অর্জুন উবাচ
সন্ন্যাসং কর্মণাং কৃষ্ণ পুনর্যোগং চ শংসসি ।
যচ্ছ্রেয় এতয়োরেকং তন্মে ব্রূহি সুনিশ্চিতম্ ॥
অর্জুন বললেন- হে শ্রীকৃষ্ণ ! প্রথম তুমি আমাকে কর্ম ত্যাগ করতে বললে এবং তারপর কর্মযোগের অনুষ্ঠান করতে বললে। এই দুটির মধ্যে কোন্ টি অধিক কল্যাণকর, তা সুনিশ্চিতভাবে আমাকে বল।
শ্রীভগবানুবাচ
সন্ন্যাসঃ কর্মযোগশ্চ নিঃশ্রেয়সকরাবুভৌ ।
তয়োস্তু কর্মসন্ন্যাসাৎ কর্মযোগো বিশিষ্যতে ॥
জ্ঞেয় স নিত্যসন্ন্যাসী যো ন দ্বেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি ।
নির্দ্বন্দ্বো হি মহাবাহো সুখং বন্ধাৎ প্রমুচ্যতে ॥
পরমেশ্বর ভগবান বললেন- কর্মত্যাগ কর্মযোগ উভয়ই মুক্তিদায়ক। কিন্তু, এই দুটির মধ্যে কর্মযোগ কর্মসন্ন্যাস থেকে শ্রেয়।হে মহাবাহো ! যিনি তাঁর কর্মফলের প্রতি দ্বেষ বা আকাঙ্ক্ষা করেন না, তাঁকেই নিত্য সন্ন্যাসী বলে জানবে ৷ এই প্রকার ব্যক্তি দ্বন্দ্বরহিত এবং পরম সুখে কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করেন।
ফলের আশা না করে, কর্মের জয় বা পরাজয়কে তুল্য জ্ঞান করে কর্ম করা কোন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ উদ্দেশ্যে ছাড়া কেহ কর্ম করে না। উদ্দেশ্য ভিন্ন কোন কর্ম হয় না। উদ্দেশ্য ব্যতীত কর্ম হয় না, এটা সঠিক। শাস্থ্যে শাস্ত্রে আছে প্রয়োজনম অনুদিশ্য ন মন্দ অপি প্রবর্ততে- অর্থাৎ উদ্দেশ্য ছাড়া মূঢ় লোকও কোন কাজ করে না। উদাসীনতা ও উদ্দেশ্যহীনতা এক কথা নয়। নিষ্কাম কর্মও উদ্দেশ্যহীন নয়। সেই নিষ্কাম কর্মযোগের ফলে আজ ভারত একটি স্বাধীন , গণতান্ত্রিক, প্রজাতান্ত্রিক দেশ।
আজ ভারতের সুমুখে যে স্বাধীনতার দরজা খোলা হয়েছে। ভারত মাতার সেই সুবিশাল মন্দিরে প্রবেশ করবার পূর্বে আমাদের সেই সকল মহানজনদের স্মরণ করা উচিৎ ,যাঁরা প্রথম স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সমগ্র জীবন তাকেই প্রচার করে গিয়েছিলেন। তাঁদের বাণী আমাদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে গিয়েছে। সেই বাণী যুগে যুগে অমর হয়ে থাকবে কারণ , আমাদের ভাবধারা এবং কার্যপ্রণালী সকলই তাঁদের অঙ্কিত পথে চলে এতদিনে সফলতায় পৌঁছিয়েছে।
যে স্বাধীনতা মন্দিরে আমরা অবস্থান করছি , সেই মন্দিরের জন্য যাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তাঁদেরকেই যদি না জানলাম তবে , ধিক্ এ জীবন। সেই যে রবীন্দ্রনাথ গান্ধারীর আবেদনে – গান্ধারীর মুখ হতে নিঃসৃত করিয়েছিলেন –
হে আমার
অশান্ত হৃদয়, স্থির হও। নতশিরে
প্রতীক্ষা করিয়া থাকো বিধির বিধিরে
ধৈর্য ধরি। যেদিন সুদীর্ঘ রাত্রি ‘ পরে
সদ্য জেগে উঠে কাল সংশোধন করে
আপনারে, সেদিন দারুণ দুঃখদিন।
দুঃসহ উত্তাপে যথা স্থির গতিহীন
ঘুমাইয়া পড়ে বায়ু — জাগে ঝঞ্ঝাঝড়ে
