পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর এই প্রথমবার বাংলায় এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে। এবং প্রথম দফার ভোট গ্রহণের আগে সেই প্রসঙ্গ তুলেই এ দিন তৃণমূলনেত্রীকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে বললেন, “বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার পর দিদি এত কেঁদেছেন যে পাকিস্তানে তিনি হিরো হয়ে গিয়েছেন।”
পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ে হামলার পর দিনই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন মমতা। ওই নাশকতার জন্য যখন পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের উপর দোষারোপ করছে মোদী সরকার, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, কোনওরকম তদন্ত না করেই কেন কাউকে দায়ী করা হচ্ছে? পরবর্তী কালে বালাকোটে হামলার পরেও প্রশ্নমালা সাজিয়ে বসেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, আদৌ কোনও জঙ্গি মরেছে তো? আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তো দেখছি অন্য কথা বলছে। এমনকি ইদানীং আকছার মোদীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, আবার নাকি স্ট্রাইক হবে শুনছি!
মোদী যেন এ সবের জবাব দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বালাকোটের ঘটনার পর তিনি যখন জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে গোটা দেশে হাওয়া তুলতে চাইছেন এবং তা বিজেপি-র অনুকূলে টানতে চাইছেন, তখন মমতার তোলা এসব প্রশ্ন তাঁকে জবাব দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও অনেকের মত। শিলিগুড়ির সভা থেকে মোদী এ দিন তাঁর নিজস্ব কেতায় পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “আচ্ছা বলুন তো পাকিস্তানে ঢুকে যে জঙ্গি মারা হয়েছে, আপনারা খুশি কিনা?” ভিড়ের মধ্যে দু’হাত তুলে সমস্বরে জবাব আসে, “হ্যাঁ খুশি!” ফের প্রশ্ন তোলেন মোদী,-“আমি ঠিক করেছি, না ভুল করেছি?” উত্তর আসে, “ঠিক, ঠিক”। আবারও প্রশ্ন মোদীর-“আপনাদের গর্ব হচ্ছে তো?” ততোধিক উল্লাসের সঙ্গেই উত্তর মেলে, “হ্যাঁ হচ্ছে!”
এর পরেই দিদি তীব্র খোঁচা দিয়ে মোদী বলেন, কিন্তু অনেকে খুব দুঃখ পেয়েছেন। খুব কষ্ট হয়েছে তাঁদের। তাঁরা পাকিস্তানের উমেদারি করছেন। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দেওয়ায় রাওলপিন্ডি, ইসলামবাদে, লাহোরের মানুষ ততটা কষ্ট পায়নি যতটা কলকাতার দিদি পেয়েছেন। দিদির বন্ধুদেরও তা পছন্দ হয়নি। আসলে পাকিস্তানের চোট লাগলে যন্ত্রণা হয় মমতার।”
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেন মোদী। তিনি বলেন, “কংগ্রেস সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করে না। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সেনার হাত পা বাঁধা হয়ে যাবে। এবার চৌকিদারের সঙ্গে দাগীদের লড়াই।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, পুলওয়ামার ঘটনা ও বালাকোটে বায়ুসেনার হামলা,- এই দুই ঘটনাতেই অশনিসংকেত দেখেছিলেন মমতা। তিনি আঁচ করতে পারছিলেন, এ সবের মধ্যে দিয়ে মোদী তথা বিজেপি জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে ভোটে তার সুবিধা নিতে চাইছে। তাই গোটা ঘটনাই সাজানো বা ষড়যন্ত্র বলে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে মোদী বা বিজেপি চাপে যে একেবারে পড়েনি তাও নয়। তবে তাঁরাও এখন এটাই দেখাতে চাইছেন, সংখ্যালঘু তোষণের জন্য মমতা এতোটাই মরিয়া যে জঙ্গি দমনের জন্য পাকিস্তানের উপর হামলা করলেও তিনি প্রতিবাদ করেন। এমন কথা বলেন, যা দেশের সেনবাহিনীর মনোবলকে দুর্বল করে দিতে পারে।
তবে শেষ পর্যন্ত ভোটে দেখার যুযুধান এই দুই নেতা নেত্রীর মধ্যে কার বক্তব্য মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।