প্রথম অধ্যায়
যা কুন্দেন্দু তুষারহার ধবলা যা শ্বেতপদ্মাসনা।
যা বীণাবরদমন্ডিত করা যা শুভ্র বস্ত্রাবৃতা।।
যা ব্রম্মাচ্যুত শঙ্কর প্রভৃতিভির্দেবৈঃ সদা বন্দিতা।
সা মাং পাতু সরস্বতী ভগবতী নিঃশেষ জাড্যাপহা।।
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বেদানাং জননী পরা।
পুজাং গৃহাণ বিধিবৎ কল্যাণং কুরুমে সদা।।
সর্বাগ্রে বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর চরণে শরণ নিয়ে কার্যারম্ভ করি।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/642415cff3162b31ce1234d94725a00b.jpg)
সেই সুপ্রাচীন কাল হতে এই নিয়ম চলে আসছে । মহাভারত সূচনা করার পূর্বে তাই উচ্চারণ করতে হয় –
নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্।
দেবীং সরস্বতীং ব্যাসাং ততো জয়মদীরয়েৎ।।
নারায়ণ , নরের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ সেই নয় ঋষিকে , দেবী সরস্বতীকে এবং ব্যাসকে প্রণাম করে জয় অর্থাৎ মহাভারত পাঠ সূচনা করি। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি মহাভারতের আরেক নাম জয়।
জয়ো নামেতিহাসোহয়ং শ্রোতব্যো বিজিগীষূণা।
যিনি দেবতাকে জানেন তিনিই মন্ত্রের প্রকৃত মর্ম বুঝে থাকেন। দেবতাকে ঠিক না বুঝলে কেউ বৈদিক বা লৌকিক কোনো কর্মেরই ফল পায় না। তাঁকে না জেনে না বুঝে যতই বেদ মন্ত্র পাঠ করা হোক , হোম হোক বা যজ্ঞ , ক্রিয়াচার হোক , জপ হোক কিছুই লাভ হয় না। মহর্ষি কাত্যায়ন বলেছেন –
এতানাবিদিত্বা যোহধীতেহনুব্রূতে জপতি জুহোতি যজতে যাজতে তস্য ব্রহ্ম নির্বীর্যং যাতযামং ভবতি। – শুক্লযজুঃ – সর্বানুক্রমসূত্র।
ঋষি শৌনক বলেছেন –
বেদিতব্যং দৈবতং হি মন্ত্রে মন্ত্রে প্রযত্নতঃ।
দৈবতঞ্জো হি মন্ত্রাণাং তদর্থমধিগচ্ছতি।।
ন হি কশ্চিদবিজ্ঞায় যাথাতথ্যেন দৈবতম্।
লৌকিকানাং বৈদিকানাং কর্মাণাং ফলমশ্নুতে।।
যিনি সম্পদ প্রদান করেন সেই তেজোময় পরম ব্রহ্মশক্তিই হলেন দেবতা। তিনি সদা দীপ্তিময়। তাঁর নিকট কেবল আলো। যিনি সেই আলোক নিয়ে দ্যুলোক বা ভবঃলোকে থেকেও হৃদয়ের নিভৃতে বাস করেন তিনিই দেবতা।
… দেবো দানাদ্বা দীপনাদ্বা দ্যোতনাদ্বা দ্যুস্থানো
ভবতীতি যা যো দেবঃ সা দেবতা…
যিনি ব্রহ্ম, তিনি আদ্যাশক্তি। যখন নিষ্ক্রিয়, তখন তাকে ব্রহ্ম বলি। পুরুষ বলি। যখন সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় এসব করেন তাকে শক্তি বলি। প্রকৃতি বলি। পুরুষ আর প্রকৃতি। যিনি পুরুষ তিনি প্রকৃতি। আনন্দময় আর আনন্দময়ী। পিতা আর জননী। যিনি জগৎরূপে আছেন- সর্বব্যাপী হয়ে তিনি মা।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/8380bfd94dabebfc7d9aaef364f495d7.jpg)
আচ্ছা তিনি কি কেবলই সম্পদ প্রদান করেন ? সম্পদ অর্থে কি কেবল ধন ? বুদ্ধি, জ্ঞান ,প্রজ্ঞা , বিদ্যা হতে বৃহৎ সম্পদ কি হতে পারে ?
