ভারতবর্ষের সভ্যতা সনাতন অর্থাৎ চিরস্থায়ী। ভারতবর্ষের সনাতন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মাধ্যমে মানবিক গুণাবলীর সর্বোত্তম বিকাশ এখানে সম্ভব হয়েছে। ভারতবর্ষের ত্যাগব্রতী ঋষি-মুনি গণ শুধু এদেশের নয় , সারা বিশ্বের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময় নিজেদের দর্শন সমাজের সামনে রেখেছেন।যেমন আমরা সাংখ্য দর্শন পেয়েছি কপিল মুনির থেকে , যোগ দর্শন ঋষি পতঞ্জলি ,ন্যায় দর্শন ঋষি গৌতম , বৈশেষিক দর্শন ঋষি কণাদ , পূর্ব মিমাংসা ঋষি জৈমিনি এবং উত্তর মিমাংসা আমাদের দিয়েছেন ঋষি ব্যাসদেব।এই ষড়দর্শন সনাতন ভারতীয় সমাজ কে প্রত্যেক ব্যক্তি , প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ও সমস্ত ব্রক্ষ্মান্ডের শাশ্বত নিয়মের অনুকূলে ক্রমান্বয়ে ব্যক্তি , সমাজ ,রাষ্ট্র ও বিশ্বের বিকাশের পথনির্দেশ দিয়েছে।
প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের এই সংঘর্ষময় পরিস্থিতিতে , ব্যক্তি ভোগলিপ্সার বশবর্তী হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বাত্মক উন্নতির পথ খুঁজে পেতে দিশাহারা।
তাই ভারতের ষড়দর্শনের যুগানুকূল প্রয়োগের উদ্দ্যেশ্যে , সাধারণে পক্ষে বোধগম্য দর্শন ‘একাত্ম মানবদর্শন’ নিয়ে ১৯৬৫ সালে গোয়ালিয়র অধিবেশনে উপস্থিত হয়েছিলেন পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়। ষড়দর্শনের যুগানুকূল ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্তকরণের মাধ্যমে পন্ডিত দীনদয়াল ভারতবর্ষের সমাজনীতি , অর্থনীতি , রাজনীতি , শিক্ষানীতি ,গ্ৰাম-বিকাশের নীতির দিকনির্দেশ করেন।
আমরা জানি , দীর্ঘ বৈদেশিক আক্রমণ শুধু আমাদের ভূমি দখল করেনি , শুধু আমাদের সম্পদ লুঠ করে নি , বিদেশি শত্রুর এই আক্রমণ ছিল সর্বাত্মক। আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি , চিন্তা ভাবনার মধ্যেও একপ্রকারের ঔপনিবেশিকতা , দাসত্ব প্রবেশ করাতে তারা সমর্থ হয়েছিল।
স্বামী বিবেকানন্দ পরাধীন ভারতবর্ষে সনাতন ভারতীয় জ্ঞান-পরম্পরা কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তে ব্যাখ্যা করে সারা বিশ্বের সামনে রেখেছিলেন। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পরেও , আমরা রাষ্ট্র-পরিচালনার বিভিন্ন নীতি তে দেখেছি বৈদেশিক তত্ত্বের অনুকরণ।
এই অবস্থায় পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় এর ‘একাত্ম মানবদর্শন’ দেশকে ‘স্ব’-তন্ত্র অর্থাৎ ভারতবর্ষের নিজস্ব পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনার নীতি দিয়ে দেশ কে আক্ষরিক অর্থে বিদেশি মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন।
তাঁকে ভারতবর্ষের একজন আধুনিক ঋষি বললে অত্যুক্তি হবে না।
আজ , ভারতবর্ষে রাষ্ট্র-পরিচালনায় যে সাংস্কৃতিক উত্থান দেখা যাচ্ছে তার পেছনে ‘জনসঙ্ঘ’ এর এক সফল রাজনীতিক পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় এর যোগদান অনস্বীকার্য।
পন্ডিত দীনদয়াল এর জীবন ছিল , তাঁর দ্বারা প্রচারিত তত্ত্বের জীবন্ত স্বরূপ।
