বোনকে বাঁচাতেই হবে, জামা আঁকড়ে আপ্রাণ লড়াই ছোট্ট দিদির

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে গিয়েছে ছোট্ট মেয়েটা। পিছনে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করছেন অসহায় বাবা। তবে নিজের যন্ত্রণা ভুলে একরত্তি মেয়ের নজর তখন অন্যদিকে। ছোট্ট হাতের মুঠোতে খামচে ধরেছে সাত মাসের বোনের জামার একটা কোণা। নিজের যা হয় হোক, বোনকে বাঁচাতেই হবে। হাত ফসকালেই মৃত্যু অনিবার্য। অতএব, এক হাতের মুঠোয় জামার কোণা খামচে ধরেই তখন বোনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল পাঁচ বছরের রিহাম। এদিকে তার নিজের আয়ু তখন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।

গত বুধবার আচমকাই বিমান হানা হয় সিরিয়ার ইদলিবে। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এই ছবি। দেখা যায় ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে কংক্রিটের শক্তপোক্ত একটা বাড়ি। ভাঙা স্ল্যাবের নীচেই আটকা পড়েছে রিহাম। বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন রিহামে বাবা। কিন্তু বড় মেয়ের এমন অবস্থা চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে তাঁকে। মৃত্যু ফাঁদের কিনারে রয়েছে তাঁর আর এক সন্তানও। এদিকে অসহায় বাবার কাছে হাহাকার ছাড়া আর কিছুই তখন করার নেই। কারণ দুই সন্তানের কাউকেই বাঁচানোর জন্য কিছু করার উপায় নেই তাঁর। নিজের জায়গা থেকে তিনি একচুল নড়লেও ধসে পড়তে পারে আরও একটা স্ল্যাব।

সিরিয়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হোয়াইট হেলমেটস’-এর সদস্যরা সেদিনই উদ্ধার করেছিল রিহামের পরিবারকে। জানা গিয়েছিল, ওই বাচ্চা মেয়ে দুটির বাবা আমজাদ আল-আবদুল্লা সিরিয়ার আরিহা শহরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। এই বিমান হানায় নিজের স্ত্রীকেও হারিয়েছেন তিনি। ‘হোয়াইট হেলমেটস’-এর সদস্যরা রিহাম এবং তার বোনকে উদ্ধার করে ভর্তি করেছিল হাসপাতালে। আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছে রিহামের বোন। তবে বোনের জীবন বাঁচিয়ে দিলেও ছোট্ট রিহামকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালে ভর্তি করেও শেষ রক্ষা হয়নি। স্ত্রী এবং এক সন্তানকে হারিয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত আমজাদও। শরীরে হাজার ক্ষত নিয়েও এখন তাঁর একটাই প্রার্থনা, ছোট মেয়েটা যাতে বেঁচে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, এপ্রিল মাসের পর থেকেই বারবার এমন বিমান হানা হচ্ছে সিরিয়াতে। সঠিক তথ্য প্রমাণ না পাওয়া গেলেও সকলেরই অনুমান, এই বিমান হামলা করছে সিরিয়ার সরকার-পন্থী রুশ বাহিনী। ইদলিবের তিনটি এলাকায় রুশ বিমান হানায় ৫ শিশু-সহ প্রাণ গিয়েছে ২০ জনের। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ সিরিয়া ছেড়ে পালাতে চাইছেন। কেউ বা চাইছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করুন মার্কিন প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.