“বিদ্যা দদাতি বিনয়ং বিনয়াদ যাতি পাত্ৰতাম।
পাত্ৰতাদ্ ধন যদপ্নাতি ধনাদ্ ধৰ্মঃ ততঃ সুখম্”।
তাই সেই অমূল্য সম্পদ যিনি প্রদান করেন সেই পরম ব্রহ্মশক্তিকে আমাদের জানা এক ও একমাত্র প্রয়োজন। তাঁকে না জানলে এই অমৃতের জীবনটাই তো অধরা থেকে যাবে।
আদ্যাশক্তি মহামায়া তিনিই বিদ্যা ও অবিদ্যা রূপে এই মায়ার সংসারে অবস্থান করেন।
ত্রিধা চকার চাত্মানং স্বেচ্ছয়া প্রকৃতি স্বয়ং।
মায়া বিদ্যা চ পরমেত্যেবং সা ত্রিবিধাঽভবৎ॥
মায়া বিমোহিনী পুংসাং যা সংসার-প্রবর্তিকা।
পরিস্পন্দানিশক্তি র্যা পুংসাং যা পরমা মতা।
তত্ত্বজ্ঞানাত্মিকা চৈব সা সংসার-নিবর্তিকা॥
অর্থাৎ, আদ্যাশক্তি মহামায়া স্বয়ং স্বেচ্ছায় আপনাকে মায়া, বিদ্যা এবং পরমা এই ত্রিবিধরূপে বিভক্ত করেন। মায়া বিমোহিনী সংসার-প্রবর্তিকা শক্তি। যিনি পরিস্পন্দাদি ব্যাপার-বিধায়িনী চৈতন্যময়ী সঞ্জীবনী শক্তি তিনি পরমা। তত্ত্বজ্ঞানাত্মিকা সংসার-নিবর্তিকা শক্তি বিদ্যা।
![](https://i2.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/bd1f0d4f9ce9743c6dabb187ce6747b2-scaled.jpg?fit=683%2C1024)
মাতৃকাচক্রবিবেকের টীকায় শিবানন্দ মুনি লিখেছেন, বিমর্শশক্তিই ইদন্তা বা ইদংভাবের প্রাধান্যের সহিত যখন অবভাসিত হন তখন তাঁকে বলা হয় ‘মায়া’ এবং যখন অহন্তা বা অহংভাবের প্রাধান্যের সঙ্গে অবভাসিত হন তখন তাঁকে বলা হয় ‘বিদ্যা’। অবিদ্যারূপে তিনি জীবকে সংসারে বাঁধেন আর বিদ্যারূপে তার মুক্তিবিধান করেন।
অন্যতম প্রাচীন শাক্তশাস্ত্র শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও আমরা এই তত্ত্বেরই উল্লেখ পাই-
সা বিদ্যা পরমা মুক্তির্হেতুভূতা সনাতনী॥
বিদ্যা অর্থ ব্রহ্মজ্ঞান-
বিদ্যা ব্রহ্মজ্ঞানলক্ষণা।
আর ব্রহ্মজ্ঞানই মুক্তি-
জ্ঞানং মোক্ষৈককারণম্।
সেইজন্য, অপরোক্ষ ব্রহ্মজ্ঞানস্বরূপা বিদ্যাই মুক্তিদায়িনী।
দেবীর এই বিদ্যাস্বরূপতা বৈদান্তিক আচার্যগণও স্বীকার করেছেন। কেনোপনিষদোক্ত বহুশোভমানা উমা হৈমবতীর প্রসঙ্গে আচার্য শঙ্কর তাঁর ভাষ্যে বলেছেন-
তস্যেন্দ্রেস্য যক্ষে ভক্তিং বুদ্ধা বিদ্যা উমারূপিণী প্রাদুর্ভূতা স্ত্রীরূপা।
অর্থাৎ, সেই পূজ্যরূপে ইন্দ্রের ভক্তি বুঝতে পেরে শোভনতমা স্ত্রীরূপিণী হিমাচল-নন্দিনী বিদ্যা উমা আবির্ভূতা হলেন।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/399px-12th_century_Saraswati_Devi_Chennakesava_temple_at_Somanathapura_Karnataka_India-1.jpg)
সায়ণাচার্যের মতেও হিমবানপুত্রী দেবী উমা ব্রহ্মবিদ্যাস্বরূপিণী- হিমবৎপুত্র্যা গৌর্যা ব্রহ্মবিদ্যাভিমানিরূপত্বাৎ গৌরীবাচকো উমাশব্দো ব্রহ্মবিদ্যাং উপলক্ষয়তি।
সুতরাং, মহাশক্তি যে একাধারে বিদ্যা এবং অবিদ্যা উভয়স্বরূপা তা নিয়ে সংশয় নেই। তবে এখানে উল্লেখ্য, দেবীর মায়া বিদ্যা ইত্যাদি স্বরূপের মধ্যে আত্যন্তিক কোনো ভেদ নেই। সাধনায় পরিতুষ্টা হয়ে পরব্রহ্মরূপিণী মায়াই বিদ্যারূপে সাধককে পাশমুক্ত করেন। সেজন্যই, সর্বচৈতন্যরূপা আদ্যা ভুবনেশ্বরী একাধারে প্রণবাত্মিকা এবং মায়াবীজরূপা।