মতাদর্শে অবিচল থেকে যে এক সফল রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পন্ডিত দীনদয়াল।
ভারতবর্ষ কে পরমবৈভবশালী করতে , পুনরায় বিশ্বগুরুর আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে , আমাদের ভারত-আত্মা কে , তার নিজস্ব পদ্ধতিকে জানতে হবে।
পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় ২৫ শে সেপ্টেম্বর , ১৯১৬ সালে নিজ মাতুলালয় রাজস্থানের ধনকিয়ায় জন্মগ্ৰহণ করেন।
বাবা ছিলেন ভগবতী প্রসাদ ও মা ছিলেন রামপ্যায়ারী।
তাঁর পিতা রেলের স্টেশন-মাস্টার ছিলেন।
তাঁর ভাইয়ের নাম ছিল শিবদয়াল।
আড়াই বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান এবং ৮ বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন।
তাঁর ভাই শিবদয়াল নিউমোনিয়া তে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।ফলে দীনদয়াল ১৪ বছর বয়সে অনাথ হয়ে যান।ছোটোবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনা তে আগ্ৰহী ছিলেন। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশোনা তিনি রাজস্থানেই করেছিলেন , পরে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করবার জন্য কানপুরের সনাতন কলেজে ভর্তি হন। তিনি বহু পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন , পুরস্কৃত হয়েছিলেন এবং ছাত্র বৃত্তিও পান। প্রশাসনিক সেবা পরীক্ষায় সফল হবার পরেও তিনি
চাকরিতে যোগ দেন নি।
পিতা-মাতা , ভাই বোন সহ আত্মীয় পরিজনদের অকাল প্রয়াণ , দীনদয়াল জী কে ভাঙ্গতে পারে নি। তাঁর অনাসক্ত বৈরাগী মন সমাজ সেবার মধ্যে নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছিল।
১৯৩৭ সালে তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে পরিচয় করান , মাননীয় ভাউরাওজী দেওরস। মাননীয় বাপুরাও মোঘে , ভাইয়াজী সহস্রবুদ্ধে , নানাজী দেশমুখ ,বাপু যোশী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তখন উত্তরপ্রদেশের সঙ্ঘের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৪১ সালে তিনি B.T ডিগ্ৰী নেন। যিনি ভবিষ্যতে সর্বব্যাপক জীবন-দর্শন শিক্ষা দিবেন স্বদেশ ও বিশ্ব কে , তিনি নিতে গেলেন শিক্ষকের ট্রেনিং!
১৯৪২ সালে পন্ডিত জী উত্তরপ্রদেশের লখীমপুর জেলায় প্রচারক জীবন আরম্ভ করেন।
১৯৪৭ সালে , তিনি প্রান্ত-প্রচারক থাকার সময় সাপ্তাহিক ‘পাঞ্চজন্য’ ও ‘দৈনিক স্বদেশ’ এই দুটি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার পর ; যখন স্বাধীনতা আন্দোলনের মঞ্চ ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ , মহাত্মা গান্ধীর পরামর্শ উপেক্ষা করে একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হলো এবং একটি কাল্পনিক মিশ্র-সংস্কৃতির তত্ত্বে দেশ-পরিচালনা শুরু করলো , তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে এলো স্মরণাতীত কাল থেকে চলে আসা যে সংস্কৃতি হাজারো বৈদেশিক আক্রমণ সত্ত্বেও ভারতবর্ষ কে বাঁচিয়ে রেখেছে , তাকে পুনরুজ্জীবিত করবে কে ?
