#পর্ব_১
আমার বধূ হাল বাহে কেঁদ কানালীর ধারেগ
টপাটপ ঘাম ঝরি পড়ে।
দেখি দেখি হিয়া আমার কাঁদে গ
হিয়া বড় কাঁদে॥
সমাজ সংস্থানের বস্তু ভিত্তি হল ধন-সম্পদ । এই ধন সম্পদ যে শুধু ব্যক্তির পক্ষে তার জীবন ধারণ , শিক্ষাদীক্ষা, ধর্ম-কর্ম ইত্যাদির নিমিটি অপরিহার্য তাই নয়, একটি গোষ্ঠী ও সমাজের পক্ষে এটি সমানভাবে অপরিহার্য । সমাজ নিরপেক্ষ মঙ্গলের নিমিত্ত অথবা তপশ্চর্যা বিশুদ্ধ ধর্ম জীবনযাপনের জন্য কোন উদ্দেশ্যে সমাজের বাইরে একান্ত ভাবে জীবন যাপন করেন তাঁদের কেউ কেউ এমন মুক্ত পুরুষ আছেন যাঁরা ধন কামনা করেন না। কিন্তু সমাজ ইতিহাসে তাঁরা আলোচনার বিষয় নন। বাঁচার জন্য ,অন্ন বস্ত্র বাসস্থান একান্ত প্রয়োজন ।সামাজিক নানা বিধিবিধান, প্রয়োজন আয়োজন দ্বারা শাসিত সমাজ ধর্মী যে ব্যক্তি…তাঁর দৈনন্দিন জীবনে ধন-সম্পদ অপরিহার্য বস্তু। কেবলমাত্র রত্ন ,মুদ্রা ,ধাতু, টাকা ইত্যদিকেই ধন সম্পদ বলে না। ধন সম্পদ বলতে কিছু উপাদানকে বোঝায় ,যেরকম – কৃষি , শিল্প , ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ।
অর্থ সম্পদ ব্যতীত সমাজ রাষ্ট্র বিকল হয়ে পড়বে । যাঁরা সমাজ পরিচালনা করেন অর্থাৎ প্রশাসক, শিক্ষক , কৃষক , শ্রমিক , কুমোর, মুচি, ঝাড়ুদার প্রমুখদের কায়িক অথবা মানসিক শ্রমের জন্য বেতন দিতে হবে এবং তা মুদ্রা দিয়ে হোক বা শস্য দিয়ে বা প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দিয়ে। শুধু রাষ্ট্রের কথা বলি কেন, ধর্ম, কর্ম, শিল্প ,শিক্ষা-সংস্কৃতি ,কিছুই এই সম্পদ ছাড়া চলতে পারে না এবং সমাজ সংস্থানের যে কোন ব্যাপারেই একথা সত্য।
কৃষি ও ভূমিজাত সম্পদই একটি সমাজ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। তাই আজ কৃষি ও ভূমিজাত দ্রব্য তথা বাংলার বেশ কিছু লুপ্ত ও লুপ্ত প্রায় শস্য নিয়ে আলোচনা করব। ভারত হল একটি কৃষি প্রধান দেশ। সুপ্রাচীনকালের বেদ , রামায়ন, মহাভারতে বার বার ভূমির উর্বরতার কথা বলা হয়েছে। কৃষি ও তদবিষয়ক নানা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে।
সুপ্রাচীন কাল থেকে তাই বৈদিক ঋষিরা সমগ্র বিশ্বজগতের কল্যাণের জন্য মন্ত্র উচ্চারণ করতেন
ভূমি-মঙ্গলম / উদক-মঙ্গলম / অগ্নি-মঙ্গলম / ভ্যু-মঙ্গলম/ গগনা-মঙ্গলম / সূর্য- মঙ্গলম/ চন্দ্র মঙ্গলম / জগ-মঙ্গলম/ জীবন-মঙ্গলম / দেহা-মঙ্গলম / মানো-মঙ্গলম /আত্মা-মঙ্গলম / সর্ব-মঙ্গলম ভবতুহ ভবতুহ ভবতুহ স্বাহা সর্বমঙ্গলম ভবতুহ ভবতুহ ভবতুহ স্বাহা ভবতুহ ভবতুহ……