যদ্যপি ভগবতী মায়াস্বরূপে মুখ্যত ভববন্ধনকারিণী, তথাপি মায়া আত্যন্তিক ভাবে জড় নয়। যোগবাশিষ্ঠের “চিদ্বিলাসঃ প্রপঞ্চোঽয়ং”, শ্রীশ্রীচণ্ডীর “চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতৎ ব্যাপ্য স্থিতা জগৎ” আদি বচনই তাঁর প্রমাণ। আধুনিক পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের অনেক শাখাও এই মত সমর্থন করেন। স্বতন্ত্রা চিতিশক্তির চিদ্বিলাসই এই জগৎ। মায়ার মধ্যে ভগবতী মহামায়ার প্রকাশকে প্রত্যক্ষ করলে, দুঃখময় জগৎকে আনন্দময়ীর লীলাক্ষেত্র রূপে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়।
![](https://i0.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/148419664-pura-saraswati-temple-at-the-ubud-city-in-bali-island-indonesia-1.jpg?fit=1024%2C682)
আবার ত্রৈপুর দর্শনেও, পরাশক্তি মূলে মায়াও নন, প্রকৃতিও নন। তত্ত্ববিচারে , মায়া এবং প্রকৃতি যথাক্রমে ষট্ত্রিংশ তত্ত্বের অন্তর্গত ষষ্ঠ এবং ত্রয়োদশতম তত্ত্ব (সৃষ্টিক্রমে); যেখানে, ভগবতী ত্রিপুরা স্বয়ং ষট্ত্রিংশতত্ত্বাতীতা চিন্মাত্ররূপিণী। তথাপি, তিনিই এই সকল তত্ত্বে অধিষ্ঠান করছেন। ষট্ত্রিংশ তত্ত্বও তাঁরই স্বরূপ। সৃষ্টির একটি ধূলিকণাও তাঁর স্বরূপ-বহির্ভূত নয়। অবাঙ্মনসগোচরা অসঙ্গা পরব্রহ্মস্বরূপিণী হয়েও, তিনিই এই সবকিছু হয়েছেন- এই তাঁর দুরধিগম্য নিঃসীমমহিমা!
সেই মহাবিদ্যাই মহাসরস্বতী। তিনি অষ্টভূজা। দক্ষিণের চারি হস্তে যথাক্রমে শঙ্খ , হল, শূল, ঘন্টা এবং বামদিকের চারি হস্তে মুষল , চক্র , ধনুঃ ও সায়ক। তিনি পদ্মাসনে আসীনা।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে দেবীমাহাত্ম্যে দেবীর প্রথম চরিতে মহাকালী, দ্বিতীয় চরিতে মহালক্ষ্মী এবং উত্তরচরিতে রুদ্র ঋষি, মহাসরস্বতী , উষ্ণিক্ ছন্দঃ , ভীমাভ্রামরী, বায়ু তত্ত্ব – উল্লিখিত হয়েছে। এতে মহাসরস্বতীর যে ধ্যান আছে তা হল –
ঘন্টাশূলহলানি শঙ্খমুষলে চক্রং ধনুঃসায়কং।
হস্তাব্জৈর্দধতীং ঘনানবিদধচ্ছীতাংশুতুল্য প্রভাম্।।
গৌরীদেহসমুদ্ভবাং ত্রিজগতামাধারভূতাং মহা-
পূর্বাং মন্ত্রসরস্বতীমনুভজে শুম্ভাদিদৈত্যার্দনীম্।।
এই মন্ত্রের দ্বারা পঞ্চোপচারে পূজা করে মার্কণ্ডেয় পুরাণোক্ত নিত্য চণ্ডীস্তব পাঠ করবার নিয়ম আছে।
ঋগ্বেদে উল্লিখিত হয়েছে –
দ্বিবিধা হি সরস্বতী বিগ্রহবন্দেদেবতা নদীরূপা চ।
ঋগ্বেদ আলোচনা করলে সরস্বতী উভয় অর্থের সার্থকতা দেখতে পাওয়া যায়। নিরুক্তকার সরস্বতী শব্দের অর্থ করেছেন –
সরস্বতী সর ইত্যুদকনাম সর্তেস্তদ্বতী।
![](https://i0.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/10085752-pura-saraswati-temple-at-the-lovey-village-of-ubud-bali-indonesia.jpg?fit=1024%2C682)
সরস্ শব্দের অর্থ জল ছিল। বেদ পাঠ করলে তা উপলব্ধি করা যায়। আবার সরস্ শব্দের অর্থ জ্যোতিঃ। তারজন্য সূর্যের অপর বৈদিক নাম #সরস্বান্। সরস্বতী ,- অর্থাৎ ” জ্যোতিরময়ী দেবতা”। ঋগ্বেদে সরস্বৎ শব্দটি তিনবার আছে। দশম মন্ডলে প্রথমাস্ত সরস্বান্ এবং অন্যত্র দ্বিতীয়াস্ত সরস্বন্তম্। দশম ও সপ্তম মন্ডলে সরস্বৎ শব্দের অর্থ জলাধিপতি। প্রথম মন্ডলে এর অর্থ সূর্য। সূর্য এখানে জলের গর্ভোৎপাদক।
শতপথ ব্রাহ্মণে মনকে সরস্বান্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মনো বৈ সরস্বান্.…
