনেড হামলা হতে থাকে। রক্তাক্ত হতে থাকেন কর্মীরা। কিন্তু কেউ ছেড়ে যাননি শেখ হাসিনাকে। ততক্ষণে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ।

সেদিন তৈরি হওয়া সেই মানব ঢাল বিশ্বে নজির হয়ে রয়েছে। জঙ্গি হামলার সেই ঘটনার দেড় দশক পরেও সবাই আতঙ্কে থাকেন। ২১ অগস্ট অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৪ জনের। আরও ৪০০ জন জখম হন।

পরিকল্পনায় ‘হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী’ বা হুজি-বি জঙ্গি সংগঠন। বাংলাদেশকে ভিত্তি করে নাশকতা ছড়ানোর অন্যতম গোষ্ঠী। ২১ অগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্তে পরে উঠে এসেছে তাদের সক্রিয় অংশ নেওয়ার বিষয়। তদন্তে প্রমাণ হয়েছে এই হামলায় জড়িত ছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। বাংলাদেশে তখন ক্ষমতায় বিএনপি-জামাত ইসলামি জোটের সরকার।

কাকতালীয়ভাবে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী হাসিনাকে খুনের এই ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যায়। বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। উঠে আসে জামাত ইসলামির মদতে বিএনপি নেতৃত্বের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার সূত্র। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে। তবে তারেক বাংলাদেশে নেই, লন্ডন থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দেন। নাশকতার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে একে সাজানো ষড়যন্ত্র বলেছে বিএনপি।

গ্রেনেড হামলার মামলায় অন্যতম আসামী তৎকালীন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে। তিনি বন্দি। ভারত বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত তিনি। বিএনপি সরকারের আমলেই চট্টগ্রাম থেকে বিরাট অস্ত্র পাচার করা হচ্ছিল উত্তর পূর্ব ভারতে। সেই অস্ত্রের ক্রেতা ছিল অসমের জঙ্গি সংগঠন আলফা (বর্তমান আলফা-স্বাধীনতা)। সেই ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার মামলাতেও লুৎফুজ্জামান বাবর অন্যতম আসামী।

সেদিন হামলায়, যে ২৪ জনের মৃত্যু হয় তাদের অন্যতম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। জখম হন ৪০০ জন। ২১ অগস্টের হামলার তদন্তে উঠে এসেছে, মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে ১১টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়। হামলায় জড়িত পাকিস্তান মদতপুষ্ট হুজি-বি জঙ্গি সংগঠন।

সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কারণ তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া দলীয় কর্মীদের বিরাট মানব ঢাল। যা গোটা দুনিয়ায় নজির হয়েই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.