এই যা: কেন্দ্র রেশন দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে !সত্যি কি তাই ? আসল ঘটনাটা কি ?

ত্রাহি ত্রাহি রব । কি হল, কি যে হল ভাব । এক শ্রেণীর বাংলা সংবাদমাধ্যমে । গরীব কল্যাণ যোজনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । এই যা: কেন্দ্র রেশন দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে । গরীব মানুষ গুলো মরে যাবে এবার । কি সর্বনেশে সিদ্ধান্ত, কেন্দ্রের !! ছি: ছি: ।

সত্যি কি তাই ? আসল ঘটনাটা কি ? সুকৌশলে দৃষ্টি ঘোরাচ্ছেন সবাই । দেশ জুড়ে প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে কেন্দ্রীয় সরকার যে বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছিলেন পূর্ব ঘোষণা মত সেই প্রকল্প এবার নভেম্বরে বন্ধ হবে । ফিরে আসবে পূর্বের রেশন ব্যবস্থা ।

সেটা কি রকম ? রাজ্যের প্রেক্ষিতেই বলি । রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ভর্তুকি প্রাপ্ত রেশন কার্ড আছে তিন ধরনের AAY (অন্তর্দয় আয় যোজনা ) সব থেকে গরীব মানুষের জন্য পরিবার পিছু এই কার্ডে আগে মানুষ পেত ১৫ কে জি চাল, ২০ কে জি গম ২ টাকা কে জি দরে মাসে একবার । আরেকটি কার্ড হল SPHH (স্পেশ্যাল প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড) কার্ড । একই পরিবারের সবাইয়ের জন্য ২ কেজি চাল, ৩ কেজি গম মাথা পিছু মাসে প্রত্যেকে । সঙ্গে চিনি । তৃতীয় কার্ডটি হল PHH ( প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড ) । ২ কেজি চাল, ৩ কে জি গম ২ টাকা কেজি দরে মাথা পিছু প্রত্যেকে, মাসে একবার ।

এই সমস্ত ব্যবস্থাটি কেন্দ্রের । প্রতি কে জি চাল ও এবং গমের সংগ্রহ মূল্য ( চাষীর কাছ থেকে কেনা, রাইস মিল, এফ সি আই, ডিলার হয়ে দোকানদারের কাছে যাওয়া পর্যন্ত ) যে খরচ হয় ৩০ টাকা তার মধ্যে কেন্দ্র ভর্তুকি দেয় ২৭ টাকা, গ্রাহক দেন ২ টাকা, রাজ্য সরকার দেয় ১ টাকা । অর্থাৎ প্রাপকের মাসের ৫ কেজি চাল গমের জন্য কেন্দ্র দেয় ১৩৫ টাকা, গ্রাহক দেন ১০ টাকা, রাজ্য দেয় ৫ টাকা ।
এই ব্যবস্থাটির আওতায় আছেন ৬ কোটি ২ লক্ষ গ্রাহক ।

এর বাইরে রাজ্য সরকারের দু ধরনের কার্ড আছে । বড় পিজবোর্ড এর কার্ড । সবুজ কার্ডের নাম RKSY ওয়ান । এই কার্ডের প্রাপক পান ২ কে জি চাল, ৩ কে জি গম । ২ টাকা দরে । এর গ্রাহক সংখ্যা রাজ্যে ১ কোটি ৬ লক্ষ ।

দ্বিতীয়টি RKSY টু । এর গ্রাহকরা মাথা পিছু ১ কেজি চাল পান ১৩ টাকায়, ১ কে জি গম পান ৯ টাকায় । এই প্রাপকের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ।
ওপরের উল্লেখিত দু ধরনের রেশন কার্ডে কেন্দ্রের কোন ভর্তুকি নেই । পুরোটাই রাজ্যের ।

কেন্দ্রীয় সরকার বিনা পয়সায় গরীব কল্যাণ যোজনায় যে বিনা পয়সায় রেশন এতদিন দিলেন তার আওতায় ঐ ৬ কোটি দু লক্ষ + ১ কোটি ৬ লক্ষ + ১ কোটি ৬৬ লক্ষ = ৮ কোটি ৭৪ লক্ষ মানুষ বাংলায় ছিলেন অফিসিয়ালি ।