এটি সরস্বানের আধ্যাত্মিক অর্থ। স্বর্গ লোকঃ সরস্বান্, পৌর্ণমাসঃ সরস্বান্ । এক জ্যোতির্ময় স্বর্গলোক। অর্থব বেদে স্বর্গকে বলা হয়েছে – স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতঃ। তৈত্তিরীয় আরণ্যকে তারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে – স্বর্গো লোকো জ্যোতিষাবৃতঃ। অর্থাৎ সরস্বতী হলেন সেই আদি , অদ্বিতীয়া জ্যোতির্ময়ী দেবী। যিনি প্রাণীর হৃদয় ও মস্তিকে অবস্থান করেন। রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকি যখন ক্রৌঞ্চ হননের শোকে বিহবল হয়ে পড়েছিলেন, সে সময় জ্যোতির্ময়ী সরস্বতী তাঁর ললাটে বিদ্যুৎ রেখার মত প্রকাশিত হয়েছিলেন।
![](https://i0.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/122591430-empty-cafe-and-pond-with-lotus-near-pura-taman-kemuda-saraswati-temple-in-ubud-bali-island-indonesia.jpg?fit=1024%2C683)
যয়া ত্বয়া জগৎস্রষ্টা জগৎপাত্যত্তি যো জগৎ ।
সোহপি নিদ্রাবশং নীতঃ কস্ত্বাং স্তোতুমিহেশ্বরঃ ।।
বিষ্ণুঃ শরীরগ্রহণমহমীশান এব চ ।
কারিতাস্তে যতোহস্ত্বাং কঃ স্তোতুং শক্তিমান ভবেৎ ।।
মধু কৈটবকে সংহারের সময় ব্রহ্মা এই মন্ত্রেই সেই আদি শক্তির আহ্বান করে ছিলেন। তিনি মহাশক্তি, আর সেই মহাশক্তির অনন্ত শক্তিরাজির এক একটি অংশশক্তি থেকে তিনি সকলকে কার্য করান কিন্তু আবার কার্যের কৃতিত্ত্বও মহাদেবীর হয়।
অনন্তকোটি-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টিকারিণী ব্ৰহ্মশক্তি দেবী মানবীকে নীলাম্বরে সুখাসীনা দেখলেন এবং তাঁরই শ্ৰীমুখ হতে তাঁর মহিমাবাণী শ্রবণ করলেন –
“অহং রাষ্ট্ৰী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাং
* * *
ময়া সোহান্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্ ৷
অমন্তবো মাং ত উপক্ষীয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবং তে বদামি ৷৷
* * *
যং যং কাময়ে তং তমুগ্ৰং কৃণোমি
তং ব্ৰহ্মাণং তমৃষিম্ তং সুমেধাম্ ৷” – [ঋক্, দেবীসুক্ত বা বাকসুক্ত]
“আমিই সমগ্র জগতের রাজ্ঞী, আমার উপাসকেরাই বিভূতিসম্পন্ন হয়; আমিই ব্ৰহ্মা এবং ব্ৰহ্মজ্ঞানসম্পন্না, সকল যজ্ঞে আমারই প্রথম পূজাধিকার; দর্শন, শ্রবণ, অন্নগ্ৰহণ ও শ্বাসপ্রশ্বাসাদি প্ৰাণিজগতের সমগ্ৰ ব্যাপার আমার শক্তিতেই সম্পাদিত হয়; সংসারে যে কোন ব্যক্তি শুদ্ধভাবে আমার উপাসনা না করিয়া আমার অবজ্ঞা করে, সে দিন দিন ক্ষীণ ও কালে বিনষ্ট হয়; হে সখে, অবহিত হইয়া যাহা বলিতেছি শ্রবণ কর – শ্রদ্ধার দ্বারা যে ব্ৰহ্মবস্তুর সন্দর্শন লাভ হয়, আমিই তাহা; আমার কৃপাতেই লোকে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে; আমার কৃপাকটাক্ষেই পুরুষ – স্রষ্টা, ঋষি এবং সুক্ষ্মবুদ্ধিসম্পন্ন হয় ।”
![](https://i2.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/f8dy7hlsudg51.jpg?fit=543%2C1024)
শ্রীশ্রী চণ্ডী গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে
– ‘একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা’
একা মাত্র আমি এ জগতে বিরাজিতা। মদ্ব্যতিরিক্ত আমার সহায়ভূতা অন্যা দ্বিতীয়া আর কে আছে?