কৃষিকাজ একটি সভ্য সমাজের স্থিতিস্থাপকতার প্রথম ও অন্যতম লক্ষণ। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে মানুষ যখন গুহাবাসী ভারতবাসী তখন ছিল উন্নত কৃষি ব্যবস্থার ধারক। শুধু কৃষির উল্লেখ নয় শস্য, চাষ, সেচ, খাল, নালি, কূপ, জলাধার ও শস্যাধার- কৃষি সম্পর্কিত সকল বিষয় বেদ বর্ণনা করেছে, যা থেকে প্রমাণ হয় যে বৈদিক যুগে কৃষিব্যবস্থা বহুগুণে উন্নত ছিল। কৃষি সম্পর্কিত বেদের কিছু মন্ত্র-
হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা আর্যদের জন্য লাঙ্গল দ্বারা চাষ ও যব বপন করিয়ে অন্নের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করে এবং বজ্র দ্বারা দস্যুকে বধ করে তার প্রতি বিস্তীর্ণ জ্যোতি প্রকাশ করেছ। ঋগ্বেদ, ১/১১৭/২১
বলীবর্দসমূহ সুখে বহন করুক, মনুষ্যগণ সুখে কার্য করুক, লাঙ্গল সুখে কর্ষণ করুক। ঋগ্বেদ, ৪/৫৭/৪
ফাল সকল সুখে ভূমি কর্ষণ করুক, রক্ষকগণ বলীবর্দের সাথে সুখে গমন করুক, পর্জন্য মধুর জল দ্বারা পৃথিবী সিক্ত করুক। ঋগ্বেদ, ৪/৫৭/৮
লাঙ্গলগুলি যোজনা কর, যুগগুলি বিস্তারিত কর, এস্থানে যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে তাতে বীজ বপন কর, আমাদের স্তবের সাথে আমাদের অন্ন পরিপূর্ণ হোক, কাস্তে নিকটবর্তী পক্বশস্যে পতিত হোক। ঋগ্বেদ, ১০/১০১/৩
হে দ্যূতকার ! পাশা খেল না, বরং কৃষিকার্য কর। ঋগ্বেদ, ১০/৩৪/১৩
কৃষিতে জলসেচ তথা ঘটিচক্রের ব্যবহার প্রথম বেদে পাওয়া যায় যা বর্তমানের পাওয়ার পাম্পের প্রাচীনরূপ। ঘটিচক্রের পরিধিতে অনেক ঘটি থাকে ঘূর্ণনের কারণে জলের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে জলপূর্ণ হয়ে তা পুনরায় উপরে জল ঢেলে দেয় ।
যেরূপ যুদ্ধের সৈন্যগণ বারবার অগ্রসর হয় অথবা ঘটিচক্র শ্রেণিবদ্ধ হয়ে অগ্রপশ্চাতভাবে উঠতে থাকে, আমার স্তবগুলিও সেরূপ। ঋগ্বেদ, ১০/৯৩/১৩
লাঙ্গল ও জলসেচ ব্যবস্থা সেসমাজে এত পরিচিত সেসমাজকে আর যাই বলা হোক যাযাবর পশুপালক বলা সম্ভব নয়। কারণ এই সমাজই শস্য জমা রাখার পদ্ধতিও তৈরি করেছিল যা বর্তমানে হিমাগারের সাথে তুলনা করা চলে।
হে অধ্বর্যুগণ! ইন্দ্র স্বর্গীয় ও অন্তরীক্ষস্থ এবং পৃথিবীস্থ ধনের রাজা যবদ্বারা যেরূপ শস্য রাখবার স্থান পূর্ণ করে, ইন্দ্রকে সোম দ্বারা সেরূপ পূর্ণ কর। ঋগ্বেদ,২/১৪/১১
