একশো দিনের প্রকল্পের মজুরি থেকে আবাস যোজনার টাকা আটকে দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগ তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বর্ধমানে এসে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি রাজ্যের কোর্টেই বল ঠেললেন। তাঁর দাবি, ‘‘এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, একশো দিনের কাজের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ, তারা অডিট রিপোর্টই দিচ্ছে না। রিপোর্ট জমা দিলেই কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেবে। একই কথা প্রযোজ্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও।’’ তাঁর আরও দাবি, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোনও রাজ্য ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র নাম বদল করেনি।
যদিও নবান্ন সূত্রের দাবি, প্রকল্পের টাকা কী ভাবে খরচ হল, তা অডিট করিয়ে কেন্দ্রকে পাঠানো হয়। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘এ ধরনের প্রকল্পে যা নথি এবং তথ্যপ্রমাণ দরকার হয়, সবই কেন্দ্রকে দেওয়া হয় এবং হয়েছে। এখন যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে আগে বলা হয়নি কেন? প্রতি বার এসে নতুন নতুন কথা বলবেন, অথচ মানুষকে বিপদে ফেলবেন!’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘প্রকল্পে প্রধাননন্ত্রীর নাম না দিলে টাকা দেওয়া হবে না, এটা কী যুক্তি? রাজ্য সরকার কারও নাম নেয়নি, বরং ‘বাংলা’র নাম উল্লেখ করেছে।’’ রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কাজের ১৫ দিনের মধ্যে একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি দেওয়ার নিয়ম। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য না রেখে, গরিব মানুষদের মজুরির টাকা দিলে তাঁরা উপকৃত হবেন।’’
নবান্ন সূত্রের দাবি, ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১০০ দিনের কাজে মজুরি বাবদ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। ২০২১ সালের ১৪ অগস্ট থেকে ইমারতি দ্রব্যের টাকাও আটকে রাখা হয়েছে। মোট ৭৩০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে বকেয়া। প্রায় সওয়া কোটি বৈধ জব কার্ডধারীর মজুরি আটকে রয়েছে। যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, “তিনবছর ধরে কেন্দ্রকে রাজ্য একশো দিনের প্রকল্পের হিসাব দেয়নি। অন্য কোনও রাজ্যের টাকা আটকাচ্ছে না। সোজা কথা— হিসাব দিন,টাকা নিন।’’
২৭ জুন বর্ধমানে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ১০০ দিনের প্রকল্পের মতো বাংলা আবাস যোজনা, বাংলা সড়ক যোজনার টাকাও আটকে রাখা হয়েছে। সমাধানের জন্য সাংসদদের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন। তেমন হলে তিনি নিজেও দিল্লি যাবেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আবাস যোজনায় গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে নিজেদের রাজ্যের নাম থাকলে ‘বাংলা’ নামে কেন্দ্রের আপত্তি কীসের?
কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, “পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোনও রাজ্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম বদল করেনি। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানও করেনি।’’