পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশে গমের আটা মজুত করতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তৈরি করা হয়েছে জরুরি তহবিলও। সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা আছে, এমন স্থানগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে সব সংবেদনশীল এলাকায় আটা মজুত করা হচ্ছে বলে খবর। পাক সংবাদমাধ্যম ডন প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য উল্লেখ করে জানিয়েছে, অন্তত দু’মাসের খাদ্য মজুত করা হয়েছে চিহ্নিত এলাকাগুলিতে। কী কারণে এই তৎপরতা, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের খাদ্য দফতর আটা-ময়দা মজুতের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। মূলত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় খাদ্য মজুত করা হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অতিসক্রিয়তায় নিয়ন্ত্রণরেখা অশান্ত। অভিযোগ, প্রতি রাতেই পাকিস্তানি সেনা সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে এবং ভারতীয় ঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালানো হচ্ছে। ভারতও একই ভাবে পাল্টা জবাব দিচ্ছে। শনিবার রাতেও এর অন্যথা হয়নি। এই নিয়ে টানা ১০ দিন নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করল পাকিস্তান। অশান্তির আবহে নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় খাদ্য মজুত জল্পনা বাড়িয়েছে।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অনেক অংশই দুর্গম এবং বরফাবৃত। সেই এলাকাগুলিতে স্থানীয় খাদ্য দফতর বরাবরই আগাম খাদ্য মজুত করে। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন অন্তর এই অংশে খাদ্য মজুত করা হয়। কিন্তু ডন জানিয়েছে, ওই এলাকাগুলির বাইরেও বিস্তীর্ণ অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেখানে আটা মজুত করার কাজ চলছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধরি আনোয়ারুল হকের নির্দেশে এই কাজ শুরু হয়েছে। খাদ্য দফতরের প্রধান চৌধরি আকবর ইব্রাহিম ডনকে বলেছেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে অন্তত দু’মাসের আটা যাতে মজুত থাকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।’’ খাদ্যভান্ডার সুরক্ষিত রাখার জন্যেও তৎপর হয়েছে প্রশাসন। ইব্রাহিম জানিয়েছেন, সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা আছে কিংবা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, এমন জায়গা থেকে খাদ্যভান্ডার (খাবারের ডিপো) সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে খাদ্যের সঙ্কট না-তৈরি হয়, তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ, জানিয়েছেন আধিকারিক। বৃহস্পতিবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী দেশের আইনসভায় জানিয়েছিলেন, সীমান্তে উত্তেজনার পরিস্থিতিতে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনে এই তহবিলে অর্থ খরচ করা হবে। নীলম, ঝিলাম ভ্যালি, হাভেলি, পুঞ্চ, কোটলি এবং ভিমবেরের মতো জেলায় নিয়ন্ত্রণরেখাঘেঁষা অঞ্চলের জন্য এই তহবিল প্রস্তুত করা হয়েছে। কিছু দিন আগে এই সমস্ত এলাকার সাধারণ মানুষকেও খাদ্য মজুতের পরামর্শ দিয়েছিল প্রশাসন।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। পাল্টা পাকিস্তানও বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুই দেশের বাণিজ্য। এই পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি অব্যাহত। রোজ নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চলছে। তার মাঝেই সীমান্তে খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করেছে পাকিস্তান।