বাংলার পুলিশ দলদাস, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করুক কমিশন, দাবি জানালেন মুকুল, রবিশঙ্কররা

বাংলায় সুষ্ঠু ভাবে ভোট করতে হলে রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা করলে চলবে না। কেন্দ্রীয়বাহিনীকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে কমিশনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এমনই দাবি জানালেন কেন্দ্রীয় বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব।

বুধবার নয়াদিল্লির নির্বাচন সদনে যান কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও কেন্দ্রীয় বিজেপি-র তরফে বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে বাইরে এসে সাংবাদিকদের রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, বাংলার পুলিশের উপর ভরসা করে সুষ্ঠুভাবে ভোট করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয়বাহিনীকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেন কমিশন রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা না করে।”

এ দিন বিজেপি নেতারা জানান, কমিশনের কাছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমস্ত ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এত হিংসা, এত রক্ত দেশের কোনও রাজ্যে হয় না। রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় কী হয়েছে গোটা দেশ দেখেছে। ১০০ জন মানুষের মৃত্যু, গণনার দিন কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার জ্বালিয়ে দেওয়া, কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশের নমুনা নয়।”

বিজেপি-র তরফে কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বাংলার পুলিশ প্রশাসনের ছবিটাও। গেরুয়া শিবিরের নেতাদের কথায়, “বাংলায় সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণায় সে রাজ্যের আইপিএস অফিসাররা বসে পড়েন সেখানকার প্রশাসন কেমন তা সে দিনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।” বিজেপি-র দাবি, গোটা বাংলাটাই স্পর্শকাতর। তাই সব বুথে পর্যাপ্ত পরিমাণ কেন্দ্রীয়বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।

বিজেপি নেতারা এ দিন অভিযোগ করেন, বাংলায় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। তাই কমিশন যেন মিডিয়া অবজার্ভার নিয়োগ করে। প্রসঙ্গত একই অভিযোগ মমতা তুলেছেন কেন্দ্রের বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, জাতীয় স্তরে সংবাদমাধ্যকে তাদের কাজ করতে দিচ্ছে না।

পর্যবেক্ষকদের মতে,নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই কমিশনের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে বিজেপি। গত সপ্তাহে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য আধিকারিক আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মুকুল রায়, শমীক ভট্টাচার্যরা। সে দিন নিয়মানুযায়ী কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে ওই পদ থেকে সরতেই হতো। কারণ কমিশনের নিয়মানুযায়ী কোনও পুলিশ কর্তার এক পদে তিন বছর হয়ে গেলে তাঁকে আর সেই পদে রাখা যায় না। তাই তাঁকে সরিয়ে ডিআইজি সিআইডি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আইনকানুন গুলে খাওয়া মুকুল রায় বলেন, কলকাতার কমিশনার পদ থেকে রাজীবকে সরালেও কায়দা করে তাঁকে ইকোনামিক অফেন্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেখে দেওয়া হয়। যা কলকাতা পুলিশেরই অধীনস্ত সংস্থা। এটাকে নবান্নের কারসাজি বলেও উল্লেখ করেন মুকুলবাবুরা। কাকতালীয় ভাবে তারপরেই দেখা যায়, নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজীবকে অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

যদিও বাংলার শাসক দলের নেতারা বিজেপি-র কমিশনে নালিশ জানানো নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “ভোটে জিততে গেলে সংগঠন লাগে। বিজেপি-র তো সেটাই নেই। তাই বারবার কমিশনে যাচ্ছে। মহেশ তলায় তো কত কেন্দ্রীয়বাহিনী দিয়ে ভোট হলো। কী হলো?”

তবে কমিশনও যে এ বার কড়া তা নির্বাচন নির্ঘণ্টতেই পরিষ্কার। নজিরবিহীন ভাবেই এ বার সাত দফায় ভোট হচ্ছে বাংলায়। সেই সঙ্গে বাংলার নাম না করলেও কমিশন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, স্পর্শকাতর রাজ্যগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এখন দেখার বাংলায় সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে কমিশন কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.