অকস্মাৎ, আপনার জড়ত্বের ‘পরে
করে আক্রমণ, অন্ধ বৃশ্চিকের মতো
ভীমপুচ্ছে আত্মশিরে হানে অবিরত
দীপ্ত বজ্রশূল, সেইমত কাল যবে
জাগে, তারে সভয়ে অকাল কহে সবে।
লুটাও লুটাও শির — প্রণম, রমণী,
সেই মহাকালে ; তার রথচক্রধ্বনি
দূর রুদ্রলোক হতে বজ্রঘর্ঘরিত
ওই শুনা যায়। তোর আর্ত জর্জরিত
হৃদয় পাতিয়া রাখ্ তার পথতলে।
ছিন্ন সিক্ত হৃৎপিণ্ডের রক্তশতদলে
অঞ্জলি রচিয়া থাক্ জাগিয়া নীরবে
চাহিয়া নিমেষহীন।
১৯১৩ – ১৪ সাল , ইউরোপে তখন যুদ্ধায়োজন চলছে। জার্মানির ভারতীয় বিপ্লবীগন এবং আমেরিকার #গদর_পার্টি সেই যুদ্ধের আঁচ পেয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন। এদিকে যুদ্ধ সূচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গের বিপ্লবী দলগুলি লক্ষ্যে অবিচল থেকে ধীরে ধীরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অস্ত্রের অভাব তাঁদের সকল পরিকল্পনা এবং কর্মোদ্যোগকে ম্লান করে দিত বারংবার। প্রথম যুগে ফরাসি চন্দননগর হতে কিছু কিছু পিস্তল , রিভলবার প্রাপ্তির সুযোগ ছিল। বিদেশী চোরাকারবারীদের থেকে চড়া দামে পিস্তল – রিভলবার কিনতে হত। সরকারী কর্মচারীদের গৃহ হতে মধ্যে মধ্যে তস্করকর্মের মাধ্যমে কিছু অস্ত্র সংগ্রহ করার সুযোগ এসে যেত। কলকাতায় বিলাসবহুল এবং ব্যভিচারী জীবন যাপন করতে করতে ফিরিঙ্গীরা মদ, মাংসে টাকা উড়িয়ে যখন অভাবে পড়ত , তখন তারা কখনো সখনো নিজেদের দামী অস্ত্রগুলো বিক্রি করে দিত – সন্ধান রাখলে তাও দু একটা সংগ্রহ করা যেত। অভিজাত ইংরেজ, সরকারী কর্মচারীদের ডাকাতি করেও কিছু অস্ত্র পাওয়া যেত। এ ব্যতীত সঠিক উপায় ও অধিক পরিমাণে অস্ত্র পাওয়ার অন্য কোনো পথ ছিল না। দেশী মিস্ত্রিরা নমুনা দেখে অস্ত্র নির্মাণ করে দিত বটে, তবে তা প্রথম দিকে তেমন কাজের হয় নি।
সংগৃহিত অস্ত্রগুলিই বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে কাজ করতে হত। সাহস, আক্রমণ কৌশল ও প্রচুর শক্তিশালী কর্মী থাকার পরেও , প্রথম দিকে কোনো বিপ্লবী দলই সামান্যতম অস্ত্র সম্বল করে বৃহৎ রকম প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারেন নি। অধিক পরিমাণে অস্ত্র প্রাপ্তি হলে ছোট ছোট ব্রিটিশ সৈন্য ও পুলিশ ঘাঁটি আক্রমণ করা ও খণ্ড যুদ্ধ করা সম্ভব হতো। বিপ্লবীদের অস্ত্রাভাববোধ পীড়াদায়ক মনে হত।
রাউলাট কমিটির রিপোর্টে লেখা হয় যে, যথেষ্ট পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ হলে বঙ্গে ভয়াবহ কাণ্ড সংগঠিত হত।