‘অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা, পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিমা সম্বভূব।’
আমি যখন বায়ুর ন্যায় প্রবাহিত হই, তখন এ সমগ্র ভুবনের সৃষ্টি আরম্ভ হয়। এ যে স্বর্গ ও নরক রয়েছে, এদের পরেও আমি বর্তমান। এ আমার মহিমা! ভূলোক ও দ্যুলোকের পথ দেখান মা।
ঋগ্বেদের ষষ্ঠ মণ্ডলে ৬১ নং সূক্তের মোট ১৪ টি মন্ত্রকে এক সঙ্গে সরস্বতীসূক্ত বলা হয়।আমরা সাধারন চেতনা ও চৈতন্যের এবং জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে সরস্বতীকে আরাধনা করে থাকি,কিন্তু বেদে সরস্বতী নামে সঙ্গে আমাদের দুটি ব্যাপক রূপ প্রত্যক্ষ করি। সেখানে বলা হয়েছে –
ইয়মদদাদ্রভসমৃণচ্যুতম্ দিবোদাসং বন্ধ্রশ্বায় দাশুষে।
যা শশ্বন্তমাচখাদাবসং পণিং তা তে দাত্রাণি তবিষা সরস্বতী।।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/1fc146e091a216f4e7cb2cc41631b7ad.jpg)
যারা যজ্ঞশীল অর্থাৎ পরার্থে কর্ম করেন,তাদের ঘরে বীর্য্যবান তেজস্বী চরিত্রবান স্বাবলম্বী সন্তানের জন্ম হয়।ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত ঋদ্ধিবৃদ্ধির এটিই হল পথ।সরস্বতীদেবীর প্রসাদে এরকম পিতার এরকম পুত্রের পুণ্যময় অবির্ভাব ঘটে।পরিবার ও সমাজজীবনের ক্ষেত্রে এরকম সন্তানের আবির্ভাব সৌভাগ্যসূচক।অপর
পক্ষে যারা স্বার্থপর যারা অসুরস্বভাব দেবী তাদের বিনাশ করেন। পরার্থে সমুন্নতি এবং স্বার্থপরতাই বিনষ্টির কারন ।
ইয়ং শুষ্মোভির্বিসখা ইবারুজৎ সানু গিরীণাং তবিষেভিরুর্মিভি
ঃ।
পারাবতঘ্নীমবসে সুবৃক্তিভিঃ সরস্বতীমা বিবাসেম ধীতিভিঃ।।
এই দেবী প্রবল বিশাল তরঙ্গসমূহ দ্বারা,পদ্মফুল সংগ্রহের জন্য লোক যেমন কাদা ভেদ করে তেমন ভাবে,পর্বতের তীরস্থ সমভূমি ভগ্ন করেন।তিনি দূরদেশের গাছপালা ভাঙ্গেন অথবা পারাবারসদৃশ সুবিস্তীর্ণ বাধাবিপত্তি সমূহ এবং স্বার্থপরতা কে এই দেবী সরস্বতী বিনাশ করেন।তাকে আমরা সুন্দর স্তবাদি এবং শুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত কর্ম দ্বারা সেবা করি। অর্থাৎ, সরস্বতী হলেন গতি এবং শক্তির দেবী। নদীরূপে তিনি পর্বত বিদীর্ণ করে সজোরে এগিয়ে চলেন দেবীরূপে তিনি যাবতীয় অশুভ শক্তির প্রতিরোধ সবলে চূর্ণ করে এগিয়ে যান।
সরস্বতি দেবনিদো নিবর্হয় প্রজাং বিশ্বস্য বৃসয়স্য মায়িনঃ।
উত ক্ষিতিভ্যোহবনীরবিন্দো বিষমেভ্যো অস্রবো বাজিনীবতি।।
হে দেবী,দেবনিন্দক মায়াবী ত্বষ্টা নামক অসুরের প্রজাতিসমূহ আপনি বধ করুন এবং হে সংগ্রামশীলা দেবী,এই দুষ্ট মনুষ্যকুল কে হলাহল প্রয়োগ করে পৃথিবী উদ্ধার করুন। অর্থাৎ, মায়াজাল বিস্তার করে অসুরশক্তি চারিদিক অজ্ঞান অন্ধকারে ছেয়ে ফেলে।আলো জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দেবী সরস্বতী সেই অন্ধকার বিদীর্ণ করেন।তিনি দুষ্ট ক্ষতিকর মনুষ্যকুল ধ্বংস করে পৃথিবী উদ্ধার করেন।অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জ্ঞানের অসুর শক্তির বিরুদ্ধে দেবশক্তির এভাবে ঘোরতর সংগ্রামের পর বিজয় আসে এবং পৃথিবী তখন আলোকময় জ্ঞানময় এবং শুভ শক্তিময় হয়ে উঠে।
