কোভিড-বিধি মেনে ভোট করানোর কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী বুথে বুথে থার্মাল গান, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, গ্লাভস নিয়ে তৈরি ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু দূরত্ব-বিধি কোথাও মানা হল, কোথাও হল না। মাস্ক কেউ পরেছেন, কেউ পরেননি। শনিবার উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন বুথে দেখা গেল বিধি লঙ্ঘনের ছবি।
দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে উত্তর ২৪ পরগনা অগ্রবর্তী। সেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবার ওই জেলায় ১৫৯২ জন আক্রান্ত হন। মারা গিয়েছেন সাত জন। ওই দিন পর্যন্ত ওখানে অ্যাক্টিভ রোগী ৯০৫০ জন। এই পরিস্থিতিতে শনিবার জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তবে দেগঙ্গা ও হাড়োয়ার বুথে দেখা গেল, ভোটারদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানো বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল। হাড়োয়া ঘোষালের আবাদ এলাকায় একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এক যুবক মাস্ক ছাড়া ভোট দিতে গিয়েছিলেন। ভোটের লাইনে
থাকা পরিচিতেরা তাঁকে মাস্ক নিয়ে আসতে বলেন।
কুলসুর হাইস্কুলে দেখা গেল, স্কুল-চত্বরে প্রচুর জায়গা থাকায় ভোটারেরা মাস্ক পরে, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আরজুরা বিবি ও বিনোদিনী প্রামাণিক নামে দুই মহিলা মাস্ক পরে এসেছিলেন ভোট দিতে। বললেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে দেখছি, লোকজনও বলছে, ‘করোনা বাড়ছে’। তাই মাস্ক পরেছি।’’
তবে রাজনৈতিক দলগুলির শিবিরে বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থকেরই মাস্ক ছিল না।
রাজারহাট-নিউ টাউন কেন্দ্রের গ্রামীণ এলাকায় অনেকে এসেছিলেন মুখে গামছা বা রুমাল বেঁধে। কেউ কেউ আবার মাস্ক ছাড়াই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সন্ধ্যায় বারাসতের একটি ক্লাবে সুরক্ষা বিধি মেনেই ভোট দেন করোনা-আক্রান্ত এক দম্পতি। তাঁরা জানান, তাঁদের শারীরিক সমস্যা তেমন নেই। তাই ভোট দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি।
পূর্ব বর্ধমানের বেশির ভাগ বুথে ভোটারদের মাস্ক থাকলেও লাইনে দূরত্ব-বিধি মানতে অনীহা চোখে পড়েছে। সরাইটিকর প্রাথমিক স্কুলের পাঁচটি বুথে মাস্ক শেষ হয়ে যায়। বুথকর্মীদের বক্তব্য, মাস্ক কম দেওয়া হয়েছিল। জামালপুর কেন্দ্রের পর্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দু’টি বুথে মাস্কের সঙ্গে ভোটদানের জন্য দেওয়া গ্লাভস শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। ফলে দুপুরে ঘণ্টাখানেক খালি হাতেই ভোট দেন অনেকে। ভোটকর্মীরা জানান, বিষয়টি সেক্টর অফিসে জানানো হয়েছে। বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রের কৃষ্ণপুর বুথে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ পিপিই বা বর্মবস্ত্র পরে ভোট দিতে আসেন ছ’জন করোনা রোগী। বুথে হাজির অন্য ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অনেকে ভয়ে লাইন ছেড়ে চলে যান। ঘণ্টাখানেক পরে ওই রোগীরা ভোট দেন। তাঁরা জানান, আশাকর্মী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেই ভোট দিতে এসেছেন। প্রশাসনের তরফে তাঁদের বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছিল।
নদিয়ায় মাস্ক পরেই ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছে ভোটারদের। কিন্তু বুথের বাইরে দাঁড়ানোর জন্য দূরত্ব মেপে যে-দাগ আঁকার কথা, তা প্রায় কোথাও দেখা যায়নি। শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বিভিন্ন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বড় অংশের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। মাস্ক ছিল না অনেক ভোটকর্মীরও। দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি অনেক ক্ষেত্রে। আবার নাগরাকাটার মেটেলি চা-বাগান প্রাথমিক স্কুলে অক্ষরে অক্ষরে দূরত্ব-বিধি মেনে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, ভোট দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট জায়গার বদলে এখানে-ওখানে গ্লাভস ফেলা নিয়ে। এ দিন প্রায় সব কেন্দ্রের বেশির ভাগ জায়গাতেই এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের বর্জ্য নির্দিষ্ট পাত্রে না-ফেললে দূষণ ছড়াতে পারে।