সুপ্রাচীন ভারতের অন্যতম উর্বর ভূমি ছিল বাংলা। বাংলার সম্পদ উৎপাদনে কৃষিই প্রধান ও প্রথম উপায় ছিল ।তার প্রমাণ লেখমালাগুলিতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত । অষ্টম থেকেত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত লেখমালা গুলিতে #ক্ষেত্রকারণ , #কর্ষকান, #কৃষকান ইত্যাদি শব্দ বার বার উল্লেখ আছে। সেই কালে জনসাধারণ যে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল তাদের মধ্যে #ক্ষেত্রকর বা কৃষকেরা ছিলেন একটি বিশেষ শ্রেণী । কোন স্থানে ভূমি দান অথবা বিক্রয় করতে হলে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে এই ক্ষেত্রকর বা কৃষকদের সে ব্যাপারে বিজ্ঞাপিত করতে হতো। উদাহরণস্বরূপ : খালিমপুরে প্রাপ্ত ধর্মপালের লিপি …সেখানে বিজ্ঞপ্তি তে বলা হয়েছে –
” এষু চতুর্ষু গ্রামেষু সমুপগতান সর্বানেব রাজ – রাজনক- রাজপুত্র- রাজমাত্য- সেনাপতি- বিষয়পতি- ভোগপতি- ষষ্ঠাধিকৃত- দন্ডশক্তি- দন্ডপাশিক- চৌরোদ্ধরণিক -দৌসসাধসাধনিক- দূত -খোল -গমগমিকা ভিত্বরমান -হস্ত্যশ্ব -গোমহিষাজাবিকাধ্যক্ষ -নাকাধ্যক্ষ- বলাধ্যক্ষ- তরিক- শৌল্কিক- গৌল্মিক -তদায়ুক্তক -বিনিয়ুক্তকাদি -রাজপাদপোজীবী- নোহন্যাংশচা -কীর্তিতান- চাটভট -জাতীয়ান- যথাকালধ্যাসিনো -জ্যেষ্ঠকায়স্থ -মহামহত্তর -মহত্তর -দাশগ্রামিকাদি- বিষয় -ব্যবহারিনঃ -সকরনান- প্রতিবাসীনঃ ক্ষেত্রকরাংশচ- ব্রাহ্মণ- মাননাপূর্বকং যথাহং -মানয়তি বোধয়তি সমাজ্ঞাপয়তি চ।”
এই ধরনের উল্লেখ প্রায় প্রত্যেক তাম্রপট্টলীতেই আছে। কিন্তু সর্বাপেক্ষা ভালো প্রমাণ লোকের ভূমির চাহিদা। পঞ্চম থেকে সপ্তম শতক পর্যন্ত যত ভূমিদান বা বিক্রয় তাম্রপট্টলী পাওয়া যায়, সর্বত্রই দেখা যায় ভূমিযাচকবাস্তু অপেক্ষা খিলক্ষেত্র অধিক পরিমানে চাইছেন।অর্থাৎ তাঁর উদ্দেশ্য কৃষিকর্ম তা সহজেই অনুমান করা যায় ।
ধনাইদহ পট্টলী ( ৪৩২-৩৩ খ্রী) ,দামোদরপুরে প্রাপ্ত প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম পট্টলী (৪৪৩-৪৪ ; ৪৮৩-৮৩ ; ৫৪৩- ৪৪ খ্রী ) ধর্মদিত্যের প্রথম ও দ্বিতীয় তাম্রপট্টলী ( সপ্তম শতক) , গোপচন্দ্রের তাম্রপট্টলী ( সপ্তম শতক) ইত্যাদিতে
খিলক্ষেত্র প্রার্থনা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য যেখানে বাস্তু ও খিল উভয়ই প্রার্থনা করা হয়েছে সেখানেও খিলক্ষেত্রের পরিমাণ বাস্তুর প্রায় ১২ গুণ …..পরবর্তীকালে তাম্রপট্টলীগুলিতে যে ভূমির পরিমাণ সমগ্রভাবে পাওয়া যায় সেই ভূমির কতটুকু খিল কতটুকু বাস্তু তা পরিষ্কার করে বলা নেই। তবুও দত্ত ও ক্রীত ভূমির যে বিবরণ আমরা লিপিগুলিতে পাই তাতে মনে হয় অধিকাংশ সময় খিলভূমির কথাই বলা হয়েছে।