যদিও পিস্তল – রিভালবারের অভাব ছিল, তবু বোমার অভাব ছিল না। ১৯০৭ সালে #যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা – বারীন ঘোষ, প্রফুল্ল চক্রবর্তী , উল্লাসকর দত্ত- দেওঘরে #দিঘরা পাহাড়ে উল্লাসকরের তৈরি বোমা পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে পরীক্ষার সময় বোমার আঘাতে মারা যান প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী। সেই বোমা এত শক্তিশালী ছিল যে পরের দিন সেখানে গিয়ে প্রফুল্লের দেহের কোন অংশ খুঁজে পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে ( অনেক পরে) হরিনারায়ন চন্দ্রর তৈরি বোমা সফলভাবে বিস্ফোরণ হল এবং সকলের তৃপ্ত হয়ে কলকাতায় ফিরে এলেন । তো, বোমা দিয়ে অখণ্ড ভারতের নানা স্থানে চরমপন্থী আন্দোলন চলছিল এবং বোমার আতঙ্ক ইংরেজদের মধ্যে চেপে বসেছিল। ডিনামাইট বসিয়ে লাট সাহেবের গাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়। বোমার ব্যাপক ব্যবহারের নিমিত্ত বিপ্লবী দলগুলিকে ইংরেজ ও তার খোচর এবং চাকররা #বোমা_দল বলত।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনের সময়ে অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে একদল কিশোর-তরুণ বিপ্লববাদের মন্ত্র গ্রহণ করেন৷ মজফ্ফরপুরের জেলা ও সেশন জজ ডি. এইচ. কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য বাংলার বিপ্লবী সংস্থা ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লকে নিয়োজিত করে৷ কিংসফোর্ডের কলকাতায় অবস্থান কালে (আগস্ট ১৯০৪ থেকে মার্চ ১৯০৮) তাঁর হাতে অনেক বিপ্লবীর বিচার ও শাস্তি হয়৷ ‘যুগান্তর’, ‘সন্ধ্যা’, ‘বন্দেমাতরম’ প্রভৃতি পত্রিকাগুলির বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগের বিচারক তিনিই ছিলেন এবং শাস্তি প্রদানও করেছিলেন৷ প্রতিবাদী কিশোর সুশীল সেনকে প্রকাশ্যে বেত মারার হুকুমও এই বিচারকই দেন৷ হেমচন্দ্র দাস কানুনগোকে দিয়ে বোমা তৈরি করানো হল৷ জানুয়ারি ১৯০৮ নাগাদ একটি বারোশো পৃষ্ঠার পুস্তক বোমা (যা খোলামাত্রই বিস্ফোরণ ঘটাবে) কিংসফোর্ডের গার্ডেনরিচের ঠিকানায় পার্সেল করে পাঠানো কিন্তু কিংসফোর্ড বইটি না খুলে আলমারিতে রেখে দেন৷ ফলে সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গেলেন৷
শুরু হলো আবার নতুন প্রস্তুতি। প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম কলকাতা রেলস্টেশনে পৌঁছার পর বারীণ ঘোষ তাঁদের কাছে কিংসফোর্টকে মারার জন্য বোমা পৌঁছে দিলেন। বোমার সঙ্গে রিভলবার কেনার জন্য কিছু টাকা ও মজঃফরপুরে যাওয়ার মানচিত্র দেয়া হলো তাঁদেরকে। প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম প্রথমবারের মতো একত্রিত হলেন রেলস্টেশনে। এর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না। দুজনের মধ্যে কথা হলো। কিংসফোর্টকে হত্যা করার জন্য ইস্পাত দৃঢ় সংকল্প করলেন তাঁরা। এরপর সতর্কতার সাথে চলে যান মজঃফরপুরে। কারণ এখানেই বাস করেন কিংসফোর্ড। প্রতিদিন ক্লাব হাউজ থেকে সন্ধ্যার পর সাদা ফিটন গাড়িতে করে নিয়মিত বাড়ি ফিরে আসেন কিংসফোর্ট। পাঁচ দিন অতিবাহিত হলো, কিন্তু তাঁকে হত্যা করার উপযুক্ত সুযোগ পেলেন না । ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল, ষষ্ঠ দিন এলো সেই সুযোগ।