প্রণো দেবী সরস্বতী বাজেভির্বাজিনীবতী ধীনামবিএযবতু।।
সংগ্রামশীল জ্যোতির্ময়ী সরস্বতী কে আমরা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই প্রণতি নিবেদন করি।ধীমান দের পরিত্রাতা তিনি আমাদের রক্ষা করুন। অজ্ঞান অন্ধকার দুর্বলতা বীর্য্যহীনতা সমূলে আমাদের ব্যক্তি এবং সমষ্টি জীবন থেকে বিতাড়িত করার জন্য নিয়ত সংগ্রাম চালালে সেটিই হয় প্রকৃত প্রস্তাবে সরস্বতী দেবীকে আরাধনা এবং প্রণাম।।
![](https://i0.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/cc836c3b790e594987b4e077eaab1f51.jpg?fit=574%2C1024)
বেদে তিনি সংগ্রামশীলা এবং স্ত্রোতস্বিনী নদী রূপে প্রবহমানা।বেদে “বাজিনীবতী” অর্থাৎ সংগ্রামশীলা বিশেষণটি সরস্বতী সম্পর্কে বারংবার উল্লেখ আছে। “বাজ” শব্দের অর্থ গতি,সংগ্রাম।সরস্বতী প্রসঙ্গে “বাজিনীবতী ” বলতে সংগ্রামশীলা অর্থটিই বেশ সুপ্রযুক্ত।এই সংগ্রাম মূলত অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর অজ্ঞানের বিরুদ্ধে জ্ঞানের,জড়তার বিরুদ্ধে চৈতন্যের।সরস্বতী নিজে এভাবে সতত সংগ্রাম করেছেন এবং ভক্তদের মধ্যেও সংগ্রামের এই প্রেরণা সতত যুগিয়ে যাচ্ছেন। আর গতি প্রসঙ্গে বোলতে গেলে বৈদিক যুগে উত্তর পশ্চিম ভারতে সাতটি প্রধান নদীর মধ্যে সরস্বতী নদীর আকার প্রবল ছিল। বর্তমানের সরস্বতী নদী অবশ্য অবলুপ্তপ্রায়।সেই প্রবল স্ত্রোতস্বিনী কথা ঋগ্বেদে সরস্বতী প্রসঙ্গে বারবার এসেছে।
যস্ত্বা দেবি সরস্বতী উপব্রুতে ধনে হিতে ইন্দ্রং ন বৃত্রতূর্য্যে।।
দেবিতাদের স্তবে বিচলিত হয়ে ইন্দ্র যেমন বৃত্রাসুরকে ঘোর সংগ্রামে বধ করেছিলেন তেমনি যিনি জীবনে পরমৈশ্বর্য্য লাভের জন্য,হে দেবী সরস্বতী, তোমার আরাধনা করেন তাকে তুমি রক্ষা কর। অর্থাৎ, বৃত্র হল আবরণকারী আমাদের ভিতরের পরাক্রমশালী এক অসুরশক্তি। বজ্রের শব্দ এবং ঝলকানি দিয়ে ইন্দ্র তাকে বধ করেন। দেবী সরস্বতী ও আমাদের ভিতরের সেই বৃত্রাসুরকে বধ করেন। যে বৃত্রাসুর আমাদের আড়ষ্ট অজ্ঞ এবং অন্ধ করে রাখে।জীবনের দিব্য ঐশ্বর্য্যসমূহ লাভ করতে হলে অসুরশক্তির সঙ্গে নিয়ত আমাদের সংগ্রাম করতে হয়।সরস্বতীদেবীর নিরলস নিরন্তর স্তুতি সেবাদি হল প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের সেই অতন্দ্র সংগ্রামী প্রয়াস।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/e3fcee4c65f9ba2d8ed7c06f5f8e7921-mural-painting-mural-art.jpg)
এই ভাবেই সরস্বতীর দিব্যসত্তা আমাদের জীবন সংগ্রাম কে উৎসাহ প্রদান করে।
সরস্বতী কথার অর্থ দাঁড়ায় সমৃদ্ধ উন্নত করার ক্ষমতা যার আছে এমন কোনো শক্তি বিশেষ ।
স্বয়ং ঈশ্বরের জ্ঞানদায়িনী রূপের প্রতীকই হলেন দেবী সরস্বতী ।আর তাই সরস্বতী রূপে ঈশ্বরকেই মাতৃরূপে জ্ঞানদায়িনী হিসেবে পূজা করি আমরা ।
ব্রহ্মের গুণবাচক নাম সরস্বতী ।
উপনিষদে সরস্বতী সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?
