সান্তনু সিনহা বিশ্বাসের জন্য সরকারি নোটিফিকেশন

তারিখটা ছিল সম্ভবত ৩১ আগস্ট, ২০২০ ।
করোনায় ব্যস্ত কলকাতা । কি ভাবে বাঁচবে জীবন তার জন্য দৌড়চ্ছে মানুষ ।

ঠিক সেই সময়ে চুপচাপ কাজটি সেরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । কালীঘাট থানার ওসি সান্তনু সিনহা বিশ্বাসকে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার করেছিলেন । তার ঠিক পরের দিনই ছিল মমতার announce করা “পুলিশ দিবস” । আর সেদিনই অর্থাৎ ১ লা সেপ্টেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠকে বোঝানো হয়েছিল তাঁর আসল দায়িত্ব । বোঝানো বললে ভুল হবে, তিনি বুঝিয়েছিলেন ম্যাডামকে ঠিক কি ভাবে তিনি পুলিশের নিচুর লেভেল এবং মাঝের লেভেলের ভোট এবং তাঁদের পরিবারের ভোটটা ম্যানেজ করবেন ২০২১ এর নির্বাচনে ।

ঘটনাটা বিস্তৃত ভাবে শুনেছিলাম কলকাতা পুলিশের এক সিনিয়র আই পি এসের কাছে ।

কে এই সান্তনু সিনহা বিশ্বাস । গত দশ বছর ধরে কালীঘাট থানার ও সি । ২০১১র যেদিন থেকে মমতা মুখ্যমন্ত্রী প্রায় সেসময় থেকেই কালীঘাটের থানার চেয়ারে তিনি । কোন এক বিশেষ অঙ্কে তাঁর চেয়ার টলেনি কোনোদিন । তৃণমূলের বাঘা বাঘা নেতারা তাঁকে ডরাতেন । সাধারণ ও সি হয়েও তিনি আই পি এস দের খাতির পেতেন । কারণ তিনি খোদ ম্যাডামের লোক । এই তাঁর পরিচয় ।

পরিচয় আরও আছে ।

মমতা ক্ষমতায় এসেই পুলিশের এসোসিয়েশন সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন । তার পরিবর্তে পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ডের নামে চালাতেন রাম রাজত্ব । পুলিশের সাধারণ কর্মী থেকে আই পি এসরা বুঝে গিয়েছিলেন সান্তনু সিনহা বিশ্বাসের কথাই মমতার কথা । অতএব সীমাহীন ক্ষমতা পেয়েছিলেন । কে সরকার পক্ষের আর কে বিরোধী পক্ষের বাছাই করে নিতেন এবং দিতেন ইনিই । কে শহরের প্রাইজ পোস্টিং নেবে আর কে কুচবিহারের গ্রামে পোস্টিং পাবে মমতা এঁর চোখ দিয়েই দেখে নির্দেশটা দিতেন । ফলে পুলিশের মধ্যেও একটা চক্র বানিয়ে ফেলেছিলেন সহজে ।

এঁর বেসিক কাজটা ছিল তৃণমূলের প্রতি পুলিশের আনুগত্য আদায় করা এবং ভোট বাক্সে সেটা টেনে আনা । ৩১ আগস্ট ২০২০ র রাত থেকেই সেটা অসামান্য দক্ষতায় করে গেছেন নাগাড়ে । টাইম টু টাইম মমতাকে রিপোর্টও করেছেন । জেলায় জেলায় ঘুরে, থানায় থানায় বসে ওয়েলফেয়ার বোর্ডের নামে আনুগত্যও আদায় করেছেন । নামে থেকেছেন কালীঘাটের ওসি । পরবর্তীতে হয়েছেন স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর । শোনা যায় এই পদ প্রাপ্তিও জেলায়, জেলায় সমীহ আদায় করার কৌশলগত কারণে । রাজ্য সরকার কত পুলিশ দরদী সেটা পুলিশের বিভিন্ন স্তরে বুঝিয়ে ভোট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়াটাই ছিল তার আসল কাজ ।

আর এই কাজ নিপুণ দক্ষতায় করতে গিয়ে এবারের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের দফতরে জমা পড়ে অকাট্য সব প্রমাণ । করছিলেন নাকি নাগাড়ে পোস্টাল ব্যালট ম্যানেজ । হাজারে হাজারে । পোস্টাল ব্যালট কারচুপির অভিযোগ আসায় শেষ মুহূর্তে তাঁকে নির্বাচন কমিশন ট্রান্সফার করে জলপাইগুড়ি রেঞ্জে । নির্বাচন সংক্রান্ত কোন কাজ করতে পারবেন না এই নির্দেশ নামা লিখিত ভাবে দিয়ে ।

সেই শান্তনু বিশ্বাসই ফিরে এলেন এবার আলোয় আর আলোচনায় । এত নিষ্ঠার, এত আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপ কলকাতা পুলিশে তাঁকে ও সি থেকে প্রমোশন দিয়ে এসিস্ট্যান্ট কমিশনার করে দিলেন মমতা । সঙ্গে কালীঘাট থানায় তাঁকে ওসি পদেও রেখে দিলেন । অর্থাৎ আপনি একই সঙ্গে স্কুলের ক্লার্ক হলেন, আবার হেড মাস্টারও হলেন । ব্যাপারটা সেরকমই দাঁড়ালো ।

নীচে সান্তনু সিনহা বিশ্বাসের জন্য সরকারি নোটিফিকেশনের প্রতিলিপিটা দিলাম ।

ভাবছিলাম দুয়ারে ডিউটি করা, দুয়ারে ডিভিডেন্ড ফেরালে কি না কি হয় এই বঙ্গে । টানা দশ বছরের একই থানায় ওসি, রাজ্য জুড়ে সমুদ্র থেকে পাহাড়ের নোডাল অফিসার, আর তারপর সাদার্ন ডিভিশনের এসিস্ট্যান্ট কমিশনার আর তার সঙ্গেই কালীঘাটের ওসির চেয়ারে আবারও বসে থাকা ।

শুধু কলকাতার সি পি পদ আর রাজ্যের ডি জি পদপ্রাপ্তিটাই তাহলে বাকি থাকল ।

লড়ে যান শান্তনুবাবু, অনন্ত শুভেচ্ছা থাকল । মায়ের মন্দিরে কোনোদিন গেলে কালীঘাট থানায় গিয়ে পুষ্পস্তবকটাও আপনাকে দিয়ে আসব ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.