তখন সারা বিশ্বে সমাজবাদ মতাদর্শের স্রোতধারা।
সোভিয়েত রাশিয়ার উত্থান কে চিরস্থায়ী ভেবে কংগ্ৰেস ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন সমাজবাদ কেই নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বেছে নিয়েছে , তখন সেই প্রতিকূল পরিবেশে ‘জনসঙ্ঘ’ এর মাধ্যমে , শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় সনাতন ভারতীয় দর্শন কে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের পথ দেখালেন।
তিনিই সেই সময় সমাজবাদের সামনে বিচার , বিশ্লেষণের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ রেখেছিলেন।
বিপক্ষের নেতারা জনসঙ্ঘ কে পুঁজিবাদী বলে অপপ্রচার করেছিলো। কিন্তু সমাজবাদ ও পুঁজিবাদ ছাড়াও যে একটি পথ হতে পারে ; যা ভারতবর্ষের নিজস্ব , এমন ধারণা তখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছিলই না। আসলে দীনদয়াল জী যেমন ছিলেন সমাজবাদ বিরোধী , তেমনি ছিলেন পুঁজিবাদ বিরোধী। তাঁর কাছে সমাজবাদ ও পুঁজিবাদ একই মুদ্রার দুই পিঠ ছিল।সমাজবাদের ধারণায় ব্যক্তি সমাজের শত্রু আর পুঁজিবাদ এর ধারণায় সমাজ হয় ব্যক্তির শত্রু।দীনদয়াল জী এই দুটি কেই বিদেশী ও সাম্রাজ্যবাদের দুটি দিক রূপে দেখতেন। তিনি জাতীয় জীবন দর্শনের শূন্যস্থান পূরণ করতে ভারতীয় মতবাদের পরম্পরা কে ‘একাত্ম মানববাদ’ দর্শনের মধ্যে পুনরুজ্জীবিত করতে চেষ্টা করলেন।
‘ ভারতীয় জনসঙ্ঘ’ এর রাজনৈতিক আদর্শ কি হবে ? এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পন্ডিত জী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক পরম পূজনীয় শ্রী মাধব সদাশিব গোলওয়ালকার এর নিকটে পথনির্দেশ চাইতে গেলে ; শ্রী গুরু জী পন্ডিত জী কে এর উত্তর খোঁজার যোগ্যতম উল্লেখ করেন।
শ্রী গুরুজী বলতেন
“অনেকে আমাদের জিজ্ঞাসা করে ,আপনাদের ‘ইজম’ কি ? বুঝতে অসুবিধা হয় না যে প্রশ্নকর্তারা ইউরোপীয় পদ্ধতিতে চিন্তা করার ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে এবং ইউরোপীয় ‘ইজম্’ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের চিন্তা করতে তারা অক্ষম। তারা ভাবতেই পারেনা যে আমাদেরও নিজস্ব চিন্তা-পদ্ধতি আছে ,আমাদের একান্ত আপন সুদৃঢ় এক ভিত্তি আছে যার উপরে আমরা এক আদর্শ রাষ্ট্রীয় জীবন নির্মাণ করতে পারি।
ভারতীয় জনসঙ্ঘ পন্ডিত দীনদয়াল এর নেতৃত্বে , শ্রী গুরুজীর দেখানো পথেই পা বাড়ালো।
১৯৫২ সালে কানপুর অধিবেশনে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ভারতীয় জনসংঘের সর্বভারতীয় সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দেন।
ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মৃত্যুর পরে জনসঙ্ঘের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দীনদয়াল জীর উপর এসে পড়ে। তাঁর নেতৃত্বেই ‘ ভারতীয় জনসঙ্ঘ’ এক শক্তিশালী দল রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
একাত্ম মানবতাবাদের প্রণেতা , মার্গদর্শক , রাষ্ট্র ভক্ত, রাজনৈতিক কর্মযোগী , দক্ষ সংগঠক পন্ডিত হিসেবেই দীনদয়াল জী র পরিচিতি ছিল।
জরুরী অবস্থার সময় সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পরিবেশে সংবিধানে ‘Secular’ কথাটি যুক্ত করা হয় যার অর্থ ‘not concerned with religion’ অর্থাৎ রিলিজয়নের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন। যেহেতু রিলিজিয়ন, ধর্ম শব্দের সঠিক প্রতিশব্দ নয় তাই Secular শব্দের অর্থ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। এইকথা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় বহুবার বলেছেন—–