” ওম বিদ্বাং চাবিদ্যাং চ যস্তদ্ বেদোভয়্সহ।
অবিদ্যায়া মৃত্যুং তীত্বা
বিদ্যায়াহমৃতশ্নুতে।।(ঈশ উপনিষদ)
যে মানুষ সেই উভয়কে অর্থাৎ জ্ঞানের তত্ত্বকে ও কর্মের তত্ত্বকে একসঙ্গে যথার্থরূপে জানতে পারে । সে কর্মসমূহ অনুষ্ঠানে মৃত্যুকে অতিক্রম করে আর জ্ঞানের অনুষ্ঠানে অমৃত কে উপভোগ করে অর্থাৎ আনন্দময় অমৃত লাভ করে । মার কৃপাতে (মাতৃরূপে জ্যোতিময়ী ) আমরা উভয়বিদ জ্ঞানই পেয়ে থাকি ।
![](https://i0.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/p00596-0079-sandstone-maa-saraswati-sandstone-statue-37-inch.jpg?fit=826%2C1024)
বৈদিক ত্রিকালজ্ঞ ঋষি , ক্ষত্রিয় এবং সাধারণ মানুষ দেবী সরস্বতী নদীর তীরে যজ্ঞ করতেন। সেই সময় পাঁচটি জাতি দেবী সরস্বতীর আরাধনা করতেন। পঞ্চজাতা বর্ধরন্তী …. সরস্বতীর আশীর্বাদে তাঁরাও সমবৃদ্ধি লাভ করলেন। সমগ্র বেদে এই পঞ্চ জাতির কথা বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। তাঁদের বেদে পঞ্চজাতাঃ , পঞ্চজনাঃ, পঞ্চজনরঃ , পঞ্চকৃষ্টয়ঃ প্রভৃতি নামে আখ্যাত করা হয়েছে।
মাঘস্য শুক্লপঞ্চম্যাং
বিদ্যারম্ভেষু সুন্দরি …
সেই মাঘী শুক্লা পঞ্চমী থেকে মহাদেবী বিদ্যারুপিণী মাতা সরস্বতী পূজিতা হতেন। শ্রী পঞ্চমী…শ্রী অর্থাৎ লক্ষ্মী। আচ্ছা শ্রী অর্থাৎ কেবলমাত্রই কি লক্ষ্মীকে বোঝায় নাকি মহামায়া আদ্যাশক্তির ত্রি রূপকেই বোঝায়। যাঁরা বলেন সবাই পৃথক ইত্যাদি নানা মনগড়া কথা তাঁরা আদৌ কি ভেবে বলেন জানি না । তিনিই মহাবিদ্যা , তিনিই মহালক্ষ্মী। তিনিই বিদ্যালক্ষ্মী। অনেক পন্ডিতগণ মনে করেন পূর্বে শ্রী পঞ্চমীর দিন দেবী মহালক্ষ্মীর আরাধনা হতো। সেটি আদপে সেই বিদ্যালক্ষ্মী অর্থাৎ শ্রী বিদ্যার আরাধনা হতো।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/5edb64c06d662c3ca61cf381.w800.jpg)
প্রণত সুরেশ্বরি ভারতি ভার্গবি
শোকবিনাশিনি রত্নময়ে।
মণিময়ভূষিত কর্ণবিভূষণ
শান্তিসমাবৃত হাস্যমুখে ।।
নবনিধিদায়িনি কলিমলহারিণি
কামিত ফলপ্রদ হস্তযুতে ।
জয়জয় হে মধুসূদন কামিনি
বিদ্যালক্ষ্মি সদা পালয় মাম্।।
এক্ষেত্রে উপরি উক্ত অষ্টলক্ষ্মী স্তবের অংশটি উল্লেখ্য। অনেকে একসময় প্রতিছয় বৎসর ব্যাপী বিদ্যালক্ষ্মী বা সারস্বত উপাসনার ব্রত পালন করে উদযাপন করতেন। ভবিষ্যপুরাণে আছে –
মাঘে মাসি সিতে পক্ষে পঞ্চমী যা শ্রিয়ঃ প্রিয়া।
তস্যামারভ্য কর্তব্যং বৎসরান্ ষট্ ব্রতোত্তমম্।।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/unnamed-1.jpg)
নানা অভিধান যেমন – আচার্য মেদিনীকষ হেমচন্দ্র , জটাধর প্রমুখের অভিধানে স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে যে যিনি শক্তি, তিনি শ্রী ,তিনিই বিদ্যা সরস্বতী। বিধানপারিজাত বরাহপুরাণের বচন উদ্ধৃত করে মাঘী পঞ্চমীতে শ্রী র পূজার বিধান দিয়েছেন –
