রক্তাক্ত ইস্টার সানডে’র আতঙ্কের রেশ কাটার আগেই ফের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো। পুলিশ জানিয়েছে, সেন্ট অ্যান্টনিস গির্জার কাছে একটি ভ্যান দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ভ্যানে থাকা বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন, স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স এবং বম্ব ডিফিউসিং স্কোয়াড বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েই বিস্ফোরণ হয়েছে। যদিও এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে কলম্বোর একটি বাস স্ট্যান্ড থেকে এ দিন ৮৭টি বম্ব ডিটোনেটর (বোমা বিস্ফোরণের রিমোট জাতীয় যন্ত্র) উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সোমবারের এই বিস্ফোরণের ভিডিও। দেখুন সেই ভিডিও।
রবিবার ৬ ঘণ্টায় পরপর ৮টি ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল কলম্বো। এই ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ২৯০ জন। আহত প্রায় ৫০০-র বেশি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িছে লাশের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। মৃতদের মধ্যে রয়েছে ৮ জন ভারতীয়ও। ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। এর পাশাপাশি সোমরাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত কার্ফু জারির নির্দেশ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপালা সিরিসেনা।
গত কালের বিস্ফোরণে বড়সড় ক্ষতি হয়েছে ‘সিনামন গ্র্যান্ড’, ‘সাংগ্রি লা’ এবং ‘কিংসবেরি’—–এই তিনটি পাঁচতারা হোটেলের। ইস্টার সানডে’র প্রার্থনা চলাকালীন বিস্ফোরণ হয়েছে তিনটি গির্জাতেও। যার মধ্যে ছিল কলম্বোর বহু পুরনো ক্যাথলিক চার্চ সেন্ট অ্যান্টনিস। এই ঘটনায় স্থানীয় ইসলামি জঙ্গি সংগঠিন ন্যাশনাল তৌহিত জামাতের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। এখনও পর্যন্ত ২৪ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে কলম্বো পুলিশ। অনুমান স্থানীয় ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠনও। শোনা যাচ্ছে, ইসলামি সংগঠন ন্যাশনাল তৌহিত জামাত আর এক ইসলামি সংগঠন আইসিস-এর শাখা সংগঠন।
তবে শ্রীলঙ্কায় যে বড়সড় নাশকতা হতে পারে সে ব্যাপারে হামলার ১০ দিন আগে ১১ এপ্রিল সতর্ক সে দেশের পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়সুন্দরা। পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরকে সতর্ক করেছিলেন ওই পুলিশ কর্তা। জানা গিয়েছে, একটি আইবি সতর্কবার্তায় জয়সুন্দরা জানিয়েছিলেন, “একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ন্যাশনাল তৌহিত জামাথ ( এনটিজে ) নামের একটি মুসলিম জঙ্গি সংগঠন কলম্বোর সব বড় চার্চে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে। জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছে কলম্বোর ভারতীয় হাই কমিশনও।” এই জঙ্গি সংগঠনই গত বছর শ্রীলঙ্কায় এলাধিক বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙার ঘটনায় যুক্ত ছিল। এত সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেও কেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।
এ দিকে কলম্বো বিস্ফোরণে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের যোগ রয়েছে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেই তবে উপকূলের নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত। সতর্ক করা হয়েছে উপকূলবর্তী নিরাপত্তাবাহিনীকে। কলম্বো বিস্ফোরণের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যাতে কোনওভাবেই জলপথে পালিয়ে এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্যই সমুদ্র সীমানা বরাবর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।