তাছাড়া কৃষির প্রাধান্য সম্বন্ধে অন্য একটি অনুমান উল্লেখ করা যেতে পারে ।ভূমির পরিমাণ সর্বত্র ইঙ্গিত করা হচ্ছে এক মানদণ্ডের মাধ্যমে যা কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন- কুল্যবাপ ,দ্রোনবাপ, আঢ়বাপ বা আঢ়কবাপ, উন্মান বা উয়ান। এসমস্ত মান শস্য সম্পর্কিত।
ডাক ও খনার বচন গুলিতে প্রাচীন বাংলার কৃষি প্রধান সমাজের অন্যতম প্রমাণ।
যেমন –
খনা বলে মুন কৃষকগণ।
হাল লয়ে মাঠে বেরুবে যখন।
শুভ দেখে করবে যাত্রা।
না শুন কানে অশুভ বার্তা।
ক্ষেতে গিয়ে কর দিক নিরূপণ।
পূর্ব দিক হতে হাল চালন।
নাহিক সংশয় হবে ফলন।
চালায় চালায় কুমুড়ম পাতা
লক্ষ্মী বলেন আছি তথা ॥
আখ, আদা, পুঁই,
এই তিন চৈতে রুই ॥
চৈত্রে দিয়া মাটি
বৈশাখে কর পরিপাটি ॥
দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ
কমে না বাড়ে বারো মাস ॥
যে ভাষায় আমরা এখানে বচনগুলি পাই তা অর্বাচীন সন্দেহ নেই । কিন্তু এগুলি ছিল জনসাধারণের মুখে মুখে ও বংশপরম্পরায়। ভাষার অদল বদল হয়ে বর্তমানে তা যে রূপ নিয়েছে তা মধ্যযুগীয় । এই বচন প্রাচীন স্মৃতি বহন করে আনে তাতে সন্দেহ নেই ।
বাঙালির বারো মাসে যেমন তেরো পার্বণ রয়েছে ,তেমনি বারো মাসে রয়েছে অসংখ্য প্রকারের কৃষি ফসল ।বারো মাস ধরে বাঙালির চাষের জমিতে আর পৃথিবী মাতার কোলে অজস্র ফসলউৎপন্ন হয়। কোন কোন ঋতুতে কি কি ফসল বুুুুনতে হবে ? কোন শস্যের জন্য কি পরিমান ভূমি প্রয়োজন ? কি পরিমাণ জল, সার ,রৌদ্র প্রয়োজন সেই নির্দেশনামূলক আবহাওয়াতত্ব , ভূতত্ত্ব , নানা শস্যের নাম , কৃষিসমাজের বিচিত্র ছবি ইত্যাদি বচনগুলিতে পাওয়া যায়।
কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘চন্ডীমঙ্গলে’ লিখেছেন :
সরকার হইল কাল খিলভূমি লিখে লাল
বিনি উপকারে খায় ধুতি।
পোতদার হইল যম টাকা আড়াই আনা কম
পাই লভ্য লয় দিনপ্রতি॥
মরি-বাঁচি চাষিরা পালাতে উদ্যোগী হলো। তাদের পথ আগলে দাঁড়াল পেয়াদারা।
বাংলা নদীমাতৃক এবংর ইহার ভূমির সাধারণত নিম্ন এবং কৃষির পক্ষে অনুকূল। ভৌগোলিক স্থান সম্পর্কে এবং ভূমির উর্বরতা সম্পর্কে পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের লেখায় বহু উল্লেখ আছে। পরিব্রাজক বাংলার শস্য সম্পর্কে উল্লেখ উল্লেখ করেছিলেন। পূর্ব ভারতে যে কয়েকটি দেশে তিনি পরিভ্রমণ করেছিলেন তার মধ্যে চারটি বর্তমান বাংলাভাষী জনপদের অবস্থান করে ….