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার৷ অমাবস্যা৷বিপ্লবীদের কাছে খবর ছিল, ইউরোপিয়ান ক্লাবে রোজই সন্ধ্যের পর ফিটন গাড়িতে চেপে তাস খেলতে যেতেন কিংসফোর্ড, ফিরতেন সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ৷ জজ সাহেবের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল বোমা-পিস্তল নিয়ে৷ ফিটন গাড়িটিকে ক্লাবের দিক থেকে আসতে দেখে তাঁরা বোমা ছোড়ার জন্য প্রস্তুত হলেন, কেননা তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন এই গাড়িটিই কিংসফোর্ডের এবং সেখানে তিনিই রয়েছেন৷ গাড়িটি কাছাকাছি আসতেই বোমা ছোড়া হল, প্রচণ্ড বিস্ফোরণে তা গাড়িটিকে চুরমার করে দেয়৷ কোচম্যান ও ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সহিস আহত হল এবং ভিতরে বসে থাকা দুই মহিলা মারাত্মকভাবে জখম হলেন৷ এই মহিলা দু’জন হলেন স্থানীয় উকিল প্রিঙ্গল কেনেডি সাহেবের স্ত্রী ও কন্যা৷ তাঁরা ক্লাব থেকে ফিরছিলেন, তাঁদের গাড়িটি কিংসফোর্ডের গাড়িটির মতোই দেখতে৷ মিস কেনেডি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মারা যান এবং মিসেস কেনেডির মৃত্যু হয় ২মে-র সকালে৷ কিংসফোর্ড সেদিন একটু পরে ক্লাব থেকে বেরিয়েছিলেন৷
হুতাত্মা ক্ষুদিরাম বোমা বিস্ফোরণ করে রাজকর্মচারী ও পুলিশের মনে আতঙ্ক ও দেশবাসীর মনে শক্তি, সাহস ও উৎসাহের সৃষ্টি করেন।
দেশমাতৃকাকে ম্লেচ্ছাদির নিকট হতে রক্ষার যুদ্ধের মহাযজ্ঞে প্রথম থেকেই বোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন দেশরক্ষকগণ।অগ্নি যুগের বিপ্লবীদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রগুলোর মধ্যে বোমা এক বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিডিশন কমিটি র রিপোর্টে বলা হয়েছিল। বিদেশ থেকে বোমা নির্মাণের শিক্ষার জন্য এদেশের বিপ্লবী হেমচন্দ্র দাস ফ্রান্সে যান। তবে পূর্বেই বলেছি আমাদের দেশেই নানা ধরনের শক্তিশালী বোমা তৈরীর চেষ্টা সফল হয়েছিল অগ্নিযুগে। ১৯১৩ সালে কলকাতার অমৃত হাজরা বোমা নির্মাণের সরঞ্জাম ধরা পড়েন। তিনি নিজে এই বিষয় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। রাউলাট – সিডিসন কমিটির রিপোর্টে #রাজাবাজারটাইপ বোমা, #আলিপুরটাইপ বোমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক পরে #দক্ষিণেশ্বর_বোমা মামলাও হয়। উক্ত রাজাবাজার টাইপ বোমাই বড়লাটের উপর নিক্ষেপ করার নিমিত্ত প্রস্তুত হয়। চন্দননগরেও বোমা নির্মাণের কারখানা ছিল।