“ইংরেজি শব্দ Religion ধর্মের সঠিক প্রতিশব্দ নয়।
ধর্মের নিকটতম সমতুল্য ইংরেজি শব্দটি হতে পারে ‘সহজাত নিয়ম’ , যদিও এটি ধর্মের সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে না। যেহেতু ধর্ম সর্বোত্তম, তাই আমাদের রাষ্ট্রের আদর্শ হল ‘ধর্মরাজ্য’।
ধর্ম একটি বিস্তৃত ধারণা যা সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জীবনের সমস্ত দিককে প্রভাবিত করে।
ভারতে নীতিশাস্ত্রের নীতিগুলিকে ধর্ম বলে অভিহিত করা হয়েছে – জীবনের নিয়ম।
ধর্মের মৌলিক নীতিগুলি চিরন্তন এবং সার্বজনীন। তবে, সময়, স্থান এবং পরিস্থিতি অনুসারে তাদের বাস্তবায়ন ভিন্ন হতে পারে।
Religion মানে একটি মত বা সম্প্রদায় এবং এর অর্থ ধর্ম নয়”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক একই কথা বিভিন্নভাবে বলেছেন —- গীতায় জ্ঞান প্রেম ও কর্মের মধ্যে যে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য-স্থাপনের চেষ্টা দেখি তাহা বিশেষরূপে ভারতবর্ষের। য়ুরোপে রিলিজন বলিয়া যে শব্দ আছে ভারতবর্ষীয় ভাষায় তাহার অনুবাদ অসম্ভব; কারণ, ভারতবর্ষ ধর্মের মধ্যে মানসিক বিচ্ছেদ ঘটিতে বাধা দিয়াছে–আমাদের বুদ্ধি-বিশ্বাস-আচরণ, আমাদের ইহকাল-পরকাল, সমস্ত জড়াইয়াই ধর্ম। ভারতবর্ষ তাহাকে খন্ডিত করিয়া কোনোটাকে পোশাকি এবং কোনোটাকে আটপৌরে করিয়া রাখে নাই।
(ভারতবর্ষের ইতিহাস)
Secular শব্দের অর্থ তাই পন্থনিরপেক্ষ, কোনোভাবেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নয়।
১১ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮ সালে দীনদয়াল জী কে ট্রেনের মধ্যে হত্যা করা হয়।
মুঘলসরাই স্টেশনে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়।
আমরা পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের স্লোগান শুনে থাকি ‘লড়াই চাই , লড়াই চাই , লড়াই করে বাঁচতে চাই’।সমাজ কি এই লড়াই এর মানসিকতা নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ? এই মতাদর্শ কে আশ্রয় করে কমিউনিস্ট রা তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া , পূর্ব জার্মানি তে ক্ষমতাসীন হয়েছিল।আজ সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়েছে ; পূর্ব জার্মানি , পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমান চীনে ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ‘করোনা’ মহামারী একটি কমিউনিস্ট দেশেরই দান!
সাম্যবাদ যে সাম্রাজ্যবাদেরই অন্য রূপ তা চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমি দখলের চেষ্টায় প্রমাণিত।
বর্তমানে কেরলে দেশবিরোধী শক্তির বাড়বাড়ন্ত ।
কমিউনিজম এর তত্ত্ব যখন দুনিয়া জুড়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে , সেই অবস্থায় এমন কি কোনো তত্ত্ব আছে যা সমাজে লড়াই নয়, শ্রেণী সংগ্ৰাম নয় একাত্মতার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ , উভয়কেই পরিপুষ্ট করবে ?সমাজবাদ ও পুঁজিবাদ ভিন্ন সেই পথ কোনটা ?সেই পথ ‘একাত্ম মানববাদ’ এর পথ।
বর্তমানে , আমরা দেখতে পাচ্ছি হিন্দি চলচ্চিত্র জগতকে ভোগবাদী মানসিকতা গ্ৰাস করেছে । চলচ্চিত্র , আমাদের দেশের সংস্কৃতি , ইতিহাস , সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করবে এটাই কাম্য। ব্যক্তি-স্বাধীনতা যাতে কোনোভাবেই সমাজ ও রাষ্ট্র হিতের পরিপন্থী না হয় , সেই শিক্ষা দেওয়াই উদ্দ্যেশ্য হওয়া উচিত।
কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি , আমাদের যুবসমাজ যাদের অনুকরণে সদা-ব্যস্ত , সেই সমস্ত পর্দার নায়ক-নায়িকাদের জীবনচর্যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি করছে না , সমাজ কেও বিপথে চালিত করছে। পর্দার চরিত্র কে আসল ব্যক্তির সঙ্গে যেন আমরা এক করে না দেখি।
এই অবস্থায় পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় এর ‘একাত্ম মানবদর্শন’ সমাজের সর্বক্ষেত্রে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
দীনদয়াল উপাধ্যায় এর মতো ত্যাগব্রতী ঋষি কে অনুসরণ এবং তাঁর দর্শনকেই আমাদের জীবনে প্রয়োগ করা উচিত।
অখন্ড ভারতবর্ষের ভিত্তি সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ বোঝাতে পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় ‘একাত্ম মানবদর্শন’ পুস্তকে এইভাবে বুঝিয়েছেন—-
“একদিন এক খরিদ্দারের দাড়ি কামাইবার সময় এক নাপিত গর্ব করিয়া বলিতেছিল যে তাহার খুরটির বয়স ষাট বৎসর।খরিদ্দার বিস্মিত হইয়া প্রশ্ন করিল “খুরটির হাতলটি তো খুব চকচকে। তুমি ষাট বৎসর কেমন করে এমন চকচকে করে রাখলে?” নাপিত কৌতুকবোধ করিয়া বলিল তাও কি সম্ভব ? হাতলটা ছয় মাস পূর্বে বদল করা হয়েছে।”
খরিদ্দার তখন কৌতুহলী হইয়া উঠিয়াছে। সে প্রশ্ন করিল ,”ইস্পাত টি কতদিনের?”উত্তর হইল ,”তিন বৎসর পূর্বের”। অর্থাৎ হাতল বদলাইয়াছে , ইস্পাত বদলাইয়াছে কিন্তু ক্ষুরের পরিচয় বদলায় নাই। ঠিক সেইরকম প্রত্যেক জাতির একটি আত্মা আছে ইহার একটি বিশিষ্ট নাম আছে।”
পন্ডিত দীনদয়াল এই বৈশিষ্ট্য কে জাতির ‘চিতি’ অর্থাৎ চৈতন্য রূপে অভিহিত করেছেন যা তার নিজস্ব প্রকৃতি এবং কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার পরিণতি নয়। স্বাধীনতার সময় দেশভাগ হলেও সনাতন অখন্ড ভারতবর্ষের সেই ‘চিতি’ আজো অক্ষুন্ন। শুধু আমাদের মনের মধ্যে সেই চেতনা কে পালন করা প্রয়োজন।
পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় নিজের জীবনের একটি ভাষণে বলেছিলেন…….
“আমরা অতীত গৌরবে অনুপ্রাণিত কিন্তু উহাকেই ভারতের জাতীয় জীবনের সর্বোচ্চ বিন্দু বলতে রাজি নই। আমরা বর্তমানের প্রতি নিষ্ঠাবান কিন্তু তাতেই সীমাবদ্ধ নই।আমাদের চোখে ভবিষ্যৎ এর সোনালী স্বপ্ন রয়েছে কিন্তু আমরা তন্দ্রাচ্ছন্ন নই । বরং স্বপ্নকে রূপ দেবার জন্য জাগ্রত কর্মযোগী। অনাদি অতীত , অস্থির বর্তমান আর চিরন্তন ভবিষ্যতের কালজয়ী সনাতন সংস্কৃতির আমরা পূজারী । আমরা কোনো সম্প্রদায় বা মতাবলম্বীদের সেবার জন্য নই , পরন্তু সমগ্র জাতির জন্য সেবাব্রত গ্রহণ করেছি । সকল দেশবাসী আমাদের বান্ধব।যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই সব বন্ধুদের ভারতমাতার সুসন্তান হওয়ার প্রকৃত গৌরবের অধিকারী করছি , ততক্ষণ আমরা নীরবে বসে থাকব না। আমরা ভারতমাতাকে যথার্থই সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা করবো। তিনি দশপ্রহরণধারিণী রূপে অসুর সংহার করবেন ; লক্ষ্মী রূপে জনে জনে সম্বৃদ্ধি দান করবেন ; সরস্বতী হয়ে অজ্ঞানান্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো ছড়াবেন । হিন্দু মহাসাগর ও দেবতাত্মা হিমালায় পরিবেষ্টিত ভারত ভূমিতে যতদিন পর্যন্ত একাত্মতা , সমত্ববোধ , জ্ঞানবত্তা , সুখ ও শান্তির জাহ্নবীর পুণ্যপ্রবাহ না বইয়ে দিতে পারি , ততক্ষণ আমাদের ভগীরথের তপস্যা পূর্ণ হবে না ।এই প্রয়াসে ব্রক্ষ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর সবাই আমাদের সহায় হবেন । জয়ের বিশ্বাস ও তপস্যার আশ্বাস নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।”
????????পিন্টু সান্যাল