‘বাল্মীকি রামায়ণ’ আধারিত এই রাম যশোগাথার মূল গ্রন্থটি ১৭৬৭তে নষ্ট হয়ে যেতে তৎকালীন ‘চক্রী’ রাজা ‘রাম’ নিজের স্মৃতি থেকে গ্রন্থটির পুনর্নির্মাণ করেন । থাইল্যান্ডে সরকারি ভাবে রামায়ণকে ‘রাষ্ট্রীয় গ্রন্থ’ ঘোষণা করা এই কারণে সম্ভব হয়েছে, কারণ ভারতের মতো সেদেশে মেকলে-নন্দিত সারস্বত সমাজের বরপুত্র ভেড়ার চামড়া গায়ে চড়ানো স্বধর্ম বিদ্বেষী ‘হিন্দু’ নামধারী নখ-দন্ত গুটিয়ে রেখে জাতীয়তাবাদী চোগা-পরিহিত পন্ডিতস্মণ্যরা নেই, যারা ছলে-বলে কৌশলে বিষ-নিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়ে আত্ম-তুষ্টির অহংকারে অহোরাত্র ফুঁসছে ।
ভারতে যেমন ‘রামলীলা’ যাত্রাপালা হয়, দশেরা বা অন্যান্য ধার্মিক উৎসব উপলক্ষে, থাইল্যান্ডেও তেমনি রামচরিত-চর্চিত নাটক ও পুতুলনাচ প্রদর্শনী দেখাকে ধর্ম-পালনের আবশ্যক অঙ্গ হিসাবে মান্য করা হয় । ‘রাম কিয়েন’-এর প্রধান কুশীলবদের নাম সেদেশে এইরকম :
১. রাম (রাম)
২. লক (লক্ষণ)
৩. পালী (বালী)
৪. সুক্রীপ (সুগ্রীব)
৫. ওঙ্কোট (অঙ্গদ)
৬. খোম্পুন (জাম্বুবাণ)
৭. বিপেক (বিভীষণ)
৮ . তোতস্ কন (দশ কন্ঠ) রাবণ
৯. সদায়ূ (জটায়ু)
১০ . সূপন মচ্ছা (শুর্পনখা)
১১. মারিত (মারীচ)
১২. ইন্দ্রচিত (ইন্দ্রজিৎ) মেঘনাদ
থাইল্যান্ডের হিন্দু দেবী-দেবতা
থাইল্যান্ডে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং হিন্দুরা সেদেশে সংখ্যালঘু । কিন্তু থাইল্যান্ডে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি কোনকালে। থাইল্যান্ডের বৌদ্ধরা যেসব হিন্দু দেব-দেবীর পূজার্চনা করেন, তাদের নাম :
১. ঈসুয়ন / ঈশ্বন (ঈশ্বর-শিব)
২. নারাই (নারায়ণ / শ্রীবিষ্ণু)
৩. ফ্রাম (ব্রহ্মা)
৪. ইন (ইন্দ্র)
৫. আথিত (আদিত্য/সূর্য)
৬. পায় (পবন/বায়ু)
থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় প্রতীক হলেন ‘গড়ুঢ়’ । গড়ুঢ় নামে যে বিশাল পক্ষীটি একসময় ভারতীয় উপমহাদেশের আকাশে বিচরণ করতো, সেটি আজ লুপ্তপ্রায় । তার ছোটভাই ‘গীধ’ কি ‘শকুন’-এরও একই দশা (ধন্য শ্বেতবিপ্লব/হলস্টীন-জার্সি/অক্সিটোসিন ও ডিক্লোফেনাক্) । ইংরাজীতে এই পাখি ‘ব্রাহ্মণী পক্ষী’ (The Brahminy Kite) নামে পরিচিত । বৈজ্ঞানিক নাম, ‘Haliastur Indus’ । ফরাসী পক্ষী-বিশারদ ম্যাথুরিন জ্যাক্স ব্রিসেন্ ১৭৬০ সালে দক্ষিণ ভারতের পন্ডিচেরী শহরের পাহাড়ে এই পাখীটিকে প্রথম দেখে এর নাম রেখেছিলেন, Falco Indus । এই ইতিহাস থেকেই প্রমাণিত হয় যে গড়ুঢ় কোন কাল্পনিক পক্ষী নয় । ভারতীয় পৌরানিক গ্রন্থে তাই গড়ুঢ়-কে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর বাহন মানা হয়েছে ।
শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন বিষ্ণুর অবতার, আর থাইল্যান্ডে রাজা রামের এই গভীর সামাজিক মাণ্যতার ফলে সেদেশের বৌদ্ধ জনজাতিরও হিন্দু ধর্মের প্রতি অটুট আস্থা রয়েছে । তাই থাইল্যান্ডে গড়ুঢ় হলো ঘোষিত রাষ্ট্রীয় প্রতীক । থাইল্যান্ডের সংসদভবনের সামনেও গড়ুঢ় মূর্তি স্থাপিত ।
‘সুবর্ণভূমি’ এয়ারপোর্ট
হিন্দুভূমি ভারতবর্ষের বহু শহরের রাস্তা-ঘাটের নাম বিদেশি আক্রমণকারী মুসলমান বাদশাহ, মুঘল শাসকদের নামে রাখা, হুমায়ুন রোড, আকবর রোড, শাহজাহান রোড, ঔরঙ্গজেব রোড । এমনকি যে নরপশু বখতিয়ার খিলজী নালন্দা সংস্কৃতি ধূলিসাৎ করে বিদ্যার পীঠস্থানে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিলো, তার নামেই নালন্দা রেলস্টেশনের নাম দেগে দিল, তা হিন্দুরাষ্ট্রের বিড়ম্বনা ছাড়া আর কি ? সেকুলারিজমের ধ্বজাধারীরা বিস্ফারিত চোখ মেলে কেন দেখে আসেনা থাইল্যান্ডের রাজধানীর বুকে সৃষ্ট সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টটি ? 563,000 বর্গমিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট যে বিমানাঙ্গনটি আজ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম, তার স্বাগত-কক্ষটি দেখলে হিন্দু মাত্রেরই গর্ববোধ হবে । দেবাসূরের অমৃতের খোঁজে সমূদ্রমন্থনের বিষয়টি এমন মনোরমভাবে সেই স্বাগত- কক্ষে সৃষ্টি করা হয়েছে তা দেখে যে কোন ব্যক্তি মন্ত্রমুগ্ধ হবেন ।
এই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য শুধু এই, যে হে হিন্দু সেকুলারিস্ট, থাইল্যান্ডের কাছে সেকুলারিজমের পাঠ তুমি সচ্ছন্দে নিতে পারো । আজকের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগণ যারা আদতে সেদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু রক্তেরই বংশজ, তারা কেমন সগৌরবে রাষ্টীয় জীবনযাপন করছেন ।
নিজেদের সংস্কৃতি উপেক্ষা করে কোন সমাজ দীর্ঘদিন জীবিত থাকতে পারেনা ।
সদবুদ্ধি সম্পন্ন হে বাঙ্গালী হিন্দু ওঠো জাগো।