মাঘশুক্লচতুর্থ্য্যান্তু হর ( বর) মারাধ্য চ শ্রিয়ঃ।
পঞ্চম্যাং কুন্দকুসুমৈঃ পূজাং কুর্যাৎ সমৃদ্ধয়ে।।
বর্ষক্রিয়াকৌমুদী প্রাচীন প্রথানুসরণ করে সেই ব্রতের উল্লেখ করেছেন। শ্রীপঞ্চমীর দিন ব্রত সূচিত করে ছয় বৎসর ব্যাপী সেই ব্রত পালন করতে হয়। ষষ্ঠ বৎসরে ব্রত উদযাপন। এই ব্রতের ছয় বৎসর শ্রী পঞ্চমীর দিন শ্রী বিদ্যার উপাসনা করতে হয়। প্রথম দুই বৎসর পঞ্চমীর দিন লবণ ভক্ষণ করতে নেই। তারপরের দুই বৎসর ঐ দিন হবিষ্য আহার করা নিয়ম। তারপর এক বৎসর ফল এবং অন্তিম বৎসর ওই দিন উপবাস করে উপাসনা করার বিধি আছে।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/images-2021-02-12T153618.493.jpg)
বাঙ্গালার নিবন্ধকার রঘুনন্দন বলেছেন – শ্রিয়ঃ প্রিয়াঃ এই বচনের অর্থ করেছেন ” সারস্বত ইত্যু পাদানাং শ্রিয়ঃ সরস্বতাঃ”। তিনি ব্যাড়ির অভিধান তুলে বলেছেন –
লক্ষ্মীসরস্বতীধীত্রিবর্গসম্পদ্বিভূতিশোভাসু।
উপকরণবেশরচনাবিধাসু চ শ্রীরিতি প্রথিতা।।
ভানুজী দীক্ষিতকৃত অমরকোষের টীকায় এই শ্লোকটি আছে। সেই কারণেই সরস্বতী পূজা যা কিছু নতুন ,যা ধূসর শীতের রুক্ষতাকে দূরে সরিয়ে নবীনের বার্তাময় গীত বহন করে আনে তা সকলই উৎসর্গ করা হয়। যেমন – নতুন ফসল ( যবের শীষ ), পলাশ ফুল, আম্রমুকুল ইত্যাদি। মা ধূসর রুক্ষ মাটিকে পুনরায় শস্যশ্যামলা করে তোলেন।
সারস্বত সমভূমি ছিল অতি ঊর্বরা। কৃষিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। এই কারণে সরস্বতী একসময় কৃষিদেবী হিসাবে পূজিত হয়েছেন। মেয়েরা “সারস্বতব্রত” পালন করতেন উত্তম ফসল প্রাপ্তির আশায়। আবার সরস্বতী আরোগ্য শুশ্রুষা দেবী।
![](https://i1.wp.com/ritambangla.com/wp-content/uploads/2021/02/sringeri-086.jpg?fit=1024%2C768)
একদশ শতকে রচিত কথাসরিৎসাগর গ্রন্থ থেকে জানা যায় পাটুলীপুত্রের নাগরিকরা রুগ্নব্যক্তির চিকিৎসার জন্য যে ঔষধ ব্যবহার করতেন তার নাম ছিল সারস্বত। দেবীর সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্রের এখনো যোগ লক্ষ্য করা যায়। পুজোর উপকরণে বাসক ফুল ও যবের শিষ আম্রমুকুল প্রদানে। আয়ুর্বেদে এগুলির ভেষজ মূল্য অপরিসীম।
আদৌ সরস্বতী পূজা শ্রীকৃষ্ণেন বিনির্মিতা।
যৎপ্রসাদাদ্ মুনিশ্রেষ্ঠ মূর্খো ভবতিপন্ডিতঃ।।
অর্থাৎ সে সুপ্রাচীন কাল হতে মাঘী শুক্লা পঞ্চমীতেই সারস্বত উপাসনার প্রথা চলে আসছে।
তবে কেবলমাত্র শ্রী পঞ্চমী তিথিতেই কি দেবীর আরাধনা হয় ? অন্য তিথি কি নেই ?
#ক্রমশঃ
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঋণ স্বীকার : ১. ঋগ্বেদ্
২. মার্কণ্ডেয় পুরান
৩. শ্রী শ্রী চণ্ডী
৪. সরস্বতী তত্ত্ব
৫. সরস্বতী সভ্যতার ইতিহাস