এখনও বেঁচে রয়েছেন এটা ভাবতেই যেন অবাক লাগছে জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ার বাসিন্দা কুলদীপ সিংয়ের। কারণ জীবনের ২৯ টি বছর তাঁর কেটেছে পাকিস্তানের জেলে। দিনের পর দিন অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করে শেষপর্যন্ত ঘরে ফিরেছেন কুলদীপ। পরিবারের লোকজন তাঁরে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলেও জেল জীবনের কথা মনে পড়লে এখনও আঁত্কে ওঠেন কাঠুয়ার এই বাসিন্দা।
১৯৯২ সালে ভুল করে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন পাক সীমানায়। তার পর থেকে প্রায় তিন দশক তাঁকে কেটেছে লাহরের কুখ্যাত কোট লাখপত জেলে। এই জেলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন সর্বজিত সিং। তিনিও ভুলে করে পঞ্জাব সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন পাকিস্তানে। মৃত্যু আগে তার উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়।
সীমান্ত পার অন্যান্য ভারতীয়দের মতোই কুলদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে চরবৃত্তির অভিযোগ এনেছিল পাক সেনা। পরপর চারবার তার বিচার হয়েছে পাক আদালতে। ২৫ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের তত্পরতায় মুক্তি পেয়েছেন গত ২০ ডিসেম্বর।
এই তিন দশকে তাঁর উপরে কী পরিমাণ অত্যাচার করা হয়েছে তার বর্ণনা করেছেন কুলদীপ। জানিয়েছেন, যে কোনও ভারতীয় পাক সেনার খপ্পরে পড়লেই তার বিরুদ্ধে চরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। এরপর রয়েছে অমানুষিক অত্যাচার, জেলের চরম নির্মম জীবন।
কুলদীপ জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের আরও ২ জন রয়েছেন কোট লাখপত জেলে। এছাড়াও ১০-১২ ভারতীয় সেখানকার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি। কারণ তাদের উপরে পাক পুলিস যে অত্যাচার করেছে তাতে তারা আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।
টানা ২৯ বছর পর ঘরে ফিরেছে স্বামী। এনিয়ে কুলদীপের স্ত্রী ঊর্মিলা বলেন, আমাদের পরিবারের জন্য এটা এক বিশাল দিন। ওর এক নতুন জন্মদিন। আমাদের সবার বড়দিন এটা।
বাবা এতদিন ছিল না। বেঁচে থেকেও অধরা। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কুলদীপের ছেলে অমিতকে। তিনি জানান, বাবাকে ছাড়ানোর জন্য এমন কোনও দরজা নেই যে আমরা কড়া নাড়িনি। বাবাকে ছাড়ানোর জন্য বহু মানুষ আমাদের সাহায্য করেছেন। তাদের ধন্যবাদ।
এতগুলো বছর অমানুষিক অত্য়াচারের মধ্যে পাক জেলে কেটেছে। তারপরও কুলদীপ বলছেন, দেশের জন্য যে কোনও ত্যাগ স্বীকার করতে পিছপা হওয়া উচিত নয়। তবে ভুল পথ থেকে দূরে থাকুন। এতে ক্ষতিই হয় বেশি।