পরাক্রমী নেতা নেতাজী

” দেশের প্রতি মাটির প্রতি
ভালোবাসা ছিল নিরলস।
দেশমাতৃকার দামাল ছেলে
তুমি সুভাষচন্দ্র বোস।”

১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি জানকী নাথ বোস ও প্রভাবতী দেবীর ঘরে জন্ম নেওয়া অগ্নিশিশু দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বোস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যতম উজ্জ্বল ও মহান দেশপ্রেমিক – যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের মুক্তির জন্য। ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক লগ্নে তাঁর চিরস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ রেখে তেইশে জানুয়ারি পালিত হবে ‘পরাক্রম দিবস’।
ছাত্রজীবন থেকেই দেশের প্রতি নিবেদিত প্রাণ তাই সিভিল সার্ভিসে চতুর্থ স্থান অধিকার করেও ত্যাগ করলেন ব্রিটিশ সরকারের চাকরি। চিত্তরঞ্জন দাস, রাসবিহারী বসুর মতো নেতৃত্বের সংস্পর্শে এসে সক্রিয় আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৩০ সালে কলকাতা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের ত্রিপুরা অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের জন্য সুভাষচন্দ্র বোস কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেও গান্ধীজীর বিরোধিতায় তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন ও অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন। ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করার জন্য তাকে গৃহবন্দি করা হয়। এই অবস্থায় ১৯৪১ সালে এক শীতের রাতে কলকাতার এলগিন রোড এর বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে বের হয়ে পেশোয়ার হয়ে কাবুল পৌঁছন। এরপর কাবুল থেকে মস্কো হয়ে পৌঁছন জার্মানিতে। পরে জার্মানি থেকে জাপান এবং জাপান থেকে পৌঁছন সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরে গিয়ে রাসবিহারী বসুর হাত থেকে আই.এন.এ. (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) -এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। গঠন করেন আজাদ হিন্দ সরকার। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনারা তাকে ভূষিত করেন ‘নেতাজি’ নামে।
ভারতের বিপ্লবের ইতিহাস শুরু হয় নতুন অধ্যায়। বেতার মাধ্যমে নেতাজী দেশবাসীকে ডাক দেন “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। আজাদ হিন্দ বাহিনীর হুংকার ছিল ‘দিল্লি চলো’। জাপান সরকারের সহায়তায় নেতাজী বাহিনী সহ ভারতের অভ্যন্তরে প্রায় ২৪১ কিমি পর্যন্ত অগ্রসর হন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা নেতাজীকে সহযোগিতা করতে অসমর্থ হয়। ফলে বাহিনীর ক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর এই আগ্রাসন ব্রিটিশ সরকারের মনে প্রবল ভীতি সঞ্চার করেছিল এবং ভারতের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট এক বিমান দূর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু সংবাদ প্রচার হলেও তা আজ‌ও প্রমানিত নয়। নেতাজী প্রকৃত‌ই অমর।
স্বামীজির ভাবধারা উদ্বুদ্ধ করত নেতাজীকে। তিনি তাঁর দেশমাতৃকাকে আরাধ্য দেবী মনে করতেন। তাঁর রচিত ‘দি ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’, ‘ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’ ব‌ইগুলি ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
দেশবাসীর মনে চির অমলিন নেতাজীর উপস্থিতি। পরমবীর দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন যুগ যুগ ধরে সসম্মানে উদ্‌যাপিত হবে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে। ভারতবর্ষ পূজিত হবে ‘বীর সুভাষের মহান দেশ’ রূপে।

সুচরিতা চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.