১. পুন্ড্রবর্ধন ২. সমতট ৩. তাম্রলিপ্ত ৪. কর্ণসুবর্ণ
তাছাড়াও আরো একটি স্থানের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন সেটা হল #কজঙ্গল বা কাজঙ্গল। কানিংহামসাহেব একেই কাঁকজোল বা রাজমহলের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেছেন।
সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতে এক কজঙ্গল রাজার উল্লেখ আছে । কিছু কিছু বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে ও উল্লেখ আছে কজঙ্গল নামের । ভবিষ্যপুরাণে #রাঢ়িজাঙ্গালের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রাঢ়িজাঙ্গাল ভাগীরথীর পশ্চিমে ,
কীকট ও মগধ দেশের নিকটে। এখানেই আছে বৈদ্যনাথ, বক্রেশ্বর , বীরভূমি , অজয় ও অন্যান্য নদী। এর তিনভাগ জঙ্গল এবং এক ভাগ গ্রাম ও জনপদ।এর অধিকাংশ ভূমি ঊষর, স্বল্প ভূমি উর্বর। হিউয়েন সাং এর মতে ইহাই কজঙ্গল। রাঢ়দেশের উত্তর খণ্ডের জঙ্গলময় ঊষর ভূমি রাজমহল সাঁওতালভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইহার অনেকটাই বর্তমান বাংলার অন্তর্গত বলে ধরে নেওয়া যায়। এই মন্তব্যের সমর্থনে আমরা ভট্ট ভবদেবের ভুবনেশ্বর লিপিতে পাই। ভবদেব এই ঊষর অঞ্চলের উপকণ্ঠে একটি জলাশয় খনন করে দিয়েছিলেন।
কজঙ্গল সম্পর্কে হিউয়েন সাং বলেছেন এদেশের শস্যসম্ভার ভালো পুন্ড্রবর্ধনের বর্ধিষ্ণু জনসমষ্টি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং এদেশে সুপ্রচুর শস্যভান্ডার ফলফুল তাও তিনি লক্ষ্য করেছিলেন।সমতট ছিল সমুদ্র তীরবর্তী দেশ এবং এ দেশের উৎপাদিত শস্য সম্বন্ধে তিনি কিছুই বলেননি । তাম্রলিপ্ত ছিল সমুদ্রের এক খাঁড়ি উপরে। এখানে কৃষিকর্ম ভালো ছিল। স্থলপথ ও জলপথ বাণিজ্যের দরুন এখানে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল বলে নানা দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যাদি এখানে এখানকার অধিবাসীরা ছিল সম্পন্ন ও বর্ধিষ্ণু। কর্ণসুবর্ণের মানুষেরা ছিল ধনী এবং জনসংখ্যা ছিল প্রচুর ……সেখানে কৃষিকর্ম ছিল নিয়মিত ঋতুভিত্তিক এবং ফলমূল সম্ভার ছিল প্রচুর । সুতরাং দেখা যাচ্ছে হিউয়েন সাং কৃষি প্রাধান্যের দিকেই আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সর্বত্র শস্য সম্ভারের উল্লেখ করেছিলেন এক সমতট ছাড়া। তাম্রলিপ্তের সমৃদ্ধি কেবল কৃষি নয় তাও লক্ষ্য করেছিলেন এবং সেই জন্যই দেশের অন্তর বাণিজ্য ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রতি ইঙ্গিত ।করেছিলেন।
এই উর্বর বাংলার বুকে বহু কৃষিজাত শস্য উৎপন্ন হতো এবং হয় , তবে তার বহু শস্য বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে । আমি এই প্রবন্ধে পরের পর্বে সেই সমস্ত বিলুপ্ত গুলিকে নিয়ে আলোচনা করব……
আর বাক্য বলি পুত্র শুনরে নিশ্চয়।
কাষ্ঠের লাঙ্গল লোহার ফাল মাটিতে না রয়॥
পুষ্কানি মুহাল দিয়া জল বহিয়া যায়
মুহাল বাঁধিলে জল চিরকাল রয়॥
#ক্রমশঃ
#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ বাংলার ইতিহাস : আদি পর্ব
বাংলার সংস্কৃতি : লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায়