নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বড় ঘোষণা করলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বৃহস্পতিবার  পূর্ণিয়া জেলার ধমদাহায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নীতীশ জানিয়েছেন যে বিহারের চলতি বিধানসভা নির্বাচনই তার জীবনের শেষ নির্বাচন।  ৭ নভেম্বর শনিবার, বিহারে তৃতীয় তথা শেষ দফার নির্বাচন। ভাগ্য নির্ধারণ হবে রাজ্যের ১২জন বিদায়ী মন্ত্রী, বিধানসভার অধ্যক্ষ সহ একাধিক ডাকসাইটের নেতাদের। এরই মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরে রাজনৈতিক তরজার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। রাজ্যের বিদায়ী ক্ষমতাসীন জোট এবং বিরোধী পক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর এই বড় ঘোষণার পৃথক মানে বের করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে নীতীশের নিজের দল জেডিইউ তরফ থেকে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এদিনের জনসভায় নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, জঙ্গলরাজের আমলে বিহারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক ছিল না। এমনকি ওষুধ পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। মানুষের সমস্যার কথা বিবেচনা করেই কাজ করে চলেছে সরকার। গ্রামগুলিকে সড়কপথের সংযুক্ত করা হয়েছে। কন্যা সন্তানদের স্কুলে যাবার জন্য সাইকেল এবং পোশাক দেওয়া হয়েছে। প্রতিটা বাড়িতে পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্ষমতায় এসে তিনি নিজে যে বিহারবাসীর জন্য ক্রমাগত কাজ করে গিয়েছেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি নিজে। রাজ্যের প্রতিটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে গড়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার মানুষের চিকিৎসা হয়। সেখানে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এমনকি ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত। নির্বাচনীয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে এদিন নীতীশ বলে ওঠেন, ‘ জেনে নিন আজ নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। পরশুদিন ভোটগ্রহণ। আর এটা আমার শেষ নির্বাচন। শেষ ভাল যার সব ভালো তার।’ এদিনের জনসভায় রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি তার সরকারের আমলে হয়েছে বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়েও আশ্বস্ত করেছেন।  উল্লেখ করা যেতে পারে, এই বিদায়ী সরকারের ৩১ জন মন্ত্রীদের মধ্যে ২৬ জন বিধানসভার সদস্য ছিলেন। তার মধ্যে ২৪ জন এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে, তথ্যমন্ত্রী নীরজ কুমার, আবাসনমন্ত্রী অশোক চৌধুরী বিধান পরিষদের সদস্য। রাজ্যের শেষ দফার ভোট গ্রহণে ৭৮টি আসনের জন্য নির্বাচন হবে। এর বেশিরভাগ আসনেই উত্তর-পূর্ব বিহারের সীমাঞ্চলে অবস্থিত। যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি। তাই ভোট প্রচারে শেষ দিনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অভয় দিতে শোনা গেল নীতীশের কণ্ঠে। কারণ এই অঞ্চল থেকেই সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ সবথেকে বেশি একটা সময় দানা বেঁধেছিল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে বিজেপির ভোট ব্যাংক যেরকম রাজ্যের উচ্চবর্ণের লোকেরা। ঠিক তেমনি সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক হচ্ছে আরজেডি এবং কংগ্রেসের। ফলে নিজেদের দিকে ভোট টানতে মরিয়া প্রচার করেছেন নীতীশ কুমার। একটা সময় ছিল যখন বলা হত সিঙ্গারায় যতদিন আলু থাকবে। ততদিন বিহারে লালু প্রসাদ যাদব থাকবেন।  অর্থাৎ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আরজেডি নিজের শক্তি বরাবর দেখিয়ে এসেছে। সেইখান থেকে বিকাশ পুরুষ হিসেবে জঙ্গল রাজকে উপড়ে ফেলে ক্ষমতায় আসীন হন নীতীশ কুমার। দেশবাসীর কাছে বিহারের ভাবমূর্তি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নীতীশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.