রাজাবাজারে অমৃত হাজরার নির্মিত বোমা কলকাতা, দিল্লী, সিলেট, ময়মনসিংহ , লাহোরসহ অখণ্ড ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিপ্লবীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অমৃত হাজরা মামলায় কোর্ট এমন মন্তব্যও করেছিলেন। বোমা মামলায় অমৃত হাজরা ১৫ বছরের জন্য দ্বীপান্তর হন।
বিপ্লবীরা তিন ধরনের বোমার ব্যাবহার করতেন। সেগুলো হলো——-
1)round type(গোলাকার বোমা)
2)coconut type(নারকোল খোলার বোমা)
রাউন্ড টাইপের বোমা গুলো পরবর্তী কালে বর্তুকার বোমায় রূপান্তরিত হয়।তা পরবর্তী কালে spherical ও পরবর্তী কালে cylindrical type এ রূপান্তরিত হয়।
পরবর্তী কালে কাস্ট আয়রন এর তৈরি পিকরিক acid দিয়া তৈরি বোমা গুলো ছিল খুব ই উন্নতিশীল ,শক্তিশালী ও মারাত্মক।অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীরা এই বোমা বেশি ব্যবহার করতেন।অগ্নি যুগের প্রথম দিকে গোলাকার বোমা ই বেশি ব্যবহৃত হতো কারণ নারকোল খোল এর বোমা গুলো খুব কম শক্তি হবার এগুলোর ব্যাবহার খুব কম ছিল।তবে ভীতি প্রদশনের উদ্দেশ্যে নারকেল খোল এর বোমা ব্যাবহার করা হতো।অগ্নি যুগের প্রথম দিকে রাউন্ড টাইপ এর বোমা ব্যাবহার করা হতো।এই বোমা গুলোর শক্তি খুব একটা কম ছিল না তবুও খাঁজ কাটা আয়রন খোলের থেকে অনেক কম ছিল।রাউন্ড ধরণের বোমা ঠিক করে কোনো ব্যক্তি কে আঘাত করতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে বোমার ফলাফল সুনিশ্চিত থাকতো না।সে যুগে সাধারণত টিনের খোলের বোমা ব্যাবহৃত হলেও তামা ও পিতল নির্মিত পিতলের খোল ও ব্যাবহৃত হতো তা আলিপুর বোমার মামলার তথ্য থেকে জানা যায়।তবে প্রথমে দিকে ছাঁচ ঢালা লোহার খোলের মধ্যে খাঁজ কাটা বোমা ব্যাবহৃত হয়নি তা নিঃসন্দেহ বলা যায়।
১৯৩০এর দিকে সিগারের টিন বা তার থেকে একটু বড় ঢালাই করা লোহার খোল ব্যাবহৃত হয়েছে।এই লোহার খোল এর চতুর দিকে লম্বালম্বি ও গোলাকার খাঁজ কেটে নেওয়া হতো,তার ফলে ৩০-৩২টি টুকরো তৈরি হতো।বিস্ফোরণ এর ফলে এই ছোট ছোট লোহার টুকরো গুলো ছুটে গিয়ে প্রত্যেক টি বন্দুকের গুলি অপেক্ষা বড় হয়ে গুরুতর আঘাত দিতে পারতো।
সেই সময় বিপ্লবী কর্মীদের ব্যাবহৃত বিস্ফোরক পদার্থের ও প্রভূত উন্নতি হয়েছিল।ততদিনে বিপ্লবীরা সোরা, গন্ধক,কয়লা যুগ ছাড়িয়া বহুদূর এগিয়ে আসেন। এ ব্যতীত বিভিন্ন দল পিক্রিক এসিড দিয়ে নানান ধরনের বোমা নির্মাণ করতেন। সিডিসন কমিটির রিপোর্ট অনুসারে বঙ্গে নানা গুপ্ত কারখানায় #Nitro_Explosive, #Hand_book_of_Modern_Explosives প্রণালীর বই প্রাপ্ত হয়েছিল।
