শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফল এবং শনিবার প্রকাশিত হল হাই মাদ্রাসার ফল। চলতি বছর মাধ্যমিকের প্রথম দশের মেধাতালিকায় ছিল ৬৬ জন। যেখানে মোট ১২ জন ছাত্রী স্থান পেয়েছে মেধাতালিকায়। যা ১৮%। হাই মাদ্রাসা এবং মাধ্যমিকের সিলেবাস প্রায় সমতুল্য। সেখানে হাই মাদ্রাসার প্রথম দশের মেধাতালিকায় রয়েছে মোট ১৫ জন। তার মধ্যে ১২ জন অর্থাৎ ৮০ শতাংশই ছাত্রী।
হাই মাদ্রাসায় প্রায় পুরোটাই মুসলিম পরিবারের ছেলে-মেয়ে পড়ে। সেখানে মেয়েদের এই সাফল্যকে অনেকেই ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘শহুরে মধ্যবিত্তদের জন্য সুযোগ অনেক বেশি মফস্সলের তুলনায়। মাদ্রাসার মতো ক্ষেত্রে এই সাফল্যে আমি খুব আনন্দিত।’’ কিন্তু কেন ছাত্রীরা এগিয়ে?
এর উত্তরে সমাজকর্মী এবং শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার জানান, দেশভাগের পর মুসলিমদের অবস্থা প্রায় কোণঠাসা। কিন্তু বর্তমান সমাজে রাজ্যে শিক্ষার হাল খুবই খারাপ। বেশির ভাগ মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলেকে সংসার খরচ বহনের স্বার্থে পঞ্চম শ্রেণিতেই ছাড়তে হচ্ছে পড়াশোনা। অন্য দিকে, এখন অনেক মুসলিম পরিবারই শিক্ষিতা পাত্রীর খোঁজে থাকে। তাই ছেলেদের পড়াশোনার সংখ্যা কমলেও মুসলিম পরিবারের মেয়দের পড়ার ইচ্ছে বৃদ্ধি হচ্ছে। মিরাতুনের কথায়, ‘‘ছেলেরা অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে মেয়েদের মধ্যে পড়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। যা আগামী দিনে তাদের উন্নতির জন্য ভাল।’
হাই মাদ্রাসায় মেধাতালিকায় যে ১২ জন ছাত্রী রয়েছে, তার মধ্যে ১১জনই মালদহ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। এক জন মুর্শিদাবাদের মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ। যুগ্ম প্রথম হয়েছে দুই ছাত্রী। ফাহামিদা ইয়াসমিন এবং শাহিদা পারভিন। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৮০। ফাহামিদা ভগবানপুর হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং শাহিদা বট্টতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার ছাত্রী ছিল।
দ্বিতীয় হয়েছে সামসুর নেহার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৬। ইসলামপুর সাগর হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। ৭৭২ নম্বর পেয়ে তৃতীয় হয়েছে আলিফনুর খাতুন। সে মোহাম্মদিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ। চতুর্থ স্থানে রয়েছে আফ্রিদা বানু। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭১। রাম নগর হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ। পঞ্চম ও সপ্তম স্থানে রয়েছে ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার দুই ছাত্রী। যদিও সপ্তমের তালিকায় রয়েছে মোট দু’জন। পঞ্চমে শবনাম বানু। যার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭০। সপ্তমে এক জন আফিফা আফ্রিন সিদ্দিকা। অন্য জন বট্টতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ নুরজাহান খাতুন। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৮। অষ্টম স্থানে রয়েছে ফাহিমা খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৬। সে-ও বট্টতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। দশম স্থানে রয়েছে তিন জন। এক জন মুর্শিদাবাদের শাহাদিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ সোহা খাতুন। দ্বিতীয় জন ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার অঞ্জুমান নেশা। এবং তৃতীয় জন হল বুধিয়া হাই মাদ্রাসার রেজুয়ানা সুলতানা। তিন জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৫। অন্য দিকে, মাধ্যমিকের তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাঁকুড়ার ঈশানী চক্রবর্তী। তার সঙ্গে দশের তালিকায় রয়েছে রাজ্য জুড়ে আরও ১১ জন ছাত্রী।
শনিবার, ৩ মে প্রকাশিত হল চলতি বছরের হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষার ফলাফল। মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যে দিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্ষদের তরফে হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছেন। তিনটি বিভাগ (মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল) মিলিয়ে প্রথম দশে স্থান অধিকার করেছে ৩৭ জন। এর মধ্যে হাই মাদ্রাসায় ১৫ জন, আলিমে ১০ জন, ফাজিলে ১২জন। ৩৭ জনের তালিকায় ছাত্রী রয়েছে ১৬ জন এবং ছাত্রের সংখ্যা ২১জন।