চাঁদে যান পাঠিয়ে কী লাভ, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর কী করবে রোভার প্রজ্ঞান? ইসরোর উদ্দেশ্য ও বিধেয়

চাঁদের নাগাল পেতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি চন্দ্রযানের। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পাখির পালকের মতো নামার কথা ল্যান্ডার বিক্রমের। ইতিহাসের সাক্ষী হতে প্রতীক্ষায় সারা দেশ। আগের চন্দ্রযানের আপাত ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি এ বার হবে না বলেই আশায় বুক বাঁধছে আমজনতা। তবে পুরনো ভুল সংশোধন করে এই চন্দ্রাভিযান নিয়ে বেশ আশাবাদী ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ইসরোর বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, চাঁদের বুকে ‘আসল কাজ’ শুরু হবে রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে নামার পরে।

সাবধানী বিক্রম

পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আগাম সতর্কতা নিয়েই ল্যান্ডারকে চাঁদের বুকে নামাচ্ছে ইসরো। স্বয়ংক্রিয় ভাবে সব কাজ অবশ্য নিজেই করবে বিক্রম। চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ার বেশ কিছু সময় আগে থেকেই অবতরণের অনুকূল জায়গা খুঁজবে সে। জায়গাগুলির ছবি তুলে বোঝার চেষ্টা করবে সেখানে কোনও খানাখন্দ রয়েছে কি না।

বিকল্প ব্যবস্থা

ইসরোর এক শীর্ষ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, যদি চাঁদে নামার মতো অনুকূল পরিস্থিতি না থাকে, তবে অবতরণ প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৭ অগস্ট (রবিবার) চাঁদে নামবে বিক্রম।

বিক্রমের পেটে প্রজ্ঞান

চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার বিক্রম নামার পরেই, তার একটি অংশ স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে যাবে। একটি ঢালু জিনিস নেমে আসবে চাঁদের মাটিতে। আর ওই ঢালু পথ বেয়েই চাঁদের বুকে নেমে আসবে রোভার প্রজ্ঞান।

হাঁটি হাঁটি ছ’টি পা

চাঁদের মাটিতে নেমে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটাচলা শুরু করবে প্রজ্ঞান। ছ’টি চাকায় ভর করে প্রতি সেকেন্ডে ১ সেন্টিমিটার পথ পাড়ি দেবে সে।

চন্দ্রলোকে তেরঙ্গা

রোভারের সঙ্গে থাকবে একাধিক দিকনির্দেশক স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা। চাঁদের মাটিতে অনুসন্ধান চালাবে সে। চাঁদের মাটিতে প্রজ্ঞানই এঁকে দেবে ভারতের জাতীয় পতাকা এবং ইসরোর লোগো। প্রজ্ঞান চাঁদ থেকে যা যা তথ্যসংগ্রহ করবে, তার সব কিছুই পাঠিয়ে দেবে ল্যান্ডার বিক্রম। বিক্রম সেই বার্তা পাঠাবে পৃথিবীতে।

মূলত কী কাজ করবে প্রজ্ঞান

একাধিক বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নিয়ে চাঁদে নামছে রোভার। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চাঁদের ভূমিরূপ কী ভাবে তৈরি হয়েছে, কোন কোন উপাদান দিয়ে চাঁদের মাটি তৈরি, তা খতিয়ে দেখে বার্তা পাঠাবে প্রজ্ঞান। আগামী দু’সপ্তাহ ধরে স্পেকট্রোমিটার বিশ্লেষণের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে কোন ধরনের খনিজ বস্তু আছে, তা খুঁটিয়ে দেখবে সে। এই সমস্ত পরীক্ষাগুলি করার জন্য ল্যান্ডার এবং রোভারের সঙ্গে রয়েছে পাঁচটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ল্যান্ডার সফল ভাবে অবতরণ করলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসাবে পা রাখবে ভারত। এত দিন চাঁদের অনাবিষ্কৃত এই দিকটিতে কোনও দেশের চন্দ্রযানই পা রাখেনি। ভবিষ্যতে যদি গবেষণা এবং সম্পদের নিরিখে চাঁদের এই এলাকা বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্ব পায়, তবে ভারত সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.