আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের সময়সীমা ছিল ৩২ মিনিট। তার মধ্যে ১৮ মিনিট তিনি ব্যয় করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং শাসক তৃণমূলকে আক্রমণ করতে। প্রধানমন্ত্রীর বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এই মুহূর্তে নানা সঙ্কটের ঘেরাটোপে।’’ প্রধানমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের এক দিনের মধ্যে শুধু আলিপুরদুয়ার জেলার জন্য রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে দীর্ঘ পোস্টে মমতা লেখেন, ‘আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষের জন্য আমাদের সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। তাই আমি আলিপুরদুয়ারের জনগণের জন্য আমাদের প্রকৃত উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে চাই।’
এর পর মোট ১১টি পয়েন্ট করে মুখ্যমন্ত্রী আলিপুরদুয়ার সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘মানুষের আরও কাছাকাছি প্রশাসনকে আনতে ২০১৪ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ার জেলাকে বাংলার ২০তম জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। তার পর থেকে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক অগ্রগতি হয়েছে।’ মমতার জানান, আলিপুরদুয়ারের প্রত্যেক বাসিন্দা অন্তত একটি করে রাজ্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সঙ্কট, সমাজে ছড়িয়ে পড়া হিংসা এবং অরাজকতা। দ্বিতীয় সঙ্কট, মা-বোনেদের নিরাপত্তার অভাব, তাঁদের উপরে অত্যাচার। তৃতীয় সঙ্কট, যুবকদের মধ্যে ঘোর নিরাশা, বেকারত্বের যন্ত্রণা। চতুর্থ সঙ্কট, দুর্নীতি এবং তার ফলে এখানকার প্রশাসনের উপরে জনতার বিশ্বাস একনাগাড়ে কমতে থাকা। পঞ্চম সঙ্কট, গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নিতে থাকা ক্ষমতাসীন স্বার্থপর রাজনৈতিক দল।’’ শুক্রবার মমতা লিখেছেন, ‘আমরা সর্বদা বাংলার মানুষের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তাই তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা ধর্ম, বর্ণ বা অন্য কোনও সংকীর্ণতার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করি না। আমরা সর্বদা জনগণের জন্য কাজ করি। সর্বদা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি।’
আলিপুরদুয়ারের জন্য পরিকাঠামো খাতে উন্নয়নের দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর সরকার গত কয়েক বছরে কী কী করেছে, তার বর্ণনা দেন মমতা। তিনি জানান, জনসাধারণের সুবিধার্থে এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সুবিধা দিতে কী কী করেছে তাঁর সরকার। মমতা জানান, শুধু আলিপুরদুয়ারে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পান ৩.৫৭ লক্ষ মহিলা। খাদ্যসাথী পান ১২.৯১ লক্ষ উপভোক্তা, সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছে ২.৫৪ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। রূপশ্রী পেয়েছেন ৪৬,০০০ মহিলা। আলিপুরদুয়ারে স্বাস্থ্য সাথীর সুবিধা পান ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। এ ছাড়া শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় ট্যাবপ্রদান, জয় জোহর পেনশন যোজনা, কৃষক বন্ধু, বাংলা শস্য বিমার উপভোক্তাদের সংখ্যা-সহ তথ্য দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারে তাঁরা ৩৭,০০০-এর বেশি পাট্টা বিতরণ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ১৭,০৭২টি জমির পাট্টা, ১২,৬১৪টি শরণার্থী পাট্টা, ৬,৩৯৭টি বনের পাট্টা এবং ১,১২৭টি চা সুন্দরী পাট্টা।

এ ছাড়াও ‘গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসাবে মমতা তালিকায় দিয়েছেন জলস্বপ্ন, বাংলার বাড়ি, কর্মশ্রী প্রকল্পের মোট সুবিধাপ্রাপ্তদের সংখ্যা। তিনি জানান, জেলার ২.৮৪ লক্ষ মানুষের জন্য ১.২৮ কোটি কর্মদিবস তৈরি করেছে তাঁর সরকার। সে জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়, শিল্পক্ষেত্র, যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি, চা-বাগান এবং শ্রমিকদের জীবনের মানোন্নয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তিনি। শিল্প এবং পর্যটন ক্ষেত্রে, জনজাতির উন্নয়ন, রাজবংশী এবং কামতাপুরী উন্নয়ন নিয়ে তথ্য দেন মমতা। তিনি লেখেন, ‘এগুলো আলিপুরদুয়ারের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরা অনেক উদ্যোগের মধ্যে এগুলো কয়েকটি।’