গীতার বাণীকে পাথেয় করে সেদিন যে নিষ্কাম কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন বঙ্গের বিপ্লবীগণ তা আজ বঙ্গজীবনে লুপ্ত প্রায়। আজ প্রকৃত দেশমাতৃকার সেবকেরা সমাজের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের নিকট হাসির পাত্র। সমাজের মধ্যে আজ কুষ্ঠরোগের মতো বাসা বেঁধেছে দেশদ্রোহীতা, পুতগন্ধময় রাজনীতি, প্রাদেশিকতা। অতএব আমাদের অর্থাৎ প্রকৃত দেশভক্তদের নিকট এক কঠোর পরিশ্রম ও কঠিন পরীক্ষার দিন উপস্থিত হয়েছে। আমাদের এখন আনন্দ করার সময় নয়, এখন কর্ম করার সময়। ঠিক যেমন আমাদের পূর্বপুরুষ বিপ্লবীগণ করে গিয়েছিলেন।
নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ।
শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেদকর্মণ।।
তুমি শাস্ত্রোক্ত কর্মের অনুষ্ঠান কর, কেন না কর্মত্যাগ থেকে কর্মের অনুষ্ঠান শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রাও নির্বাহ করতে পারে না।
আজ সকল দেশহিতৈষী শিক্ষানবীশদের, সমাজের সর্বব্বিধ কর্মীদের, সকল রাজপুরুষদের – অর্থাৎ উচ্চ নিচ সকল শ্রেণীর দেশসেবকদের নিজ নিজ জীবনধারা এক নূতন পথে প্রবাহিত করব বলে প্রতিজ্ঞা করবার দিন এসেছে। যদি এই কঠিন ব্রত মাথা পেতে না গ্রহণ করি, যদি এই ব্রত উদযাপন করতে অর্দ্ধ পথে থেমে যাই, তবে এ জাতি মরবে, এজাতির আর উদ্ধার হবে না।
আমাদের হৃদয়বল যদি থাকে, সুবুদ্ধি যদি হয় এবং আমরা সত্যই বিশ্বাস করি যে আমাদের দেশের স্বাধীনতা কারো দান নয়, তা রক্তক্ষয় করে- পরিশ্রম করে- অনাহারে ক্লিষ্ট থেকে লড়াই করে অর্জন করতে হয়েছে ও যুগ থেকে যুগান্তরে সজাগ থেকে তাকে রক্ষা করতে হয় তবেই উক্ত ব্রত পালন করতে পারব। মুখে কেবল জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরীয়সী বলে জপ করলেই দেশের মোক্ষ সম্ভব হবে? কর্ম করতে হবে না কি ? দম, ত্যাগ এবং অপ্রমাদ – আত্মসংযম , নিঃস্বার্থ জনসেবা এবং স্থির সৎবুদ্ধি ইহাই তো মোক্ষের পথ।
সক্তাঃ কর্মণ্যবিদ্বাংসো যথা কুর্বন্তি ভারত।
কুর্যাদ্ বিদ্বাংস্তথাসক্তশ্চিকীর্ষুর্লোকসংগ্রহম্।।
হে ভারত! অজ্ঞানীরা যেমন কর্মফলের প্রতি আসক্ত হয়ে তাদের কর্তব্যকর্ম করে, তেমনই জ্ঞানীরা অনাসক্ত হয়ে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য কর্ম করবেন।
মোরে ডাকি লয়ে যাও মুক্তদ্বারে তোমার বিশ্বের সভাতে
আজি এ মঙ্গলপ্রভাতে ॥
উদয়গিরি হতে উচ্চে কহো মোরে: তিমির লয় হল দীপ্তিসাগরে–
স্বার্থ হতে জাগো, দৈন্য হতে জাগো, সব জড়তা হতে জাগো জাগো রে
সতেজ উন্নত শোভাতে ॥
বাহির করো তব পথের মাঝে, বরণ করো মোরে তোমার কাজে।
নিবিড় আবরণ করো বিমোচন, মুক্ত করো সব তুচ্ছ শোচন,
ধৌত করো মম মুগ্ধ লোচন তোমার উজ্জ্বল শুভ্ররোচন
নবীন নির্মল বিভাতে ॥
©দুর্গেশনন্দিনী