শহিদ হরিগোপাল বল ওরফে টেগরা বয়সে ছিল সব চেয়ে ছোট মাত্র ১৪বছর বয়স। বড়ই এক রাখো ছেলে মাঝে মাঝে পাহাড়ের আড়াল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে নিতে চাইছে শত্রু সেনার অবস্থান পাহাড়ের নিচে গোর্খা রেজিমেন্টের সেপাইদের মেশিনগান থেকে গুলি ছুটছে অবিরত । হঠাৎ পাহাড় কাঁপিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো সে । একটা গুলি এসে তাঁর পাঁজরের নিচে এসে বিদ্ধ হলো । ‘ সোনা দা ‘ বলে আর্তনাদ করে পাহাড়ের বুকে ঢলে পড়ল সে ।
সোনা দা মানে লোকনাথ বল তাঁর দাদা এবং এই লড়াইয়ে সেনাপতি । ৮৯ বছর আগে ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে মাস্টারদা নেতৃত্বে যুব বিদ্রোহ হয়েছিল ১৮-২২ শে এপ্রিল । জালালাবাদ পাহাড়ে সীমিত শক্তি নিয়ে লড়াই হলো ২২ শে এপ্রিল অংশগ্রহণ করেছিল ৭৩ জন বীর বাঙালি যুবক জন্মসূত্রে সবাই ছিল হিন্দু ঘটনাস্থলে অর্থ্যাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হলো ৯ জন পরে জখম আরও ৩ জন মারা গেলেন কতই বা বয়স ২০,২১,২২ তাঁরই মধ্যে সব থেকে ছোট ছিল হরিগোপাল বল ওরফে টেগরা ।
গুলি বিদ্ধ টেগরা কে বুকে তুলে নিল অগ্রজ লোকনাথ বল । কিশোর টেগরাকে ঝোপের পিছনে নিয়ে গেল তাঁর সোনা দা নাকের নিচে হাত দিয়ে দেখল সব শেষ । আর কোন দিন সোনা দা বলে ডাকবে না তাঁর আদরের ছোট ভাইটি । কিশোর টেগরার কপালে একটা চুম্বন দিয়ে বললেন ‘ দেশের জন্য তোকে সঁপে দিলাম ‘ তোর কর্তব্য তুই পালন করে গেলি যা , বিদায় !
‘ ১৪ বছরের কিশোর হরিগোপাল বল টেগরা নামে পরিচিতি ছিল বাঘের মতো জেদি টাইগার থেকে টেগরা চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল । ২২ এ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে প্রথম শহিদ এই টেগরা ।
এর পর টেগরার পথ অনুসরণ করে প্রাণ দিল ৯ জন । পরাধীন ভারতে বৃটিশ পুলিশের সঙ্গে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষে আর কোথাও এতগুলি তরতাজা প্রাণ বলিদান দেওয়ার নজির নেই ।
যুদ্ধের ময়দানে এই বিপ্লবীদের একটি পোশাকি নাম ছিল ইন্ডিয়া রিপাবলিক আর্মি যার সর্বাধিনায়ক ছিলেন মাস্টার দা। চট্টগ্রাম এই যুব বিদ্রোহের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাঁদের মধ্যে ৬ জনের ফাঁসি হয় । ১২ জন জালালাবাদ যুদ্ধে শহিদ হন । পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে (০৬-০৫-৩০) চারজন শহিদ হন । বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন শহিদ হন । বিপ্লবে অংশ নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪ জনের । আত্মহত্যা করেন ৩ জন । এবং পুলিশের অত্যাচারে মৃত্যু হয় ১১ জন ।
এই সব বীর সেনানীদের কথা ভাবলে প্রশ্ন জাগে মনে যে অকালে অস্তাচলে চলে যাওয়া এই সব তরুণ অরুণদের আত্মবলিদান কি ব্যর্থ হয়ে যাবে?
আগামী প্রজন্মের তরুণরা কি এদের দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হবে না ?
গত ১৪ ই এপ্রিল রহড়া-খড়দা জাতীয়তাবাদী যুবমঞ্চের পক্ষ থেকে ফাঁসির মঞ্চে আত্মবলিদানকারী ৪১ জন বঙ্গসন্তানের ছবি সমেত একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে তাঁদের কে শ্রদ্ধা জানিয়ে । উৎসাহীরা সংগ্রহ করতে পারেন ।
সৌমেন ভৌমিক