এবার ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন হওয়ায় কেন্দ্রের দেওয়া ভর্তুকি কেন্দ্র দেবে, রাজ্যের দেওয়া ভর্তুকি রাজ্যকে দিতে হবে । মানুষ দিনের শেষে রেশন যেমন পাচ্ছিলেন তেমনই পাবেন । PHH ও SPHH রেশন কার্ডে মানুষকে মাসে ১০ টাকা করে দিতে হবে । রাজ্যের RKSY ওয়ানের ক্ষেত্রেও তাই । আর রাজ্যকে এবার নিজের কোটার ভর্তুকিটা নিজেকে দিতে হবে । আর কেন্দ্রের দেওয়া ভর্তুকিতে নিজের নাম ফাটানোর লপচপানি বন্ধ ।

এখানেই রাজ্য পড়েছে সমস্যায় । কেন্দ্র পুরো ভর্তুকি দিচ্ছিল, আর তাকে নীল সাদা রঙের কার্ড করে ” খাদ্য সাথী ” বলে দিব্যি চালাচ্ছিলেন মমতা প্রায় ৬ কোটি ২ লক্ষ গ্রাহকের কাছে এতদিন ।

আবার এই অঙ্কেও গন্ডগোল আছে । কি রকম ?
এক খুব প্রবীণ খাদ্য দফতরের অফিসারের মতে কেন্দ্রের তিন ধরনের আসল গ্রাহকের সংখ্যা আসলে সোয়া চার কোটির মত । সেই সংখ্যাকে কাগজে কলমে বাড়িয়ে ৬ কোটি ২ লক্ষ বলে চালিয়ে ভর্তুকি নিয়ে আসা হয় এ রাজ্যে । আর সেই টাকায় রাজ্যের নিজের দু ধরনের কার্ডের প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহকের চাল গমের খরচটা তুলে নেওয়া হয় । ভাবুন ।

কাহিনী এখানেই শেষ নয় । রেশন কার্ডের আঁধার লিংকের ব্যাপারটার দীর্ঘ বিরোধিতা করেছে আমাদের রাজ্য । শেষে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র তিরস্কারের পর রাজ্য আঁধার লিংকের অনুমতি দেওয়ায় শুরু হয়েছে কাজ । প্রথম দফাতেই প্রায় ৫৬ লক্ষ রেশন কার্ড যে জাল তা ধরা পড়েছে । এবং তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে । যার মানে দাঁড়ায় এখন পর্যন্ত বাতিল হওয়া এই ৫৬ লক্ষ রেশন কার্ডের ভর্তুকি বাবদ মাসে মাথা পিছু ১৩৫ টাকা করে কেন্দ্র থেকে এতদিন এসেছে । এবং সেটা ভূতেরা খেয়ে গেছে । এর হিসেব দাঁড়ায় কি ? প্রতি মাসে প্রায় ৭৫ কোটি ৬ লাখের গল্প, যে ভর্তুকি খেয়ে যাচ্ছিল ভূতে । বাকি লিংকিং করতে গিয়ে সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ আন্দাজ করতে পারেন ?

ঠিক এই বাস্তবতায় রেশন ব্যবস্থা ফিরছে পুরানো অবস্থায় । রাগ কেন হবে না মমতার বলতে পারেন ? পেট্রোলে ছাড় ৫ টাকা, ডিজেলে ছাড় ১০ টাকা, ভোজ্য তেলের সীমা শুল্ক ২.৫ থেকে নামিয়ে শূন্য, আমদানির শুল্ক ৩২.৫ থেকে নামিয়ে ১৭.৫% । কৃষি সেস ২০ থেকে নামিয়ে ৫% । ইতিমধ্যেই এসব কার্যকরী হতে শুরু করেছে ।

চাপ বাড়ছে । বাড়ারই কথা । এতগুলো গুগলি এক স্পেলে এলে তেন্ডুলকারই চমকাতেন । নবান্ন তো কোন ছাড় ! তার ওপর রেশনে লুঠ বন্ধ । এভাবে, এই পথে । মাসে যার মাপ কয়েকশো কোটিতে !!

ত্রাহি ত্রাহি রব তাই হবে নাই বা কেন ! না হলেই তো অবাক হতাম, হওয়ারও কথা । এই সময়ে নগদের ভীষণ ভীষণ দরকার । বন্ধু সংবাদ মাধ্যম বুঝছে । কেন্দ্র বুঝলোনা !

সামনে গোয়া, সামনে ত্রিপুরা, প্রচুর খরচ ! এই সময়টাকেই বাছলেন শেষে মোদী !!

বড্ড অবিবেচক ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.