চিনাদের কত্থকের কথা শিখিয়েছেন কলকাতার লোকেশ্বরী

ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ কত্থক৷ সেই সংস্কৃতির সঙ্গে চিনাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন এক বাঙালি যুবতী৷ প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে চিনাদের কত্থক শিখিয়েছেন তিনি৷ নারী দিবস উপলক্ষ্যে লোকেশ্বরী দাসগুপ্তকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন

দেখতে অনেকটা মঙ্গোলীয় বা নেপালি আদলের৷ তবে আদ্যোপান্ত বাঙালি৷ গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের প্রাক্তনী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উইমেন স্টাডিজে এ এম.ফিল করা লোকেশ্বরী কত্থকের টানেই দুর্দান্ত অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে ইতি টেনেছেন৷ দিল্লির আজাদ ভবনে ইন্টারভিউ দিয়ে জিতে নিয়েছিলেন বেজিংয়ের ছাড়পত্র, অন্য দেশের সামনে নিজের দেশের শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরার অনন্য সুযোগ। ২০১৬ সাল থেকে ভারত সরকারের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর পক্ষ থেকে চিনের রাজধানী বেজিংয়ে কত্থক শিক্ষিকা তথা পারফর্মার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। কোভিড পরিস্থিতির জন্য আপাতত লোকেশ্বরী কলকাতায় রয়েছেন৷about:blank

লোকেশ্বরীর কথায়, কত্থক শিক্ষক হিসেবে আমার বেজিং-য়ে আমার নিয়োগ হলেও আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের ভারতনাট্যম এবং মাঝেমধ্যে ফোক ডান্সও শিখিয়েছি৷ এরা সাধারণত ব্যালে স্টাইলে নাচ করে৷ এদের নাচের ফর্মের চেয়েও যেটা আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে সেটা হল এখান স্টেজ সেট আপ, আলোকসজ্জা, পোশাক এবং যেভাবে গোটা অনুষ্ঠানটার আয়োজন করা হয় সেটা৷ আমাদের দেশে এরকম হলে দারুণ হবে৷

লোকেশ্বরীর পায়ে যখন ঘুঙুর উঠেছে তখন তাঁর বয়স মাত্র আড়াই৷ ওই বয়সেই মঞ্চ মাতিয়েছে সে৷ কত্থকে একমাত্র শিক্ষাগুরু তাঁর মা সুরঙ্গমা৷ তিনি নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পী। দেশ-বিদেশের একাধিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে কত্থকের তালিম দিয়েছেন তিনি৷ লোকেশ্বরী ভরতনাট্যমের তালিম পেয়েছেন শ্রী পি.টি. নরেন্দ্রনের কাছে।

মা সুরঙ্গনার সঙ্গে লোকেশ্বরী

অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে ইতি টানা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই লোকেশ্বরীর৷ বরং চিনে কত্থক শেখানোটা তিনি উপভোগ করেন৷ লোকেশ্বরীর কথায়, বিদেশে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নাচের প্রতি যে কী আগ্রহ, না দেখলে বিশ্বাস হবে না! ভারতীয় নাচের মুদ্রা, তাল, লয়, অভিনয় নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পাগল! কাজেই আইসিসিআর আমাকে যখন সুযোগ দিল, হাতছাড়া করিনি।’’

তবে লোকেশ্বরীর মতে ভারতে শুধুমাত্র ক্লাসিকাল নৃত্যের উপরে ভর করে আর্থিক সচ্ছলতা ধরে রাখাটা খুব কষ্টকর৷ তাঁর কথায়, আমাদের দেশে মানুষ যেভাবে বলিউড ডান্স বা জুম্বার পেছনে ছোটে সেখানে পুরো ক্লাসিকাল নিয়ে এগোনোর পথ সহজ নয়৷ কত্থকের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশাবাদী লোকেশ্বরীর কথায়, ‘‘ইতিহাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কত্থক বারবার তার রূপ পালটেছে। বিক্রম আয়েঙ্গার, অসীমবন্ধু ভট্টাচার্য, অদিতি মঙ্গলদাস, আমার মা অসাধারণ সব বিবর্তন আনছেন। আমিও কত্থককে এই পথেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’’

মা-মেয়ে মিলে বাংলার কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে ‘গুরুকুল’ গড়ে তুলতে চান লোকেশ্বরী৷ ভারতীয় শিল্পের সব ফর্ম সেখানে শেখানোর ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.